ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ ধরনের ঘটনায় পুলিশকে আর মানুষ নিরাপদ মনে করবে না

ঢাবি ছাত্র নির্যাতনের দায়ে ওসি হেলালের তিন বছর জেল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৮ মে ২০১৫

ঢাবি ছাত্র নির্যাতনের দায়ে ওসি হেলালের তিন বছর জেল

কোর্ট রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদেরকে নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের মামলায় খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলাল উদ্দিনের তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। রবিবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলমগীর কবির রাজ এ রায় দেন। আসামি হেলাল অসুস্থ উল্লেখ করে গতকাল সময়ের আবেদন করা হলে বিচারক চিকিৎসা সনদপত্র দেখতে চান। আইনজীবী তা পেশ করতে না পারায় বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং আসামিকে পলাতক দেখিয়ে কারাদণ্ড দেন এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। রায়ে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আদায় না করলে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে আদেশ হয়। বিচারক রায়ের শেষে পর্যবেক্ষণে বলেন, পুলিশের কাছে মানুষ নিরাপদ। ওসি হেলাল উদ্দিন একজন আইনরক্ষক। কিন্তু তিনি থানার ওসি হয়ে এ ধরনের ঘটনা করায় মানুষ আর পুলিশের কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে না। ২০১১ সালের ১৬ জুলাই খালার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আসার পথে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের সামনে সাদা পোশাকধারী পুলিশ কাদেরকে ধরে মারধর করতে থাকে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।’ এতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। থানার ওসির কক্ষে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করার লক্ষ্যে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার কাছে কোন তথ্য না পেয়ে টেবিলে থাকা চাপাতি হাতে নিয়ে ‘দেখি তো চাপাতিতে ধার আছে কিনা’Ñ বলে ওসি কাদেরের বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের পেছনভাগের মাংসপেশিতে কোপ দিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেন। এতে রক্তে পুরো কক্ষ ভিজে যায়। পরবর্তী সময়ে ওসি কাদেরকে তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখান। তিনটি মামলাই তদন্ত শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হলে কাদেরকে অব্যাহতি দেন আদালত। এদিকে ওসির নির্যাতনের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর হাইকোর্ট ওসি হেলালের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। কাদের ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি ওসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২৬ মার্চ খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ আবু সাঈদ আকন্দ ওসি হেলালকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ১ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন একই আদালত। বর্তমানে আবদুল কাদের বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে সরকারী চাকরিজীবী হিসেবে কমর্রত আছেন। কাদেরের পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করছেন এ্যাডভোকেট মুনজুর আলম, ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ গাফফার হোসেন ও শুভ্র সিনহা রায়।
×