ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ মে ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান গ্রীষ্মের কাল এখন। প্রথম মাস বৈশাখ গত হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হলো জ্যৈষ্ঠ। আর জ্যৈষ্ঠ মানে মধুমাস। আম জাম লিচু কাঁঠালসহ প্রিয় সব ফল পাকার সময়। খাওয়ার সময়। তবে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় গাছ আছে নামমাত্র। ফলের গাছ আরও কম। এ অবস্থায়ও মধুমাসের চেহারাটা কোথাও কোথাও দৃশ্যমান হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানের গাছে ইতোমধ্যে ধরেছে মধুমাসের ফল। কোন কোন রাস্তার ধারে, পুরনো বাড়ির সামনে ফলের গাছ। সেসবে বিশেষ করে চোখে পড়ছে আম ও কাঁঠাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বেশকিছু ফলের গাছ আছে। মসজিদের পাশে ডাল পালা ছড়িয়ে থাকা কাঁঠাল গাছে প্রচুর কাঁঠাল এখন। হঠাৎ দেখে মনে হয়, গ্রামের কোন বাগান! না, এখনও পুরোপুরি পাকেনি। তবে লক্ষণ পরিষ্কার। আম অবশ্য কাঁচাও খাওয়া যায়। এ কারণে ক্যাম্পাসের অনেক আম গাছ খালি হয়ে গেছে! মধুমাসের ফল পাওয়া যাচ্ছে বাজারেও। বিশেষ করে লিচু খুব আসছে এখন। বিক্রিও হচ্ছে অলি গলি সবখানে। দেখে বোঝা যায়Ñ মধুমাস এসেছে! গ্রীষ্মে আরেক দিকÑ অসহ্য গরম। এরই মাঝে রেগেমেগে অস্থির সূয্যি মামা! তেজ বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। সকাল হতে না হতেই প্রখর রোদ। রোদ যতটা চোখে দেখা যায়, গরম তারও বেশি। খোলা আকাশের নিচে কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই গা ভিজে যায়। বৃহস্পতিবারের কথাই বলা যাক, বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় যেন লো হাওয়া বইছিল। গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন পথচারীরা। কাছাকাছি দূরত্বে হেঁটে যেতে বার বার থামছিলেন। এই শহরে গাছ নেই। বিকল্প খুঁজে নিয়ে জিরোচ্ছিলেন। কাওরানবাজারের একটি ব্যাংকের বুথে ঢুকে দেখা গেল, বাইরে থেকে নিরাপত্তা দেয়ার কাজ যার; সেই নিরাপত্তারক্ষী ভেতরে। এসির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বললেন, ‘এত গরম স্যার। পারতাছি না। মাথা চক্কর দিতাছে। একটু ঠা-া না হইলে মইরাই যাইমু, স্যার।’ এদিন অতিরিক্ত ঘামের ফলে সহজেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল শরীর। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। ক্লান্ত পথচারীদের অনেকই ফুটপাথের শরবতের দোকানগুলাতে ভিড় করছিলেন। পল্টনের একটি রাস্তার ধারে দেখা গেল, বরফের বড় বড় টুকরো থেকে ঠা-া পানি আর শরবত করা হচ্ছে। বিশেষ করে লেবুর শরবত খুব বিক্রি হচ্ছিল। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ থেমে এক গ্লাস শরবত মুখে দিয়ে যেন নতুন জীবন পাচ্ছিলেন তাঁরা। এক রিক্সাওয়ালার বলাটি এরকমÑ ‘এই গরমে জীবন বাঁচে না ভাই! এক গ্লাস শরবত খাইয়া শান্তি হইলাম।’ এবার চমৎকার একটি উদ্যোগের কথা। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা ও নিকেতন এলাকার সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০০টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় কাজটি করেছে বারিধারা সোসাইটি, গুলশান সোসাইটি, নিকেতন সোসাইটি ও গুলশান ইয়ুথ ক্লাব। গুলশান থানা ও ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড দ্বারা এই কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে নতুনবাজার, গুলশান ১ ও ২, হাতিরঝিল, নিকেতন এবং বারিধারায় মোট ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে সব সময় নজরদারি ছাড়াও ফেস ডিটেকশন, ভেহিকেল ট্র্যাকিং, ট্রাফিক কন্ট্রোল, অটো নাম্বার প্লেট ডিটেকশন, ক্রিমিনাল ডিটেকশন করা যাবে। পরবর্তীতে আরও ৭০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। এমন উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোতেও।
×