ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিসির নির্দেশের পরও সাতক্ষীরায় বন্ধ হয়নি র‌্যাফেল ড্র

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৮ মে ২০১৫

ডিসির নির্দেশের পরও সাতক্ষীরায় বন্ধ হয়নি র‌্যাফেল ড্র

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ ভ্যানচালক বেলাল হোসেন রবিবার সকালে বাণিজ্যমেলার এক সঙ্গে র‌্যাফেল ড্র’র ৫০টি টিকিট কিনেছে এক হাজার টাকা দিয়ে। এই টাকা সে বাজারের সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছে। ভ্যানচালক সেলিম কিনেছে এক সঙ্গে ১৬টি। আগড়দাড়ির নিলেখালির দিনমজুর ভোলানাথ গত ২৩ দিনে কিনেছে এক শ’ ২৯টি টিকিট। অথচ এদের ভাগ্যে মেলার আকর্ষণীয় মোটরসাইকেল, ফ্রিজ আর সোনার গহনার কোনটাই মেলেনি। লোভনীয় পুরস্কারের আশায় জেলার খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিন তাদের উপার্জনের সিংহভাগ টাকা লটারি নামের এই জুয়ার পিছনে খরচ করে নিঃস্ব হলেও প্রশাসন ছিল নির্বিকার। এদিকে সাতক্ষীরাবাসীর দাবির মুখে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রবিবার বেলা ১২টায় ম্যাজিস্ট্রেট টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিলেও বিকেলে ফের টিকিট বিক্রি শুরু করে মেলা কর্তৃপক্ষ। ভ্যাট সংক্রান্ত জটিলতায় টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয় এমন দাবি করে বাণিজ্যমেলার ম্যানেজার সৈকত জনকণ্ঠকে বলেন, সমস্যা মিটে যাওয়ায় পুনরায় টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। লটারি বন্ধের নির্দেশের পরও পুনরায় লটারির টিকিট বিক্রির বিষয়ে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান রবিবার বিকেল ৪টায় জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন কোন টিকিট বিক্রি নয়। টিকিট ক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনা করে শুধু রবিবার সকালে বিক্রিত টিকিটগুলোর খেলা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে কোন লটারি হবে না বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা সরকারী স্কুল মাঠে ২৪ এপ্রিল বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করা হয়। সিলেটের বেনারসী উইভার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাট্রিজ এই সাতক্ষীরা শিল্প ও বাণিজ্যমেলার আয়োজন করে। মেলার শুরু থেকে প্রতিদিন উল্লাস র‌্যাফেল ড্র’র নামে জেলাজুড়ে প্রতি টিকিট ২০ টাকা করে বিক্রি শুরু করে। প্রথমে ২৫টি ভ্যানে এই টিকিট বিক্রি শুরু হলেও সর্বশেষ এই টিকিট বিক্রির বক্স দাঁড়ায় ৬০টি। প্রতি বিক্রেতা মাইকসহ ভ্যানে করে কমপক্ষে ৫শ’ টিকিট থেকে ১ হাজারটি পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করে থাকে। প্রতি রাতেই এই বিক্রিত টিকিটের ড্র অনুষ্ঠিত হয় এবং বিক্রি বাড়ানোর জন্য খেলার দৃশ্য স্থানীয় স্যাটালাই টিভিতে দেখানো হয়। জেলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, বাণিজ্যমেলার র‌্যাফেল ড্র’র নামে গত ২৩ দিনে জেলার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ। বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষ তাদের প্রতিদিনের উপার্জনের বেশিরভাগ টাকা এই লটারির পিছনে খরচ করে নিঃস্ব হয়েছে। জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে লটারির নামে এই জুয়া বন্ধ করার দাবি উঠে।
×