ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরবক্ষ অথবা শরণার্থী শিবির থেকে দেশে ফিরতে পারছে না ওরা ;###;মেরে সাগরে ফেলে দেয়া হচ্ছে অনেককে

অবর্ণনীয় দুর্দশায় ভাসমান মানুষেরা ॥ আরও এক শ’ লাশ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৮ মে ২০১৫

অবর্ণনীয় দুর্দশায় ভাসমান মানুষেরা ॥ আরও এক শ’ লাশ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে সাগরপথে অবৈধপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিতে গিয়ে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে এর শেষ কোথায়Ñএ নিয়ে সকল মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের হাজার হাজার হতদরিদ্র মানুষ নিজেদের স্বাবলম্বী করার মানসে দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাস সাগরে অনাহারে অর্ধাহারে থাকায় যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কোন দেশই মানবিকতার পরিচয় দিতে পারছে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কারও আহ্বানে এরা সাড়া দিচ্ছে না। ফলে এখনও সাগরে ভাসমান অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা অগণন। এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়, গতকাল সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের ১০০ জন মারা গেছে। ঐ বিভীষিকাময় অবস্থা থেকে উদ্ধারপ্রাপ্তরা জানান, ওই এক শ’ জনকে মেরে সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া উপকূলে উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের পক্ষ থেকে ঐ দেশ ও বিদেশের সাংবাদিকদের বলা হয়েছে সাগর পথে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এদের কেউ অনাহারে অর্ধাহারে, কেউ রোগেশোকে এবং কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে। এদের লাশ সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে। রবিবার বিবিসির খবরের এ তথ্য জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ও গণকবরে ৫শ’ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অভিবাসীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। সর্বশেষ যে ১শ জনের মৃত্যুর খবর উদ্ধারকৃতরা জানিয়েছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। গত কয়েকদিনে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ ও লঙ্কাবি দ্বীপ উপকূলে যারা উদ্ধার হয়েছে তারা সে দেশের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। এরা না পারছে দেশে ফিরতে, না পারছে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে এখনও নানাভাবে আটকে পড়া আছে অসংখ্য রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নাগরিক। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করবে না। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা হচ্ছে মিয়ানমার সে দেশের রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক বলেও স্বীকার করছে না। অথচ, এসব রোহিঙ্গারা যুগ যুগ ধরে সে দেশের বাসিন্দা এবং বসতিতে রয়েছে। মালয়েশিয়ার পথে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হতদরিদ্র বাংলাদেশীরাও যুক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর এ রুট বেছে নিয়েছে। এদের অনেকেই সে দেশে পৌঁছেছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করার মানসে অন্যরা এ পথে পা বাড়িয়েছে। গত ১ মে থেকে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর ও বন্দী শিবির আবিষ্কৃত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী হৈ চৈ পড়ে যাওয়ার পর এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সন্নিহিত সাগর অঞ্চলে ছোট বড় ইঞ্জিন বোঝাই ও ট্রলার ভর্তি এসব রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের অনিশ্চিত জীবন চলছে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া সরকার সদয় হয়ে এদের ক্ষুদ্র একটি অংশকে উদ্ধার করে মানবিক সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে এসব অবৈধ অভিবাসীদের কাউকে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সাগরপথে কঠোর নজরদারি আরোপ করেছে। এতে করে এসব অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে ইঞ্জিন বোট ও ট্রলারগুলো ইন্দোনেশিয়া অভিমুখী হয়েছে। যাকে যেখানে ইচ্ছে সেখানে বোট থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের নামিয়ে দেয়াদের আচেহ এবং লঙ্কাবি দ্বীপে উদ্ধার করেছে ঐসব এলাকার কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও প্রশাসন। এদিকে, উদ্ভূত অভিবাসী সঙ্কটে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এ নিয়ে তাদের কোন দায় নেই। এ সঙ্কট নিয়ে থাই সরকারের ডাকে আগামী ২৯ মে মালয়েশিয়ায় যে জরুরী সম্মেলন হতে যাচ্ছে এতে মিয়ানমার যোগ দিচ্ছে না বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। আহূত এ সম্মেলনে ১৫টি দেশ যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। যোগ না দেয়া প্রশ্নে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট দফতরের পরিচালকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমন্ত্রণপত্রে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করলে তারা সম্মেলনে যোগ দেবে না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড তাদের জলসীমায় অভিবাসী বোঝাই পরিত্যক্ত ঐসব নৌকাগুলোকে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করতে আর না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আকাশ থেকে হেলিকপ্টার হতে যে সমস্ত খাদ্য সামগ্রী নিক্ষেপ করা হয়েছে তা নিয়ে কাড়াকাড়িতে একে অপরকে সাগরে ছুড়ে ফেলেছে। এখনও অবৈধ অভিবাসী নিয়ে বেশকিছু ইঞ্জিনবোট সাগরে ভাসছে বলে বিদেশী গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়েছে। পাচারের পয়েন্টগুলো শূন্য ॥ এদিকে, উখিয়া, টেকনাফ থেকে যেসব পয়েন্টগুলো থেকে মানব পাচার হয়ে আসছিল সেগুলো এখন শূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। গডফাদার ও দালালরা গা ঢাকা দিয়েছে। আর মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের মাঝে ভাটা পড়েছে। চিহ্নিত মানব পাচারকারীদের কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে। স্বজন হারিয়েছে হাজার হাজার পরিবার। উপার্জনক্ষম ছেলেকে মুক্ত করতে দালালের দাবিমতো টাকা পরিশোধকল্পে নেয়া ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন অনেকে। এসব হয়েছে চিহ্নিত কিছু মানব পাচারকারী অসাধু ব্যক্তির জন্য। তারা ফুঁসলিয়ে ভাল বেতনে চাকরি দেয়ার নাম করে যুবকদের মালয়েশিয়া যেতে প্রায় পাগল করে তুলেছিল। বেকার যুবক ও কিশোররা টাকা ছাড়াই বিদেশে গিয়ে বেশি রোজগার করতে পারবে ধারণায় দালালদের কথায় রাজি হয়ে ওইসব যুবক-কিশোরদের মধ্যে অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা কি আদৌ বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে, তাও খবর পায়নি বহু পরিবার। এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে। সচেতন মহল বলেন, চুনোপুঁটি নয়, আসল গডফাদারদের ধরে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা দরকার। গডফাদারদের সঙ্গে কতিপয় অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য থাকার অভিযোগ তুলে অনেকে বলছেন, আবুল কালাম, ফয়েজ সিকদার, জমির আহমদ, রুবেল, শামশুল আলম সোহাগ, মফিজ, আব্দুল্লাহ মামুন, লাল বেলাল, জাহেদ মেম্বার, বেলাল মেম্বার, জুম্মাপাড়ার সানা উল্লাহ, রেজিয়া আক্তার প্রকাশ ম্যাডাম, জালাল ও নুরুল কবির সহ অর্ধশতাধিক গডফাদার ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে? উখিয়ার উপকূলীয় সাগরপথের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার কাজে জড়িত এলাকার চিহ্নিত দালালরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অল্প টাকায় সোনার হরিণ ধরার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে লোকজনকে জমায়েত করত কিভাবে? সম্প্রতি কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের হাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত সোনারপাড়ার জাফর আলম প্রকাশ লেডু মাঝি নিহত হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পাচার কাজে জড়িত শীর্ষ গডফাদাররা এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে। মিনি দালালের কা- ॥ স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গডফাদারদের নিয়োজিত দালালরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা প্রশাসনের গতিবিধি ও অভিযানের খোঁজ খবর নিয়ে মুঠোফোনে জানিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। সোনারপাড়ার বেলাল উদ্দিন, জুম্মার আব্দুস সালাম, নুরুল কবিরের সহোদর মুসলিম উদ্দিন, হুমায়ুন রশিদ বাপ্পুর শ্যালক মানিক ও ফয়েজ সিকদারের সহোদর প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য রাখছে। আহাজারি ॥ রবিবার সকালে ছেলে হারানো শোকে কাতর জুম্মাপাড়ার মোঃ জামাল উদ্দিন সাংবাদিক দেখে এগিয়ে এসে অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে নুরুল আমিনকে একমাস আগে সোনারপাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়ক আল শরাফ হ্যাচারি থেকে বাড়িতে ফেরার পথে স্থানীয় মানব পাচারকারী বেলাল মেম্বার ও বেলাল উদ্দিন জোরপূর্বক মাছ ধরার বোটে তুলে দেয়। ১৫ দিন পর স্থানীয় বেলাল মেম্বার ও বেলাল উদ্দিন আমার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে আমার ছেলেকে মেরে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলের গর্তে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। হায়রে আফসোস আমার ছেলেকে হত্যা করা হবে জানলে আমি রক্ত বিক্রি করে হলেও ওই দালালের হাতে টাকা দিতাম। শনিবার মুঠো ফোনে সওদাগর পাড়ার জামাল উদ্দিন তাকে বলছে, তার ছেলেকে জুম্মাপাড়ার ছানাউল্লাহ বাহিনীর লোকজন গণকবরে ফেলে দিয়েছে। তার সঙ্গে সওদাগর পাড়ার ফরিদ আলমের পুত্র মোঃ মিজান, ছিদ্দিক আহমদের পুত্র মোঃ রশিদকেও ওই গণকবরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে। নিহত নূরুর আমিনের মা ফাতেমা বেগম ও পিতা জামাল উদ্দিন তাদের ছেলেকে হারিয়ে কান্নার জোয়ারে ভাসছে। বর্তমানে তাদের চোখের জ্বলে জুম্মাপাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত নূরুল আমিনের দাদী নাতির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দুই দিন ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। যারা ধরা পড়েনি ॥ মানব পাচার কাজে জড়িত অন্যতম দালাল অথচ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এখনও। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইতোপূর্বে আটক হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে ফের আদমপাচার কাজে জড়িয়ে পড়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। তারা হলেন গডফাদার সানা উল্লাহ, পশ্চিম সোনারপাড়ার নূরুল কবির, তার স্ত্রী রেজিয়া আক্তার রেবি ম্যাডাম, হুমায়ুন রশিদ বাপ্পু, জুম্মাপাড়ার কুখ্যাত মানব পাচারকারী বেলাল মেম্বার, ইসহাক আহমদ প্রকাশ মনিয়া দালাল, সওদাগর পাড়ার মোঃ মফিজ, মোঃ শফির বিলের বনি আলম, পশ্চিম সোনাইছড়ির মুজিবুল হক, রোস্তম আলী, আবদুস সালাম, মোঃ ছৈয়দ, শামসুল আলম, সোনারপাড়া বাজার এলাকার ছৈয়দ প্রকাশ ছৈইয়্যা, ছোয়াংখালীর জাহেদ মেম্বার, মনখালীর জয়নাল, পাইন্যাশিয়ার হাঙ্গামা বেলাল, শহরের সতিতিপাড়ার একরাম, খুরুশকুলের ছৈয়দ হোসেন, শহরের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন দক্ষিণ সাহিত্যিকাপলীর দিদারুল আলম, ফয়েজ সিকদারসহ শতাধিক দালাল। তবে উখিয়া থানার ওসি মোঃ জহিরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা মানব পাচার কাজে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। পাচারকারীদের গা ঢাকা ॥ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকায় মানব পাচারকারীরা গা ঢাকা দিলেও তাদের পরিবারে কোন কিছুর অভাব নেই। ওইসব দালালদের ঘরে এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থায় দিনাতিপাত করলেও বর্তমানে ওইসমস্ত পরিবারের উঠোনেও টাকা কুড়িয়ে পাওয়া যাচ্ছে। রবিবার সকালে রহিমা নামে এক বৃদ্ধা ভিক্ষুক মহিলা এক মুঠো চাল চাইতে যায় সোনারপাড়ার শীর্ষ দালাল রোস্তম আলীর সুরম্য অট্টালিকায়। উঠোনে প্রবেশ করতেই কুড়িয়ে পান একটি ৫শ’ টাকার নোট। দৃশ্যটি দু’তলা থেকে দেখে ফেলে রোস্তম আলীর পরিবারের এক মহিলা। দ্রুত নেমে এসে ৫শ’ টাকার জন্য বৃদ্ধ মহিলার চুল ধরে উঠোনে টানা-হেঁচড়া শুরু করে দেয়। কুড়িয়ে পাওয়া ৫শ’ টাকার নোটটি কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। গডফাদার রোস্তম আলী ॥ সাগরে মাছ ধরার সামান্য নৌকার মাঝি রোস্তম আলী। পরের ইঞ্জিন চালিত ফিশিং নৌকায় দিনমজুর মাঝি হিসেবে কষ্ট করে সংসার চালাত। গত প্রায় দুই বছরে সোনাপাড়া ও রেজুখালের মুখ পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়া মানব পাচার করে বর্তমানে বহু সম্পত্তির মালিক। এখন তাকে পেছনে তাকাতে হয় না। শ্রম দিতে হয় না অন্যের নৌকায়। কুঁড়ে ঘরের চালা বেয়ে বর্ষাকালে খড়ের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির পানি আর পড়ে না। বৃষ্টির পানির সঙ্গে পড়ে না কেঁচো এবং পোকা-মাকড়ও। এখন রোস্তম মাঝির ওই কুঁড়ে ঘরের ভিটায় গড়ে উঠেছে দোতলা সুরম্য আধুনিক ডিজাইনের দালান। দালাল ছৈইয়্যা ॥ ছোট একটি পানের দোকানি আবু ছৈয়দ প্রকাশ ছৈইয়্যা। উখিয়ার সোনারপাড়া বাজারে ওই পান দোকান থেকে কোন রকমে সংসার চালাত। গত তিন বছরের ব্যবধানে মানব পাচার করে ছৈইয়্যা অঢেল টাকার মালিক। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে বিলাসবহুল বাড়ি। ছৈইয়্যার এত টাকা আয় করার পেছনে পাইন্যাসিয়ার হাঙ্গামা বেলাল সহযোগিতা করেছে অভিযোগ রয়েছে। ওই হাঙ্গামা বেলাল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে ছৈইয়্যাকে মানব পাচারে লোকজন যোগাড় করে দিয়েছে। অংশীদার হিসেবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করে বর্তমানে দুই দালালই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। আবুল কালাম, ফয়েজ আহমদ, রুবেল, শামশুল আলম সোহাগ, মফিজ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাল বেলাল, জাহেদ মেম্বার, মোজাম্মেল, বেলাল মেম্বার, জুম্মাপাড়ার সানা উল্লাহ, রেজিয়া আক্তার প্রকাশ ম্যাডাম, জালালসহ অর্ধশতাধিক গডফাদার প্রশাসনের ভয়ে এখন ওইসব অট্টালিকা ফেলে রাত কাটাচ্ছে হতদরিদ্রদের ঘরে। মাসোয়ারা দিত বলেই আর্থিক সুবিধা নিয়ে নীরব ছিল উখিয়া পুলিশের অনেকে। সেই অর্থ প্রদানে অধিকারের ভিত্তিতে দালালরা উখিয়ার ওই অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে হরদম যোগাযোগ করে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানব পাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে উখিয়া থানা পুলিশ বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে একাধিক জিডি করেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের শুমারি হচ্ছে ॥ পাচারের শিকার অধিকাংশই রোহিঙ্গা। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অনেকে। অভাবী এসব মানুষ সুযোগ নিচ্ছে মানব পাচারকারী। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় কৌশলপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিডিএস) রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শুমারি করতে যাচ্ছে। দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের নাগরিকদের সঠিক সংখ্যা জানতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বিবিএস সূত্র জানায়, এ শুমারির মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ওপর একটি ডাটাবেজ প্রণয়ন করা হবে। এ ডাটাবেজের ভিত্তিতে পরবর্তী পর্যায়ে এসব রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক তথ্যাদিও ওই ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে করে তাদের প্রকৃত সংখ্যা, আয়ের উৎস, সামাজিক অবস্থান, প্রকৃত আবাসস্থল ইত্যাদি তথ্য পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। বিবিএস মহাপরিচালক বাইতুল আমিন জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোহিঙ্গাদের গণনার কাজ শুরু করা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বহু রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
×