ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাংসল রসালো ফল- জ্যৈষ্ঠের আগেই মধু মাসের বার্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৩ মে ২০১৫

মাংসল রসালো ফল- জ্যৈষ্ঠের আগেই মধু মাসের বার্তা

মোরসালিন মিজান ॥ এখনও একদিন বাকি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। তবে তার আগেই রাজধানী ঢাকার বাজার ভরে উঠেছে লিচুতে। অলি গলি ও রাস্তার পাশের ফুটপাথে বড় বড় ঝুড়ি নিয়ে বসে গেছেন মৌসুমি ক্রেতারা। ঘন সরু পাতা দিয়ে ঠাসা ঝুড়ি। সেই পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে থোকা থোকা লিচু। ত্বকের রং এখনও পুরোপুরি লাল হয়নি। কোন কোনটির ত্বকে ইট চাপা ঘাসের রং। দেখে অনুমান করা যায়, পাকার লক্ষণ পরিষ্কার হতে না হতেই নামিয়ে আনা হয়েছে গাছ থেকে। স্বাদ টক-মিষ্টি। মাংসল রসালো ফল। আকারে ছোট হলেও খেতে মন্দ না। মৌসুমি ফল আসামাত্রই খেয়ে দেখার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এ কারণেও বিক্রি প্রচুর। জানা যায়, এখন কম-বেশি সারাদেশেই লিচু হয়। কিছু কিছু এলাকায় উৎপাদিত হয় বাণিজ্যিকভাবে। একটু আগে ভাগে পাকে- এমন জায়গার লিচু ট্রাক ভর্তি হয়ে ঢাকায় আসছে। কাওরান বাজারে প্রতিরাতেই আসছে লিচুর ট্রাক। মঙ্গলবার সকালে সেখানে গিয়ে অবাকই হতে হয়। জনতা টাওয়ারের বাম পাশের রাস্তায় আর কিছু নেই। লিচু আর লিচু। জমজমাট পাইকারি বাজার। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোর ময়মনসিংহ সাতক্ষীরা মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা জীবননগর ঝিনাইদহ মাগুরা সোনারগাঁসহ বেশ কিছু এলাকা থেকে আসছে এসব লিচু। এক হাজার দুই হাজার ও তিন হাজার লিচু দিয়ে ভর্তি করা এক একটি খাঁচা। ৫০টি দিয়ে সাজানো হয়েছে আঁটি। আমেনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন জানান, জ্যৈষ্ঠ শুরুর বেশ আগে থেকেই লিচু আসতে শুরু করেছে। পনের দিনের মতো হবে, লিচু আসছে। প্রথমে অল্প স্বল্পই ছিল। ধীরে ধীরে পরিমাণ বেড়েছে। অবশ্য আবুল কালাম নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, আট দিন আগে থেকে আসতে শুরু করেছে লিচু। দামেরও ভিন্নতা আছে। তিনি জানান, লিচুর ভালমন্দ বিবেচনায় দাম ওঠানামা করছে। মঙ্গলবার অপেক্ষাকৃত ভাল ও বড় ১০০ লিচু ২৪২ টাকা বা তারও বেশি দামে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। টক স্বাদের ছোট ১০০ লিচু বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা করে। তবে, আসল মজা রাজশাহী ও দিনাজপুরের লিচুতেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও এসব এলাকার লিচু বাজারে আসেনি। রাজশাহীর লিচুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে ১০ দিন। এর পর আসবে দিনাজপুরের লিচু। এদিকে, খুচড়া বাজারে মজার সব কা- হচ্ছে। এখানে পাইকারি বাজারের তুলনায় দাম কয়েকগুণ বেশি। অনেক দোকানি আবার রাজশাহী বা দিনাজপুরের লিচু নাম দিয়ে সাধারণ লিচু বিক্রি করছেন। ফার্মগেটের এক ফুটপাথে ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছিল ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা করে। আলমগীর হোসেন নামের এক ক্রেতা জানালেন, দাম বেশি। লিচু দেখে ভেতরের ভালমন্দ কিছু বোঝা যায় না। বিক্রেতারা একই লিচু একেক সময় একেক জায়গার বলে বিক্রি করছেন। তবু মৌসুমি ফল, বাসায় না নিলে হয় না। এ কারণে ১০০ লিচু কিনেছেন বলে জানান তিনি। পল্টনে আজাদ প্রডাক্টসের গলিতে যে দামে লিচু বিক্রি হচ্ছিল তাতে করে এক পিসের দাম হয় আড়াই থেকে তিন টাকা। তবু কাড়াকাড়ি অবস্থা! হাশেম নামের এক ক্রেতা বিক্রেতার সামনে দাঁড়িয়েই লিচু মুখে পুরলেন। বিক্রেতাও সে সুযোগ দিয়ে বললেন, খেয়ে নেন। কোন সমস্যা নেই। আসলেই সমস্যা নেই? জানতে চাইলে তিনি বললেন, একটু টক আছে। তবে মন্দ না। আসলেই মন্দ না। মুখে পুরার পর এই প্রতিবেদকেরও তাই মনে হয়েছে!
×