ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেন বাংলাদেশে পশ্চিমা কূটনীতিকদের এ হাল

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৪ মে ২০১৫

কেন বাংলাদেশে পশ্চিমা কূটনীতিকদের এ হাল

বাংলাদেশে পশ্চিমা কূটনীতিকদের দৌড়াদৌড়ি দেখলে অনেক সময় মনে হয় তারা বিএনপির ডিপ্লোম্যাট শাখা। বিএনপির অনেক নেতাকে দেখেছি এর ফলে বেশ বাকবাকুম হতে। তীব্র হতাশাগ্রস্ত বিএনপির কর্মী-সমর্থকও (নব্য জামায়াতরা) কিছুটা আশায় বুক বাঁধেন। কেউ কেউ একটু জোরে নি:শ্বাস নিয়ে শরীরে বল ফিরে পান-যেমন করে খুব ভোরে রমনা গ্রীনে নি:শ্বাস নিয়ে নিয়ে বল পায় অনেক দুর্বল শরীর। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকেও তখন বেশ উদ্বিগ্ন দেখি। তারা এমন একটি ভাব করেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতরা কি তাহলে বিএনপিতে জয়েন করল? আবার কেউ কেউ দ্রুত আখের গোছানোর কাজটি বাড়ানোর চেষ্টা করেন, মনে করেন শেখ হাসিনার রাজত্ব বুঝি শেষ করে দিল পশ্চিমা কূটনীতিকরা। শেখ হাসিনা এসব কোন কিছুতে ভ্রƒক্ষেপ না করে যখন বিএনপিকে আরও একহাত পানির নিচে ফেলে দেন তখন বিএনপি কর্মীরা আবার পানিতে খাবি খাওয়া ইঁদুর হয়ে যান। আর ওই সব ভীত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বাঘের বাচ্চার ভাব করেন। একটু চারপাশে খেয়াল করলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক শ্রেণীর নেতা-কর্মীর এই অমাবস্যা-পূর্ণিমা আকাশের খেলা দেখা যায়। আওয়ামী লীগের ওই শ্রেণীর নেতা-কর্মীদের এই অবস্থা দেখে হাসি পাবার কিছু নেই। বরং বলা যায়, আহা, বেচারারা! কিন্তু পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটু দৌড়াদৌড়ি দেখলে টিভি পর্দায় তথাকথিত বুদ্ধিজীবী বা টকশোওয়ালাদের বুদ্ধি এবং কূটনৈতিক জ্ঞানের ফোয়ারা যখন ছুটতে থাকে, তখন তাদের বুদ্ধি দেখে মনে হয়- এদের ওপর দায়িত্ব দিলে এরা মরুভূমিতেও পানি ছাড়া পুঁইশাক ফলাতে পারে। এই সব হতাশা, ভয়, ইঁদুর, বাঘ, পূর্ণিমা-অমাবস্যা ও পুঁইশাক বুদ্ধিজীবীদের ভিতর বাংলাদেশে একজনকে দেখা যায় নির্বিকার চলতে। তাঁর চলন দেখে মনে হয়, যেন মেঘের ওপর দিয়ে অবলীলায় হেঁটে যাচ্ছেন ইন্দ্রজিৎ। তিনি শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এখন অনেকের প্রশ্ন, তাঁর এই দৃঢ় পদক্ষেপে এগুনোর শক্তি কোথায়? আসলে তাঁর এ শক্তি কোথায়- তিনিও কিন্তু বার বার বলে দিচ্ছেন। একটার পর একটা ঘটনা এসে জানিয়ে দিচ্ছে। হয়ত আমরা সব এক জায়গায় করে দেখছি না। যেমন ধরা যাক, রানা প্লাজার ঘটনা। এই ঘটনার পরে আমাদের এক শ্রেণীর অর্থনীতিবিদ নানান অঙ্ক কষে জানিয়ে দিলেন, আমাদের পোশাক বাজার এবার শেষ হয়ে গেল। এনজিও করা সুশীল সমাজও একই হিসাব দিতে লাগলেন টিভি, পত্রিকা, সভা-সেমিনার- সর্বত্র। এই সব অর্থনীতিবিদ সম্পর্কে জার্মানিতে একটা গল্প চালু আছে (যা আগেও কোন লেখায় উল্লেখ করে থাকতে পারি)। ক্ষমতায় এসে হিটলার যখন তাঁর ইকোনমি পলিসি ঘোষণা করলেন, তখন জার্মানির অর্থনীতিবিদরা ভল্যুম ভল্যুম কিতাব লিখলেন, যার বিষয়বস্তু, এই ইকোনমি পলিসি কোনমতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। হিটলার যখন নির্ধারিত সময়ের আগেই তার ইকোনমি পলিসি বাস্তবায়ন করলেন তখন ওই অর্থনীতিবিদরা আবার ভল্যুম ভল্যুম কিতাব লিখলেন, হ্যাঁ, কেবলমাত্র এই পথেই এ ইকোনমি পলিসি বাস্তবায়ন সম্ভব। আমাদের বেচারারাও অর্থনীতিবিদ! তাছাড়া আমাদের অনেক অর্থনীতিবিদ তো রবীন্দ্রনাথের কচ চরিত্রের মতো বিদ্যার ভারবাহী হয়ে আছেন। তবে দেবযানীর অভিশাপে নয়, পুঁজির ছলনায় তারা শুধু বিদ্যার ভারবাহী হয়ে আছেন, প্রয়োগের কোন ক্ষমতা তাঁদের নেই। আর এনজিও ব্যক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজ! এদের একটি বড় অংশ ছদ্মবেশী রাজাকার বা রাজাকারপুত্র; অন্য একটি অংশের কেউ কেউ নিজে বা কারও বা পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকে সমর্থন করেছিলেন। বাদবাকি একটি অংশ আছে তথাকথিত বাম। সোভিয়েতের পতনের পর এই বামদের হতাশাগ্রস্ত চোখে রাস্তায় ঘুরতে অনেকেই দেখেছেন। তারপরে কেউ কেউ এনজিওতে ঢোকেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে ঢুকে করে কম্মে খাচ্ছেন। তাই এদের কোন হিসাব মেলার প্রশ্নই ওঠে না। বরং টিভি পর্দায়, গোলটেবিল-লম্বা টেবিলে তাদের ফুৎকার দেখে কেবল মনে হতে পারে, এতটুকু যন্ত্র থেকে এত শব্দ কীভাবে বের হয়! আর ওই তপ্ত সময়ে শেখ হাসিনা খুব স্বাভাবিকভাবে একটি আলোচনা সভায় বলে দিলেন, ইউরোপীয় ক্রেতারা যাবে কোথায়? ওরা এর থেকে সস্তা দামে পোশাক আর কোথায় পাবে? শেখ হাসিনা শুধু শেখ মুজিবের মেয়ে নন। বাইগার নদীর তীরে তাঁর দাদা লুৎফর রহমানের হাত ধরে তিনি হেঁটেছেন ছোটবেলায়। তাই শেখ মুজিবের মতো তাঁরও বাংলাদেশের সহস্র বছরের হিসাব মেলানো অঙ্কটি জানা আছে। অর্থাৎ কত ধানে কত চাল হয়Ñ তা তিনি খুব ভালই জানেন। তাই অর্থনীতি শিখতে তাঁকে অক্সফোর্ড বা লুমুম্বায় যেতে হয়নি। তিনি ভালভাবে জানেন, প্রতিদিন ইউরোপ ক্ষুদ্র পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা হারাচ্ছে। আর পরিণত হচ্ছে একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অনিবার্য বাজারে। অন্যদিকে দিনে দিনে পশ্চিমা দেশগুলোর পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করছে এশিয়া। এর ভিতর এশিয়ারও কিছু দেশের নিজস্ব বাজার ও উৎপাদন খরচ এমন স্তরে উঠে গেছেÑ তাদের কাছ থেকে পণ্য কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর পাশাপাশি এশিয়া ও তার সংলগ্ন মহাদেশগুলোর কয়েকটি দেশ এমনকি লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু দেশ মিলে পশ্চিমাদের বিপরীতে গড়ে উঠছে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে আরেকটি অর্থনৈতিক বিশ্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পশ্চিমারা এককভাবে একটি অর্থনৈতিক বিশ্ব গড়ে তুলেছিল। ওই সময়ে সামরিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুই মেরুর পৃথিবী গড়তে সমর্থ হয়েছিল কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুই মেরু তৈরি করতে পারেনি। বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক গতি ওই সময়ের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখনকার যুদ্ধ ক্যাপিটলইজম ও সোস্যালাইজমের মধ্যে নয়। এখন যুদ্ধ ক্যাপিটলইজমের সঙ্গে ক্যাপিটলইজমের। তাই এখানে স্বাভাবিকভাবে দুটো পুঁজির বিশ্ব গড়ে উঠছে। টক্করটি পুঁজিতে পুঁজিতে। অর্থ-পুঁজির সঙ্গে সঙ্গে মানব-পুঁজিও বড় পুঁজি। যেখানে এশিয়া ও তার নতুন মিত্ররা অনেক এগিয়ে পশ্চিমাদের বিপরীতে। ইতোমধ্যে এশিয়ার জোটের পুঁজির নেতৃত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটে গেছে। স্বাভাবিকভাবে চীন এর নেতৃত্ব নিয়েছে। চীন শুধু অর্থনৈতিক পথে তার নেতৃত্ব নিয়ে এগুচ্ছে না পুঁিজর প্রসার, পণ্যের বাজার ও সার্বিক রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি নিয়েও এগুচ্ছে। যে জন্য চীন তার হাত প্রসারিত করছে ভারত, রাশিয়া ছাড়াও ব্রাজিল এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকা অবধি। অন্যদিকে এই স্ট্রাটেজিক বলয়টিতে আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো পশ্চিমা বিশ্বে ইউরোপ যেমন আমেরিকার পুড্ল এখানে কিন্তু ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা কেউ চীনের পুড্ল নয়। বরং পারস্পরিক স্ট্রাটেজির আঙুল দিয়ে একে অপরের হাত ধরছে। এশিয়ার নেতৃত্বের এই নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজির বলয় নিয়ে বিস্তারিত লেখার জন্য এ কলাম নয়। তবে কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। যেমন চীনের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস পাইপ লাইন। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে ভারতের নৈকট্য শুধু নয়, চীন ও ভারত মিলে পাকিস্তানের কাঠামোকে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে- যার ভবিষ্যত বেলুচিস্তানের আরব সাগরের বন্দর ও করাচি বন্দর চীন-ভারতের জন্য উন্মুক্ত হবে, যা চীনের নিউ সিল্করুটকে আরও মসৃণ করবে। অন্যদিকে সেন্ট্রাল এশিয়া বা মিডল ইস্টের ইসলামিক মৌলবাদ আইএস, আফগানিস্তানের আল কায়েদা সব এখন এক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এ সমস্যাগুলো এশিয়ার এই নতুন পুঁজি বলয়ের নয়। এ সমস্যা পশ্চিমাদের। অর্থনীতি ও প্রগতির এই তীব্র ক্ষতিকারক জঙ্গী সমস্যা এশিয়ার এই নতুন পুঁজি শক্তি বলয়ে প্রবেশ করছে না। বরং এরা মিডল ইস্ট, সেন্ট্রাল এশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশে পশ্চিমাদের জন্যে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আবার এরা ঢুকে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। এমনকি জন্ম নিচ্ছেও সেখানে। তাই পশ্চিমা পুঁজি বলয়টি এখন শুধু অর্থনীতি নিয়ে সমস্যায় নেই, তারা বর্তমান বিশ্বের জটিলতম সমস্যা ইসলামিক জঙ্গী সমস্যায় জর্জরিত। এর ফলে এশিয়ার নেতৃত্বে এই নতুন অর্থনৈতিক পুঁজি বলয়টি আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবার সুযোগ পাচ্ছে। এই পরিবর্তিত পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ভূ-রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ শুধু ভারত ও চীনের ট্রানজিট কান্ট্রি নয়, নতুন সিল্করুটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বাংলাদেশ এই পুঁজি ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি বলয়ের এক অনিবার্য প্লেয়ার। বাংলাদেশের বর্তমান চরিত্রটি একটু দ্বৈত। এখানে ইসলামিক জঙ্গীবাদ আছে আবার অর্থনীতির এই নয়া রুটের অনিবার্য অংশ। এই দ্বৈত বা জটিল অবস্থাকে মোকাবেলা করে সঠিক পথে এগুনোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা দিয়েছেন অসীম প্রজ্ঞার পরিচয়, যা বঙ্গবন্ধু কেবল সূচনা করেছিলেন কিন্তু বাংলাদেশের অন্য কোন রাষ্ট্রনায়ক পারেননি। শেখ হাসিনা পশ্চিমাদের বাধ্য রেখেছেন তাদের বাজার বাংলাদেশের জন্যে ছেড়ে দিতে। আবার চীন, ভারত, রাশিয়ার এই নতুন পুঁজি ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি বলয়ের একজন নিপুণ প্লেয়ার হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করেছেন। অন্যদিকে তিনিই একমাত্র রাজনীতিক এ মুহূর্তের বাংলাদেশে, যিনি জঙ্গীবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার যোগ্যতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সমকক্ষ কেন এক হাজার মাইলের ভিতরও কেউ নেই। শেখ হাসিনার এই নিপুণ খেলার বিপরীতে অনেক সময় পশ্চিমারাও হিমশিম খাচ্ছে। কারণ, তারা জানে এই নতুন পুঁজি বলয়ের যত শক্তিশালী প্লেয়ার হবে বাংলাদেশ ততই তাদের বাংলাদেশ থেকে পোশাকসহ অনেক পণ্য বেশি দামে কিনতে হবে। আবার তারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন পুঁজির শক্তিশালী প্লেয়ার হতে চলেছে। বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক গতি ঠেকানোসহ সার্বিকভাবে নতুন এ পুঁজি ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি বলয়ের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে খালেদা জিয়াকে জঙ্গী থেকে আধা জঙ্গী রূপ দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার কথা কখনও কখনও ভাবে পশ্চিমারা। এমনি আধা জঙ্গীরূপধারীদের নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা মিডল ইস্ট, সেন্ট্রাল এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে করছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তারা এ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেষ্টা করতে গেলেই একদিকে যেমন ভিতর থেকে কঠিন বাধা উপস্থিত হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব তেমনি আঞ্চলিক পরাশক্তির বাধা হিসেবে কঠোরভাবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ভারত। এর সঙ্গে সম্মতি দিচ্ছে চীন ও রাশিয়া। যে কারণে দেখা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যখন পশ্চিমাদের মরাকান্না উঠেছিল তখন ভারত, চীন ও রাশিয়া পায়ের ওপর পা তুলে আরাম কেদারায় বসে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিচ্ছিল। শেখ হাসিনার মতো তারাও জানত, নতুন এই পুঁজি ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি বলয়ের শক্তি ও ইসলামিক জঙ্গী মোকাবেলা সব মিলে পশ্চিমাদের শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার কাছে আসতে হবে। তাই ৫ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে পশ্চিমারা সুড়সুড় করে শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানাল। তবে তারপরেও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি ও পুঁজির খেলা হোক আর অন্য যে কোন খেলা হোক সব পক্ষই সব সময় জিততে চায়। তাই পশ্চিমাদের জেতার চেষ্টা থাকবেই। অর্থাৎ বাংলাদেশকে দরিদ্র রাখার চেষ্টা তারা করবে তাদের পণ্যের সস্তা প্রোডাকশন হাউস হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্যে। এ জন্যে তারা খালেদাকে আধা জঙ্গীরূপ দেয়াকে বিকল্প পথ মনে করে। মনে করে খালেদার মতো কোন শক্তি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ মৌলবাদের দিকে একটু বেশি ঝুঁকবে, যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কম হবে। সেই দরিদ্র বাংলাদেশ তাদের কম দামে পণ্য উৎপাদনের স্থান হবে। এই নীতি পশ্চিমারা অন্যান্য দেশেও গ্রহণ করেছে উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামালের জন্যে। এমনকি ধারে কাছের পাকিস্তান অবধি। কিন্তু সবগুলো শেষ অবধি জঙ্গী-হাব হয়েছে। নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্তি হারিয়ে পশ্চিমা ফিডার খেয়ে কোনমতে বেঁচে আছে। পশ্চিমাদের এই ছোট পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা এবং জঙ্গী নিয়ে হাইড এ্যান্ড সিক খেলার কারণে এশিয়াসহ এই নতুন পুঁজি ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি বলয়টি এগিয়ে যাবার গতি হচ্ছে আরও দ্রুত। নতুন এই দুই অর্থনৈতিক পৃথিবীর গতিপথকে শেখ হাসিনা ব্যবহার করতে পারছেন শতভাগ। সেই যোগ্যতার পরিচয় তিনি দিচ্ছেন। অন্যদিকে খালেদা ও তার বুদ্ধিজীবীরা কেবল জঙ্গীতে ভরসা করে বসে আছে। যেন সেই, আমি সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়। রাজনীতি ও অর্থনীতির এই নতুন স্ট্রাটেজির সময়ে খালেদার মতই দিশেহারা পশ্চিমা কূটনীতিকরা। তাই তাদের দেখে মাঝে মাঝে কারও মনে হতে পারে, তারা কি শওকত মাহমুদ বা এমাজউদ্দিন হয়ে গেলেন? [email protected]
×