ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ

বিসিএল দিয়েই মুশফিকদের প্রস্তুতি শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৪ মে ২০১৫

বিসিএল দিয়েই মুশফিকদের প্রস্তুতি শুরু

মিথুন আশরাফ ॥ আর ২৭ দিন বাকি। ১০ জুন থেকে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি দিয়ে ভারতের বিপক্ষে এক টেস্ট, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২৪ মে থেকেই এ সিরিজের প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়ে যাবে। এ দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) চার দিনের খেলার শেষপর্বের শুরু হবে। বিসিএল দিয়েই তাই ভারতের বিপক্ষে সিরিজে নামার প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন মুশফিক, তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহরা। বিসিএলের চারটি দলেরই একটি পর্ব করে বাকি আছে। যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ চলেছে, তখন সিঙ্গেল লীগ পদ্ধতির এ লীগের দুটি করে পর্ব শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে একটি পর্ব। এ পর্ব শেষে যে দল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকবে, সেই দলই চ্যাম্পিয়ন হবে। এখন লীগের দুটি করে খেলা শেষে প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল ২ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। দ্বিতীয় স্থানেই আছে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল। তাদের পয়েন্ট ৩২। অর্থাৎ শিরোপা জিততে দক্ষিণাঞ্চলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে পূর্বাঞ্চল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলোÑ লীগের শেষপর্বে চট্টগ্রামে দক্ষিণাঞ্চল-পূর্বাঞ্চলের মধ্যেই লড়াই হবে। এ দুটি দল পরস্পরের প্রতিপক্ষ। অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন এ দুই দলের মধ্যে যে কোন একটিই হচ্ছে। আর ১৩ পয়েন্ট পাওয়া বিসিবি উত্তরাঞ্চল ও ১১ পয়েন্ট পাওয়া ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল মিরপুরে মুখোমুখি হবে। যে দুটি দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোন সুযোগই নেই। তাই দক্ষিণাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল ম্যাচের দিকেই সবার দৃষ্টি থাকছে। অবশ্য শিরোপা কে জিতছে, এর চেয়েও লীগের শেষপর্বে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নৈপুণ্য। ওই নৈপুণ্য ভারতের বিপক্ষে ৫ বছর পর যে বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে, সেই টেস্ট দলে স্থান করে দেবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে ইনজুরিতে না পড়লে মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম যে থাকছেন, তা নিশ্চিতই। পেস আক্রমণে রুবেল হোসেন ইনজুরি থেকে মুক্ত হলেই ফিরবেন। থাকবেন পেসার মোহাম্মদ শহীদও। ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন কুমার দাসও থাকবেন। বাকি ৪টি স্থান যে পূরণ করা হবে, তা পারফর্মেন্স বিবেচনা করেই নেয়া হবে। ব্যাটিংয়ে কারও সুযোগ পাওয়া কঠিনই। তবে স্পিন আক্রমণে ও পেস আক্রমণে বিসিএলে শেষপর্যন্ত ভাল করা ক্রিকেটারদের দেখা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত লীগে অভিজ্ঞ স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ২ ম্যাচে ৪ ইনিংসে ১৬ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারীদের মধ্যে সবার উপরে আছেন। তার ধারে কাছে কেউ নেই। দক্ষিণাঞ্চলের এ স্পিনার যদি শেষপর্বেও সেই উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পারেন, বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারেন, তাহলে টেস্ট দলে থাকার একটি সুযোগ ধরা দিলেও দিতে পারে। তবে শেষপর্যন্ত বামহাতি স্পিনার হওয়ায় হয়ত সুযোগ নষ্ট হতে পারে। কারণ এরই মধ্যে সাকিব, তাইজুল আছেন। এই দুজনের বাইরে নিশ্চয়ই একজন অফস্পিনারের অভাবই বোধ করবেন নির্বাচকরা। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টেস্টেও খেলার সুযোগ না পাওয়া জুবায়ের হোসেন লিখন তো আছেনই। তার মানে স্পিন আক্রমণ নিয়েও খুব বেশি ভাবনায় পড়তে হচ্ছে না। যে ভাবনা পেস আক্রমণ নিয়ে হচ্ছে। পেস আক্রমণে শাহাদাত হোসেন রাজিব পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে খেলার সুযোগ পেয়ে দ্বিতীয় বলেই যে ইনজুরির জন্য মাঠ ছাড়েন, আর আগামী ৬ মাসও তাকে খেলতে দেখা যাবে না। সেক্ষেত্রে একজন পেসারের অভাব থেকেই যাচ্ছে। রুবেল পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে না থাকায় আবুল হাসান রাজুকে নেয়া হয়েছিল। পেসারদের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের রাজু বিসিএলে ১ ম্যাচ খেলে ৫ উইকেটও নিয়েছেন। পূর্বাঞ্চলের আরেক পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিও ২ ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট শিকার করেছেন। তবে এবার বোধহয় পেস আক্রমণে একজন পেসারের যে অভাব অনুভূত হচ্ছে, সেটার জন্য ২ ম্যাচ খেলে ৪ উইকেট নেয়া দক্ষিণাঞ্চলের আল আমিন হোসেন ও ১ ম্যাচ খেলে ১ উইকেট নেয়া একই দলের রবিউল ইসলাম শিপলুর দিকেই দৃষ্টি থাকবে বেশি। যদি এ দুইজন বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারেন, যে কোন একজনকে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দলে দেখা যেতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে, যাদের জাতীয় দলে সুযোগ করে নেয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাও আছে, তারা ‘আটঘাট‘ বেঁধেই বিসিএলের শেষপর্বে খেলতে নামবেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যারা নিশ্চিতভাবেই দলে সুযোগ পাবেন, তারা এ চার দিনের ম্যাচকে প্রস্তুতি হিসেবেই নেবেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে বিসিএল ওয়ানডে হয়েছে, তা কাজেও লেগেছে। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশই করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার ৭ জুন যখন বাংলাদেশে আসবে ভারত, তার আগেই বিসিএলের এ চার দিনের ম্যাচটি খেলে লঙ্গারভার্সন ক্রিকেটের সঙ্গে ভালভাবেই মানিয়ে নিতে পারবেন মুশফিক, তামিম, সাকিবরা। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যেন বিসিএলের শেষপর্বটি খেলেন, এ জন্য কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেই বিসিবিকে অনুরোধ করেন। তাই ৭ মে যেখানে বিসিএলের দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয়েছে, সেখানে শেষপর্বের জন্য ১৬ দিন লীগে বিরতি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পর জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও প্রায় দুই সপ্তাহের বিরতি পেয়ে গেল। ২২-২৩ মে ক্রিকেটারদের ফিটনেস পরীক্ষা হবে। এরপরই ২৪ মে থেকে বিসিএল খেলতে নেমে যাবে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এ লীগ দিয়েই শুরু হয়ে যাবে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রস্তুতিও। ম্যাচটি শেষ হতেই আবার ৪ দিন বিরতি দিয়ে ১ জুন থেকে পুরোদমে প্রস্তুতিতে নেমে পড়বেন মুশফিক, তামিম, সাকিব, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহরা।
×