ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদীর জলে ডুবেছে ধান

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৪ মে ২০১৫

নদীর জলে ডুবেছে ধান

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেতে এবার রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক আগেই নেমেছিলেন ঘরে সোনার ধান তোলার কাজে। এরই মধ্যে অনেক কৃষক ভালভাবেই ঘরে তুলেছেন কষ্টার্জিত ফসল। তবে জেলার তানোরের শিবনদের বিস্তীর্ণ এলাকায় পাকা বোরোর ধান নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন হাজারও কৃষক। হঠাৎ পানির তোড়ে ভেসে গেছে কয়েকশ’ বিঘা জমির পাকা ধান। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিবনদের বুকে আবাদ করা বোরো ধান নিয়ে। ক’দিন আগেও যে ধানের হাওয়ায় দোলানো স্বপ্ন উঁকি দিলেও এখন জলের নিচে নিমজ্জিত হয়ে কৃষকের সে স্বপ্ন ম্লান হতে চলেছে। বুধবার জেলার তানোর উপজেলা সদরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ধান ইতোমধ্যে উঠে জমি ফাঁকা হয়েছে। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শিবনদের মাঝ থেকে এখনও ধান নিয়ে উঠানে আসছে কৃষক। ছোট নৌকা ভিড়িয়ে সে সব ধান কোমর পানির নিচ থেকে কাটছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, প্রতিবছর বোরো মৌসুমে শিবনদের পুরো অংশ থাকে প্রায় শুকনো। এ জমিতে কৃষকরা সোনার ফসল চাষ করে ঘরে তোলেন। এবারও সে আশায় বোরো চাষ করেছিলেন। ধানের পাকা শীষ হাওয়ায় দোলানোও শুরু হয়েছিল। তবে গত তিনদিনের বৃষ্টিতে কৃষকের সোনার সে ফসল নিমজ্জিত হয়েছে নদীর জলে। আশা ভঙ্গ হলেও হাল ছাড়েনি। কৃষকরা নদীর জলে ডুবে যাওয়া ধানই ঘরে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বি-বাড়িয়ায় কৃষকের কান্না স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, জমিতে ধানে ঠাসা। ভাল উৎপাদন হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ৮ হাজার ৪শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে চলতি বছর বোরো ধানের আবাদ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আশানুরূপ উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ ৮০ মেট্রিক টন। ধানের বেশি উৎপাদনে খুশি নন কৃষক। প্রতি কানি জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল উঠানো পর্যন্ত ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কানি জমির ধান মাত্র ৭-৮ হাজার টাকা। নাসিরনগর উপজেলার খাঘালিয়া গ্রামের কৃষক জাফরের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় আশুগঞ্জ মেঘনা নদীর তীরে ধানের গোলায়। তিনি বলেন, এ সব খরচ করে এখন বিপাকে কৃষক। তার ধারণা ছিল ধান বিক্রি করে লভ্যাংশের টাকায় কামলাদের বিদায় করবেন। সে আশা গুড়ে বালি। ৩০ কানি জমি চাষ করে উৎপাদিত ধান দিয়ে কামলাদেরও বিদায় করতে পারছেন না। বুধবার ধানের বাজারে এসে ১ লক্ষ টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করেছেন। এ সময় অনেকটায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। ধান ক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, বাজারে ভাল একটি মুরগির দাম ৫শ’ টাকা। অথচ ১ মণ মোটা ধান ৩৯০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা নিম্নমানের চাল দেশীয় চালের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করায় দেশের চাল কিনতে আগ্রহী নন ক্রেতারা। এতে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছে, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে চাল আমদানি বন্ধ না করলে কৃষকের দুর্দশার সীমা থাকবে না। জেলা চাতাল-কল মালিক সমিতির কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন তালুকদার জানান, আশুগঞ্জ দিয়ে নৌকা, ট্রলার ও ট্রাকযোগে প্রতিদিন ৬০-৭০ হাজার মণ আমদানি হচ্ছে। চাতাল-কল মালিকরা জানিয়েছেন, শুধু আশুগঞ্জে ৩৮৪টি চাতাল কল রয়েছে। পর্যাপ্ত ধান সরবরাহ না হওয়া ইতোমধ্যে অর্ধশত চাতাল-কল বন্ধ হয়ে গেছে। চাতাল-কল মালিক শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কৃষকের স্বার্থে সরকার ধান চাল সংগ্রহ করবে। এবার ধানের মূল্য ধরা হয়েছে প্রতিকেজি ২২ টাকা আর চাল প্রতিকেজি ৩২ টাকা। খুব সহসাই সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে।
×