ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পকেট ভারি হচ্ছে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের

ঢাকা ওয়াসার খাল দখলমুক্ত করা নিয়ে চলছে বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ মে ২০১৫

ঢাকা ওয়াসার খাল দখলমুক্ত করা নিয়ে চলছে বাণিজ্য

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীতে ওয়াসার ২৬ খাল। এসব খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ওয়াসার নিয়মিত কাজ। কিন্তু এই কাজ এখন বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে আবার সাবেক অবস্থায় ফিরে আসছে। বেদখল অবৈধ স্থাপনার পেছনে রয়েছে ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাত। তাদের সহযোগিতায় খালের ওপর ফের স্থাপন হয় অবৈধ স্থাপনা। সরকারী অর্থ খরচ করে সাময়িক সময়ের জন্য খালকে মুক্তি দেয়া হয় মাত্র। বাকি সময় খাল ঢাকা থাকে অবৈধ স্থাপনার নিচে অথবা চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। ওয়াসার এসব খাল দখলমুক্ত না হলে একদিন কোন রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা খালগুলো বিলীন হবে। কয়েক মন্ত্রী রাজধানীর খালগুলো পরিদর্শন করে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, নিজেদের প্রয়োজনেই খালগুলোকে সচল রাখতে হবে। ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, রামপুরা, রূপনগর ও কল্যাণপুর খালের ওপরে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পর আবার ওই সব খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই তিন খাল থেকেই ওয়াসা এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। ওয়াসার খাল উদ্ধার নামের কাজ শেষ হওয়ার পরই ধীরে ধীরে এই বাণিজ্য চলতে থাকে। টাকার বিনিময়ে অবৈধ স্থাপনাসহ খালের জায়গাও ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে উদ্ধার অভিযানে বেশি খরচ দেখিয়ে লুটে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ বছর খাল উদ্ধারের জন্য ওয়াসার বরাদ্দ রয়েছে ৬ কোটি টাকা। খাল উদ্ধারে থাকেন ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের কর্মকর্তারা। উদ্ধার অভিযানের সময় তারা বলেন, খালের জায়গা ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং অভিযানে দখল হয়ে যাওয়া খালের ৩০ ফুট পর্যন্ত পাড়ও উদ্ধার করা হবে। অনেকের বাড়ির দেয়াল ও ভবনের অংশ পর্যন্ত ভেঙ্গে দেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে কাউকে এক ফুট জায়গাও দেয়া হয়নি। গত সোমবার ওয়াসার তত্ত্বাবধানে রাজধানীর বিভিন্ন খাল সংস্কারের পর এসবের কয়েকটি খাল পরিদর্শন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। তারা রামচন্দ্রপুর খাল ও কল্যাণপুর খাল পরিদর্শন করেন। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান মন্ত্রীদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক ও রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনও পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন। খাল পরিদর্শন শেষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর খালগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পানি প্রবাহ সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তিনি সংস্কারকৃত খালগুলোতে বর্জ্য না ফেলার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানান। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, রাজধানীর খালগুলো পুনরুদ্ধার এবং সংস্কারের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা অবিশ্বাস্য ও সাহসী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব খাল পানি চলাচলের উপযোগী রাখতে মন্ত্রী জনসচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি জনগণকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। জানা গেছে, রাজধানীর রূপনগর খালের ৩ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। খালের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চালানোর আগে অবৈধ দখলদারদের ওয়াসার কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী খবর পৌঁছে দেয়।
×