ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে পল্লবীতে জোড়া খুন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৫ মে ২০১৫

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে পল্লবীতে জোড়া খুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পারিবারিক ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে পল্লবীতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত দুই খুনীকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত সুইটি খাতুনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। দায়েরকৃত মামলায় ব্যবসায়িক পার্টনার আশরাফুল আলম চিশতীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বুধবার বেলা দেড়টার দিকে পল্লবী আবাসিক এলাকার ২০ নম্বর সড়কের ‘ক্রিস্টাল ডি আমিন’ নামের ৯ নম্বর ছয়তলা বাড়ির ষষ্ঠতলায় ডেসকোর প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জাহিদের স্ত্রী সুইটি খাতুন (২৬) ও জাহিদের মামা আমিনুল ইসলামকে (৫৫) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল খালেক (৫৫) ও সুইটি খাতুনের ব্যবসায়িক পার্টনার শাহীনকে বুধবার রাতেই আটক করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া এগারোটার দিকে নিহত সুইটির স্বামী জাহিদুল ইসলাম (৩৪) পল্লবী থানায় অজ্ঞাত দুই খুনীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে শাহীনের নাম উল্লেখ করা হয়। পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপ্লব কিশোর শীল জনকণ্ঠকে জানান, শাহীনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। মামলার অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুইটির স্বামী জাহিদের পিতার নাম আব্দুস সালাম। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানাধীন গান্ধাইল গ্রামে। তিনি রংপুর পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন ডেসকোতে (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি)। প্রায় চার বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রায় বারোশ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটটি প্রায় ৬০ লাখ টাকায় কেনেন। ফ্ল্যাটে স্ত্রী নিহত সুইটি খাতুন, নিহত মামা আমিনুল ইসলাম ও একমাত্র ছেলে সাজিদ বিন জাহিদকে (৫) নিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রী নিহত সুইটি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পল্লবী-১২ নম্বরে অবস্থিত। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন নিহত সুইটি। আর বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশের মালিক সুইটির স্বামী জাহিদ আর বাকি ৩০ শতাংশের মালিক চার দিনের রিমান্ডে থাকা শাহীন। শাহীন কোন প্রকার টাকা ইনভেস্ট না করেই ব্যবসায়িক পার্টনার হয়। কেন তাকে টাকা ইনভেস্ট ছাড়া ব্যবসায়িক পার্টনার বানানো হয়েছে সে বিষয়ে শাহীন ও নিহত সুইটির স্বামী জাহিদের তরফ থেকে কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য জানা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরেই বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুইটি খুব ঘন ঘন মোবাইল ফোনের সিমকার্ড পরিবর্তন করতেন। কেন করতেন তা অবশ্য নিশ্চিত নয়। তবে সুইটির স্বামীর অভিযোগ, চাঁদাবাজরা তাদের কাছে টাকা দাবি করত। এ জন্য তিনি চলতি বছরের ৩১ মার্চ একটি সাধারণ ডায়েরি করেন পল্লবী থানায়। যদিও ডায়েরি দায়েরের পর পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের চাঁদা দাবির বিষয়ে আর কোন অভিযোগ করেননি। এমনকি কোন প্রকার যোগাযোগও করেননি। জাহিদ নানা কারণে স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন। বিশেষ করে ঘন ঘন সিমকার্ড পরিবর্তন করায় সন্দেহ দিন দিন আরও বেড়ে যায়। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তিও ছিল। মামলার এজাহারে বাদী সুইটির স্বামী জাহিদ উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন তিনি সকাল পৌনে নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হন। দুপুর পৌনে তিনটার দিকে বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে মেঝেতে ও মামাকে পাশের বেডরুমের খাটের ওপর রক্তাক্ত নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। একমাত্র ছেলেকে বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়। ছেলের কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ জানায়, লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। বুধবার লাশ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবারই লাশ সিরাজগঞ্জে জাহিদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে। আটককৃত বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী আব্দুল খালেক জানান, বুধবার বেলা দেড়টার দিকে একটি লাল মোটরসাইকেলযোগ ৩০-৩৫ বছর বয়সী দুই যুবক ওই বাড়িতে যায়। তারা নিজেদের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদের আত্মীয় পরিচয় দেন। পরিচয় পেয়ে তিনি গেট খুলে দেন। এরপর দুই যুবক ওপরে উঠে যায়। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পরেই তারা বেরিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়। এরপর সুইটির স্বামী বাসায় ফিরলে হত্যাকা-ের ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
×