ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশের অর্ধেক মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৩ মে ২০১৫

দেশের অর্ধেক মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আপাতত দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণে আয়কর ও ভ্যাটকেই প্রধান মাধ্যম করা হবে। এ লক্ষ্যে নতুন ভ্যাট আইন এ বছর থেকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শ কমিটির ৩৬তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় আয়ের ১১ শতাংশ হচ্ছে রাজস্ব। পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় তা খুবই কম। ২৭ বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ১১ লাখ লোক কর দেন। এটা লজ্জাজনক। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী সব দেশের মানুষের কর দেয়ার হার অনেক বেশি। ভারতে করদাতার হার ৩০ শতাংশের বেশি হলেও বাংলাদেশে এ হার ১ শতাংশের কিছু বেশি। এর মধ্যেও সবাই নিয়মিত কর দেন না। কঠিন হলেও আগামীতে ৫০ শতাংশ মানুষকে এ করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর জন্য করের স্তর বিভিন্ন পর্যায়ে করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কর ব্যবস্থাপনায় আগামী বছর থেকে একটা সঙ্কট তৈরি হবে। এ সঙ্কট মোকাবেলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে অনেক পণ্য আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক উঠে যাবে। এ বছর থেকেই অনেক পণ্যে এটা কার্যকর করা শুরু হবে। এটা হলে দেশীয় শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তাই টিকে থাকতে এ সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটের আকার বড় না হলে সেবার মান বাড়ানো যায় না। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবার প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করা হবে। আগামী ৩ বছর পর এ বাজেটের পরিমাণ দ্বিগুণে পৌঁছাবে। করনীতিতে পরিবর্তনের বিষয়ে মুহিত বলেন, ওয়েলথ ট্যাক্সকে প্রোপার্টি ট্যাক্সে রূপান্তর করে ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে প্রতিবেশী দেশ এ বছরই প্রোপার্টি ট্যাক্স বাতিল করায় আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে টোব্যাকো ট্যাক্স আর আগের ন্যায় বহু স্তরে থাকছে না। সিগারেট ও বিড়ি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে স্তর বিন্যাস করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জননিবেদিত সরকার। যার ফলে আমরা সীমান্ত চুক্তির সুফল ঘরে তুলতে পেরেছি। আমাদের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে। তাই সরকারের লক্ষ্য বিরাট আকারের বাজেট ঘোষণা করা। কেননা দেশের সব মানুষকে সেবা দিতে হবে। অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ, সাবেক সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ, বর্তমান সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল মাতলুব আহমাদ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ছাগলের তো কিছু হলো না ॥ পোলট্রি ও মৎস্য উৎপাদনে সাফল্য থাকলেও গবাদি পশু উৎপাদনে তেমন সাফল্য না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃষকের পক্ষে ৫৭ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ‘কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট ২০১৫-১৬’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উঠে আসা কৃষকদের বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতে এ সুপারিশমালা তৈরি করা হয়। কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ দাবিগুলো তুলে ধরেন। এ সময় মাংস ও দুধ উৎপাদনে ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, পোলট্রি ও ফিশারিজে আমাদের খুবই সাকসেসফুল স্টোরি রয়েছে, কিন্তু চার পা, গবাদি পশুতে কিছু হয়নি। এ সময় আসে ছাগলের প্রসঙ্গ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ছাগলের তো কিছু হলো না। উত্তরে শাইখ সিরাজ বলেন, ছাগল গাছ খেয়ে ফেলে। এ নিয়ে দেনদরবার চলে। এজন্য ছাগল পালনে হয়ত সাফল্য আসেনি। কিন্তু ভেড়া পালনে বাংলাদেশ ভাল করবে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকের মধ্যে ভেড়া পালন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। গরু আমদানি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গরু আসছে বয়স্ক গরু। সেগুলো জবাই করা হয়। আগামীতে বাছুর আমদানি করা যায় কি-না, তা ভাবা হচ্ছে। গত তিন বছরে সহিংস রাজনীতিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকের ক্ষতির দিক তুলে ধরে কৃষকদের কৃষিঋণ মওকুফ কিংবা ঋণ রিসিডিউলের দাবি তুলে ধরেন শাইখ সিরাজ। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ মওকুফের বিষয়ে আমরা কিছু ভাবিনি। তবে ঋণ রিসিডিউল করা যেতে পারে। অর্থমন্ত্রীর হাতে দেড় কোটি ডলারের চেক তুলে দিলেন পঙ্কজ শরন ॥ বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ২০ কোটি ডলার অনুদানের সর্বশেষ দেড় কাটি ডলারের চেক অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয় সাক্ষাত করে এ চেক তুলে দেয়া হয় বলে মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ভারতীয় হাইকমিশন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে দেয়া ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত ২০১২ সালে ঢাকা সফরকালে জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১১ সালে ঢাকায় এ চুক্তি সই হয়। ভারতীয় হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ চেকের মাধ্যমে ২০ কোটি ডলারের অনুদানের পুরোটাই হস্তান্তর করল ভারত। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গতকালের বৈঠকে ৮০ কোটি ডলারের আওতায় চলমান ১৫টি প্রকল্পের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করেন পঙ্কজ শরন। এদিকে চেক হস্তান্তরের পর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে বিএনপি নেতারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। সালাহউদ্দিনের প্রসঙ্গে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছেও বলে তিনি জানান।
×