ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আনসারুল্লাহর প্রধান নেতা রানাকে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ মে ২০১৫

আনসারুল্লাহর প্রধান নেতা রানাকে খুঁজছে  পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক গুরু রেজওয়ানুল আজাদ রানা। পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেডের’ তালিকায় কম বয়সী যুবক রানা মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার হত্যাকারীদের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। কথিত ইমানি দায়িত্ব পালনের জন্য জঙ্গী সংগঠনটির সিøপার সেলের সার্বিক দায়িত্বে ও নেতৃত্বে এই আজাদ রানা। এখন পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের আধ্যাত্মিক গুরু রানা খুবই কম বয়সী। আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও নটর ডেম থেকে এইচএসসি ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন। বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞায় উত্তর জয়লস্করপুরে। মুফতি জসিমের হাত ধরে আল কায়েদার আদর্শে তৈরি আনসারুল্লাহয় যোগ দেন তিনি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা রোড থেকে ধানমন্ডির হাতেমবাগ পর্যন্ত টানা চার বছর জসিমের সঙ্গে আধ্যাত্মিক নানা বিষয় নিয়ে তালিম নেন রানা। রানার সঙ্গে তখন জসিমউদ্দিন রাহমানিকে অনুসরণ করেন ব্লগার রাজীব হত্যায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও। জসিমউদ্দিন দুই বছর আগে গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী হওয়ার পর আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের আধ্যাত্মিক গুরু বনে যান রানা। সিøপার সেলের নেতৃত্ব নিয়ে একের পর এক মুক্তমনা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগারদের হত্যাযজ্ঞ চালানোর নেপথ্যের কারিগর এই রানা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কয়েক জঙ্গী সদস্য। নাইমুল হাসান, জুন্নন, আলী আজাদ প্রমুখ গ্রেফতার হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বর্তমানে যেসব মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার খুন হচ্ছে তা চলছে সিøপার সেলের কাটআউট পদ্ধতিতে। সিøপার সেলের কাটআউট পদ্ধতির নেতৃত্বে আছে আধ্যাত্মিক গুরু রানা। ডিবির ওই কর্মকর্তার দেয়া তথ্যানুযায়ী রানা কখনই স্থির থাকে না। কখনও দেশে, আবার কখনও দেশের বাইরে। আবার কয়েকবার সাক্ষাত হলেও রানার চেহারার ভেতর পরিবর্তন দেখা যায়। রানা হচ্ছে এমন এক যুবক যাকে একমাত্র সবকিছু দিয়েই বিশ্বাস করত মুফতি জসিম। এমনকি গ্রেফতারের আগেও তাদের সঙ্গে ঢাকায় হাতেমবাগে বৈঠক করেন মুফতি জসিম। জসিম ওই বৈঠকে রানাকে নানা নির্দেশনা দেন। জঙ্গী তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, কারাবন্দী হওয়ার আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানির ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত রানাকেই জঙ্গী সংগঠনটি পরিচালনার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি এও বলে গেছেন, গ্রেফতার হলে সে আরও দু’জনের কাছে আধ্যাত্মিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ে জ্ঞান নিতে পারবেন। এর মধ্যে মিরপুরের মাওলানা ফরিদীর নাম বলে গেছেন তিনি। বর্তমানে আত্মগোপন করে আছেন ফরিদী। তিনি আনসারুল্লাহর তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে গোয়েন্দাদের কাছে চিহ্নিত। আত্মগোপনে থেকে ফরিদীও মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগারদের হত্যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নিয়ে কাজ করছেন এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তালিকাভুক্ত জঙ্গী নেতা কারাবন্দী মুফতি শায়খ জসিম উদ্দিন রাহমানির হাত ধরেই বেড়ে উঠে উগ্রপন্থী রেজওয়ানুল আজাদ রানা। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বগার রাজীব খুনের পর তার নাম উঠে আসে। ওই সময় তাকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশ প্রাণপণ চেষ্টা করে। কিন্তু উগ্রপন্থী রানা তখন পালিয়ে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে চলে যান। দেশে ফিরেই ব্লগার অভিজিত, ব্লগার ওয়াশিকুর ও সর্বশেষ সিলেটে ব্লগার অনন্ত হত্যায় নির্দেশদাতা হিসেবে কাজ করে বলেও ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। ২০১৩ সাল থেকে ২ বছর তাকে ধরে গ্রেফতারের চেষ্টা করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে পারদর্শী রানা বারবারই কৌশলে গ্রেফতার এড়িয়ে চলছে। এ কারণে পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় থাকা রানাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। রেজওয়ানুল আজাদ রানা গ্রেফতার এড়িয়ে একের পর এক মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগারদের হত্যাকা-ের নির্দেশদাতা হিসেবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
×