ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার ক্ষমা চাওয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৩ মে ২০১৫

খালেদার ক্ষমা চাওয়া উচিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া এবং দুই মাস পর ভারত থেকে স্ত্রীকে ফোন দেয়ার ঘটনা বিএনপির মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মুখোশকেই জাতির সামনে ফের উন্মোচিত করে দিয়েছে বলে মনে করছেন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা। মঙ্গলবার জনকণ্ঠের কাছে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সরকার ও বিরোধী দলের বেশ কজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আন্দোলন-নির্বাচনসহ সবক্ষেত্রে ব্যর্থ বিএনপি সালাহউদ্দিনকে ‘গুমের’ অভিযোগ করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল, তা আজ জাতির সামনে প্রমাণ হয়ে গেছে। পরাজিত দলের নেত্রী খালেদা জিয়াও সস্তা সেন্টিমেন্ট আদায়ে সালাহউদ্দিনকে সরকার ও প্রশাসন ‘গুম-খুন’ করতে পারে এমন অভিযোগ করেছিলেন। বিএনপি নেত্রী সবকিছু জেনেশুনেই যে এমন মিথ্যাচার করেছিলেন, তাও আজ জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখন খালেদা জিয়ার উচিত, সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে তাঁর করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও দুঃখ প্রকাশ করা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কথা হয়েছে, এমন খবরই প্রমাণ করে এতদিন বিএনপি মিথ্যাচার করেছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতদিন দাবি করেছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ র‌্যাবের কাছে আছে। আর সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেছেন, নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে। তাদের এসব অভিযোগগুলো যে নিছকই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক ছিল, তা বর্তমানে প্রমাণ হয়ে গেছে। মোহাম্মদ নাসিম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এই নাটক সাজিয়েছিল। সালাহউদ্দিনের গুমের বিষয়ে বিএনপি দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরে এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী নিজেই ভারত থেকে তাঁর স্বামীর ফোন পাওয়ার ঘটনা প্রকাশ করায় বিএনপির মিথ্যাচারের কাহিনী আবারও দেশবাসীর সামনে প্রকাশ পেয়েছে। দেশের জনগণ ভবিষ্যতে বিএনপির কোন মিথ্যাচারে আর বিভ্রান্ত হবে না। জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের অন্তর্ধানের সঙ্গে সরকার ও প্রশাসনের কোন ধরনের সম্পর্ক ছিল না তা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এটা নিয়ে বিএনপি নোংরা রাজনীতি করেছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সালাহউদ্দিনের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুমেরও অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু আসল রহস্য আজ ফাঁস হয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার উচিত সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহার এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু তার প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত থেকে দীর্ঘদিন পর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের ফোনের বিষয়টি রহস্যজনক। দেশের সব মানুষের আজ প্রশ্ন, বিএনপি কেন গুমের অভিযোগ এনে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির চেষ্টা করেছিল? এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আতঙ্কিত হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের জন্য এটা যথার্থ কোন কাজ নয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া এবং দু’মাস পর স্ত্রীকে ভারত থেকে ফোন দেয়ার ঘটনা বিএনপির ‘অন্তরালের ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বিলম্বিত হলেও এটা একটা ভাল খবর। এসব তাদের (বিএনপি) অন্তরালের ব্যাপার। তবে আমরা আশা করি, সালাহউদ্দিন আহমেদ খুব দ্রুতই মেঘালয় থেকে আপন আলয়ে আসবেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি যে জন্মলগ্ন থেকেই মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে তা আবারও জাতির সামনে প্রমাণ হয়ে গেল। আন্দোলন-নির্বাচনসহ সবক্ষেত্রে পরাজিত হয়ে দিশেহারা বিএনপি সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের ঘটনাকে নিয়ে জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এতদিন লুকিয়ে থাকার পর ভারতের মেঘালয় থেকে স্ত্রীকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ফোন করার বিষয়টি রহস্যজনকও বটে। তবে জাতির সামনে বিএনপির আসল মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের দাবি হচ্ছে, ভারত থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে নেপথ্যের সকল তথ্য উদঘাটন করে তা জাতির সামনে প্রকাশ করুক।
×