ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় সব সময়ই বেদনার ॥ স্টিভেন জেরার্ড

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৮ মে ২০১৫

বিদায় সব সময়ই বেদনার ॥ স্টিভেন জেরার্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ হয়ে গেল সব। ৩৪ বছরের জীবনটার প্রায় পুরো সময়ই কাটিয়েছেন এ্যানফিল্ডে। ৭ বছর বয়সে যোগ দেয়ার পর এখানেই পুরোদস্তুর ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন। এবার সেখান থেকেই বিদায় নিতে হল। লিভারপুলের হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা শনিবার রাতে খেলে ফেলেছেন ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার স্টিভেন জেরার্ড। তবে দলকে হারতে হয়েছে ৩-১ গোলের বড় ব্যবধানে। সে কারণেই ম্যাচশেষে বিপর্যস্ত জেরার্ড বললেন, ‘আমি ধ্বংস হয়ে চলে যাচ্ছি।’ নিজেদের মাঠ এ্যানফিল্ডে আর খেলা হবে না জেরার্ডের। তিনি জানান, পরিচিত দর্শক-ভক্তদের সামনে খেলাটা খুবই ভালবাসেন এবং সে কারণে বিদায় জানানোটা খুবই কষ্টের। তবে চলতি মৌসুমে আরেকটি ম্যাচ হাতে রয়েছে লিভারপুলের। সেটা আর এ্যানফিল্ডে খেলা হবে না জেরার্ডের। জুলাইয়ে জেরার্ড পাড়ি জমাবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এবার সেখানেই ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লীগ সকারের (এমএলএস) জনপ্রিয় দল লস এ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সিতে যোগ দেবেন তিনি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শুধু রেডস শিবিরে থেকেই পেশাদার ক্যারিয়ার কেটে দিয়েছেন। অন্য কোন ক্লাবে যাননি। শুধু পেশাদার ক্যারিয়ারই নয় ১৯৮৭ সালে যখন ফুটবল রপ্ত করার জন্য এ ক্লাবে এসেছিলেন তখনও জেরার্ডকে অন্য কোন ক্লাব আকর্ষণ করেনি। যদিও লিভারপুলের একাডেমিতে থাকার সময় বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গেও অনুশীলন করেছেন। রেডস শিবিরের জুনিয়র দলে খেলেছেন। এরপর মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালের ৫ নবেম্বর পেশাদার চুক্তিতে আবদ্ধ হন তিনি লিভারপুলের সঙ্গে। তখন থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। রেডস শিবিরে তিনি যেমন অপরিহার্য হয়ে ওঠেন তেমনি নিজেও আর কোন ক্লাবে যাওয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হননি। সবমিলিয়ে ৭০৯ ম্যাচ খেললেন লিভারপুলের হয়ে। ১০টি শিরোপা জিতেছেন এবং নিজে করেছেন ১৮৫ গোল। তবে একটি বড় আক্ষেপ আছে জেরার্ডের। দীর্ঘ এ ক্যারিয়ারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। শনিবার এ্যানফিল্ডে নিজের সর্বশেষ ম্যাচ খেলতে নেমে আরেকটি বড় কষ্ট সঙ্গী হলো তার। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলাটাও আর হবে না লিভারপুলের। ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে হারের পর সেটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে। ম্যাচের শুরুতে জেরার্ডকে গার্ড অব অনার দেন সতীর্থরা। ম্যাচশেষে ভক্তদের ভিড় জমে যায় তার পাশে। এ সময় জেরার্ড বলেন, ‘আমার খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আমি এমন একটি মুহূর্তের আশঙ্কাই এতদিন করেছি। বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে যখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ঘোষণা করি তখন থেকেই এ অনুভূতি হয়েছে। কিন্তু এখন এটা সত্যিই মিস করতে যাচ্ছি। আমি ক্যারিয়ারের প্রতিটি মিনিট উপভোগ করেছি। আমি সত্যিই ধ্বংস হয়ে গেলাম যে এ ধরনের ভাল সমর্থকদের সামনে আর কখনও খেলতে পারব না। আমি কখনও এমন মুহূর্ত আসুক সেটা চাইনি। আমি সব সময়ই নিজের মানুষদের সামনে খেলতে ভালবেসেছি। আমি এই স্টেডিয়ামকে ভালবাসি। এখানে আমার বিস্ময়কর কিছু মুহূর্ত কেটেছে।’ জেরার্ড এ মৌসুমে তেমন ফর্মে ছিলেন না। তবে মাঝ মাঠের এ নির্ভরযোগ্য ফুটবলার নিজেকে ফিরে পেয়েছিলেন গত দুই ম্যাচে। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স ও চেলসির বিরুদ্ধে দারুণ দুটি গোলও করেছিলেন। কিন্তু এ্যানফিল্ডে হয়ত আবেগতাড়িত থাকার কারণেই স্বাভাবিক খেলাটা দেখা গেল না তার কাছ থেকে। জেরার্ড অবশ্য চেয়েছিলেন দারুণভাবে শেষ করতে। কারণ জয় পেলেই নিশ্চিত হয়ে যেত উয়েফা ইউরোপা লীগে খেলা। কিন্তু হারতে হলো বাজেভাবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চেষ্টা করব এ ম্যাচটা উপভোগ করার। শেষ ম্যাচে আশা করছি আমরা জিততে পারব।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না হওয়াতে নিজেকে দারুণ বিপর্যস্ত অনুভব করেছেন জেরার্ড। ম্যাচশেষে তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্লাবের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে গত ১৭ বছর ধরে দারুণ সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে গেছেন। আমি আমার সকল সতীর্থ, সাবেক খেলোয়াড়দের বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি এখন যেমন খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় নিচ্ছি সেটার পেছনে তাদের অনেক বড় অবদান। সবচেয়ে জরুরী বিষয় ছিল এ ক্লাবের সমর্থকরা। তারা অন্য যে কারও চেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য, কারণ তারা সব সময়ই আমাদের সবার পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি যাওয়ার আগে এবং কান্না চলে আসার আগে বলতে চাইÑ আমি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা দর্শকদের সামনে খেলেছি। আপনারাই সেরা।’ এদিন এ্যানফিল্ডে ৪৪ হাজার ৬৭৩ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
×