ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৩ কর্মচারীর বেতন বন্ধ

শিক্ষক দ্বন্দ্বে গফরগাঁও কলেজে ক্লাস ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ মে ২০১৫

শিক্ষক দ্বন্দ্বে গফরগাঁও কলেজে ক্লাস ব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও ১৫ মে ॥ ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারী ডিগ্রী কলেজে ময়মনসিংহ, টাংগাইলসহ অন্য জেলার শিক্ষকদের একটি গ্রুপ এবং জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট ত্রিমুখী কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পড়ালেখা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪৮ জন শিক্ষক। কর্মস্থলে না থেকে প্রায় সকল শিক্ষকই ঢাকা, ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বসবাস করেন। এতে অধিকাংশ শিক্ষক ঘড়ির কাটায় নয়, ট্রেন বা বাসের সময়েই কলেজে উপস্থিত হন। ফলে প্রতিদিনই ক্লাস করতে না পেরে ফিরে যেতে হচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে। আবার কোন কোন শিক্ষক ছুটির দরখাস্ত না করে দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের নব নির্মিত ডর্মেটরি (শিক্ষক হোস্টেল) নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর পরেই পুরুষ শিক্ষকদের একাংশ দখল করে বসবাস শুরু করেন। এ নিয়ে শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। পরে অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী সেখানে বসবাসরত শিক্ষকদের ডর্মেটরি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব ও কথা কাটাকাটি হয়। এ প্রেক্ষিতে পুরুষ শিক্ষকরা ডর্মেটরিটি ছেড়ে দিলে নারী শিক্ষকরা সেখানে বসবাস শুরু করায় তাদের সঙ্গেও অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে অধ্যক্ষ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে ডর্মেটরিতে বসবাসরত ৭-৮জন নারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেন। এতে মহিলা শিক্ষকদের সঙ্গে অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এ সময় অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী সকল শিক্ষককে দৈনিক স্টাফ লিস্টে হাজিরা স্বাক্ষর দেয়ার নির্দেশ জারি করেন। এ নির্দেশনায় বিসিএস ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে ইংরেজী বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসের সঙ্গে অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীর বাগ্বিত-া ও মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় অধ্যক্ষ গত ৩০ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতান আহমেদের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে ভোর হওয়ার পূর্বেই কলেজ ছেড়ে চলে যান। এ নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি ও তিক্ততা তৈরি হয়। এদিকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতান আহমেদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আয়ন ব্যয়ন ক্ষমতা বা আর্থিক খরচ আদেশ না পাওয়ায় কলেজের ২৩জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর গত এপ্রিল মাসের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এতে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আর্থিক খরচের ক্ষমতা না থাকায় কলেজের চলমান এইচএসসি, ডিগ্রী টেষ্ট ও ডিগ্রী পাস পরীক্ষাসহ চারটি পরীক্ষার খরচ ও প্রতিদিনের একাডেমিক খরচ পর্যন্ত ধার-কর্জ করে চালাতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী বলেন, স্যারদের দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং ও জামায়াতের রাজনীতির শিকার হয়েছি আমরা। এ জন্যই আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, ডিজি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে গত কয়েক বছরে এই কলেজে পাঁচ-ছয় জন শিক্ষকের একটি শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দ্বারা ২২জন নারী সহকর্মী (শিক্ষক) প্রায়শই নিগ্রহের শিকার হন। অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মতিন ভূইয়া বলেন, অবস্থা খুবই খারাপ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ফিনান্সিয়াল পাওয়ার না থাকায় শিক্ষকরা পকেটের টাকা খরচ করে পরীক্ষা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। সদ্য বদলি হওয়া অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন। দুর্নীতি থেকে বাঁচতেই তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তড়িঘড়ি রাতের অন্ধকারে জুনিয়র শিক্ষকের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং, অন্তঃকোন্দল ও নোংরা রাজনীতির কথা স্বীকার করে বলেন, কলেজের প্রতি দরদ আছে এমন একজন দীর্ঘমেয়াদী অধ্যক্ষ দায়িত্ব পেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হওয়া ছাড়াও একাডেমিক খরচ পর্যন্ত ধার-কর্জ করে চালাতে হচ্ছে।
×