ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘গুডবাই রিয়াল’ ফাইনালে জুভেন্টাস

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৫ মে ২০১৫

‘গুডবাই রিয়াল’ ফাইনালে জুভেন্টাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করে ১২ বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে জুভেন্টাস। বুধবার রাতে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে স্বাগতিক রিয়ালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে জিয়ানলুইজি বুফনের দল। সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পেনাল্টি গোলে রিয়াল এগিয়ে গেলেও অতিথি জুভেন্টাসকে সমতায় ফেরান স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। টুরিনের জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে সেমির প্রথম লেগের ম্যাচে স্বাগতিকরা ২-১ গোলে হারিয়েছিল রিয়ালকে। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে ২০০৩ সালের পর ফাইনালের টিকেট পেয়েছে দুইবারের শিরোপাধারী জুভেন্টাস। তৃতীয় শিরোপা জয়ে তাদের বাঁধা আরেক স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সিলোনা। আগামী ৬ জুন বার্লিনে ফাইনাল মহারণে ক্যাটালানদের মুখোমুখি হবে জুভরা। মূলত গোল মিসের মহড়ার কারণেই টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হলো না রিয়ালের। দলের প্রধান তিন তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, গ্যারেথ বেল ও করিম বেঞ্জামা একাধিক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। বিশেষ করে ওয়েলস ফরোয়ার্ড বেলের ব্যর্থতা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। সাত থেকে আটটি সুযোগের একটিও কাজে লাগাতে পারেননি বিশ্বের অন্যতম দামি এই ফুটবলার। তবে মজার ব্যাপার, রিয়ালের বিদায় ত্বরান্বিত হয়েছে তাদেরই সাবেক ফুটবলার আলভারো মোরাতার কারণে। গত মৌসুমেই গ্যালাক্টিকোদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন তিনি। রিয়ালের হয়েই তাঁর ক্যারিয়ার শুরু। এই মৌসুুমে জুভেন্টাসে চলে যাওয়া সেই মোরাতাই সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ফিরে এসে দেখা দিলেন ‘বিভীষণ’ হয়ে। আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়রা ছিটকে পড়েছে ২২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ তরুণের কারণেই। মোরাতা সেমিফাইনালের প্রথম লেগেও গোল করেছিলেন। ম্যাচের মাত্র ৮ মিনিটে। কিন্তু সেদিন কোন উদযাপন করেননি। পরশু রাতেও হয়ত ঠিক করে রেখেছিলেন, গোল পেলে উদযাপন করবেন না। কিন্তু ম্যাচের ৫৭ মিনিটে রিয়ালের ডি বক্সে জটলার মধ্য থেকে নেয়া শটে গোল করার পর আপনা থেকেই আবেগ বেরিয়ে আসে তার। এমন গোলের পর পুরনো আনুগত্য ভুলে মোরাতা উদযাপন করতেই পারেন। এই গোলটাই যে জুভেন্টাসকে তুলে নিয়েছে বহু আরাধ্য ফাইনালে। শুধু তাই নয়, এখন ১৯ বছর পর শিরোপা স্বপ্নও দেখছে ইতালিয়ান পরাশক্তিরা। ইউরোপীয়ান ক্লাব ফ্টুবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে এখন পর্যন্ত দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জুভেন্টাস। ১৯৮৫ ও ১৯৯৬ সালে শিরোপা জেতা দলটি তাদের সাত ফাইনালের শেষটি খেলেছিল ২০০৩ সালে। এবার ফাইনালে উঠে এক সঙ্গে দুটো প্রতিশোধ নিয়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশের শীর্ষ ক্লাবটি। ১৯৯৮ সালের ফাইনালে রিয়ালের কাছে হেরেই তৃতীয় শিরোপাটা জেতা হয়নি জুভেন্টাসের। শুধু তাই নয়, এর আগে সর্বশেষ যেবার সেমিফাইনালে খেলেছিল তারা, ১২ বছর আগের সেই সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ দলের কোচ ছিলেন এই আনচেলত্তিই। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নামকরণ হওয়ার পর কোন দলই ইউরোপ সেরার ট্রফিটা টানা দুবার জিততে পারেনি। রিয়ালের বিদায়ে সেই রেকর্ড বজায় থাকল এবারও। মজার ব্যাপার, ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে সর্বশেষ এসি মিলান যেবার টানা দুবার ইউরোপীয়ান কাপ জিতেছিল, সেই দলে খেলেছিলেন বর্তমান রিয়াল কোচ আনচেলত্তি। গত মৌসুমে এক যুগ পর রিয়ালকে ‘লা ডেসিমা’ জেতানো তারকা এই কোচ এবার খালি হাতেই শেষ করছেন মৌসুম। ইতালিয়ান এই কোচকে এবার শূন্য থাকতে হচ্ছে ইতালির এক দলের কাছে হেরেই। স্পেনের দলটাকে বিদায় করে দিয়েছেন স্পেনেই জন্ম নেয়া এক খেলোয়াড়। এতসব রোমাঞ্চের কারণেই বোধহয় ফুটবল সবার প্রাণের খেলা। নিজেদের মাঠে কিক অফ থেকেই জুভেন্টাসের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে রিয়াল। সুযোগ আসে প্রথম মিনিটেই। কিন্তু বেলের হেড বারপোস্ট উঁচিয়ে যায়। শুরুর এই ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখেন বেল ও তার সতীর্থরা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে জর্জো চিয়েল্লিনির ভুলে এগিয়ে যায় রিয়াল। ডি বক্সের মধ্যে জেমস রড্রিগুয়েজকে অযথাই ফেলে দিয়ে স্বাগতিকদের পেনাল্টি উপহার দেন তিনি। স্পট কিক থেকে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে নেন প্রাণভোমরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এরপর আরও অনেক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি আনচেলত্তির শিষ্যরা। বিরতির পর ৫৭ বার্নাব্যকে স্তব্ধ করে দেন মোরাটা। পল পোগবার হেড থেকে বল পান এই স্ট্রাইকার। জটলার মধ্য থেকে ক্যাসিয়াসকে পরাস্ত করে সমতায় ফেরান জুভেন্টাসকে। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই এক যুগ পর ফাইনাল নিশ্চিত হয় ইতালিয়ান ক্লাবটির। বাকি সময়ে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেও গোলের দেখা না পাওয়ায় বিদায়ের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় রিয়াল ফুটবলারদের।
×