ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্পে চাই সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৩ মে ২০১৫

ভূমিকম্পে চাই সচেতনতা

কাঁটাবন থেকে একাধিক নারী বাসে উঠলেন। চেহারাতেও কেমন যেন একটা ভয় ছড়িয়ে পড়ছে সবার। কারও হাতে তেমন কোন ব্যাগও নেই। কথা বলে বুঝলাম, ভূমিকম্পের সময় স্থানীয় একটি গার্মেন্টস থেকে তাড়াহুড়ো করে নিচে রাস্তায় নেমে এসেছেন তারা। নামার সময় ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন আহতও হয়েছেন। ভূমিকম্পের সময় আমি ছিলাম ছয় তলার বারান্দায়। কেননা, ওই সময় তাড়াহুড়ো করে নিচে নামার চেয়ে আমার কাছে বারান্দায় দাঁড়ানোটাই অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ ভূমিকম্পই মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং এতে ভয়ঙ্কর সর্বনাশ ঘটিয়ে দেয়। আর এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি কখনই ছয়তলা থেকে নিচে নেমে আসতে পারতাম না। ১২ মে মঙ্গলবার নেপালের ভূমিকম্প প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে এর তীব্রতা কম হলেও জনমনে তা অনেক বড় ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তবে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের মাত্রা কম হলেও তা খুব একটা কম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে মাঝারি বা তীব্র আকারের কোন ভূমিকম্পের আশঙ্কা না থাকলেও অপরিকল্পিত নগরী ঢাকা সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিকম্পের সময় সাধারণত আতঙ্কিত মানুষজন তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে রাস্তাসহ বিভিন্ন খোলা জায়গায় বের হয়ে আসেন। এটি অবশ্যই সচেতনতার একটি অংশ। তবে আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে, ওই একই সময়ে তাড়াহুড়ো করে অনেকে একসঙ্গে বের হতে গিয়ে আমরা নিজেরাই আহত হচ্ছি। ভূমিকম্পের সময় যদি বিল্ডিং থেকে দ্রুত বের হওয়া সম্ভব না হয়, তবে আত্মরক্ষার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো ‘ড্রপ, কাভার, হোল্ড অন’ পদ্ধতি। কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়–ন (ড্রপ), তারপর কোন শক্ত টেবিল, ডেস্ক বা নিচে জায়গা আছে এমন শক্ত ও দৃঢ় আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন (কাভার) এবং সেখানে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকুন (হোল্ড অন)। তবে এ পদ্ধতি উন্নত দেশে বেশি কার্যকর। সেখানে ভবন পুরো ধসে পড়ার চেয়ে আংশিক ধস বা গায়ের ওপর আসবাবপত্র পড়ে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আমাদের দেশে যেহেতু ভবন নির্মাণে ভূমিকম্পের বিষয়টি অবহেলা করা হয়, তাই এটি এদেশে ততটা কার্যকর নাও হতে পারে। তাই যদি সম্ভব হয়, তবে শৃঙ্খলিতভাবে তাড়াহুড়ো না করে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে পড়–ন। কিন্তু এ সময় সিঁড়িতে আশ্রয় না নেয়াই ভাল। ভবন ধসে পড়লে সবার আগে সিঁড়ি ধসে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যবহার করবেন না। কারণ, ভূমিকম্পের পর পরই আবারও কম্পন হতে পারে, যা ‘আফটার শক’ বা পরাঘাত। তাছাড়া বিদ্যুত বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। তখন লিফটই হয়ে উঠতে পারে আপনার মরণফাঁদ। রানা প্লাজা ধসের সময় দেখেছি, ভবন ধসে পড়ার সময় ছাদ ধসে পড়লে সেটা যার ওপর পড়ে, ঠিক তার পাশে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। উদ্ধারকর্মীরা একে বলেন, ‘সেফটি জোন’ বা ‘নিরাপদ অঞ্চল’। তাই ভূমিকম্পের সময় সোফা বা এ ধরনের বড় শক্তিশালী আসবাবপত্রের পাশে গুটিশুটি মেরে বসে থাকুন। এসব করা সম্ভব না হলে চেষ্টা করবেন ভবনের এমন কোন দেয়ালের পাশে আশ্রয় নিতে যার অবস্থান হবে বাইরের দিকে। যেন সেই একটি দেয়াল ভেঙ্গে আপনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সম্ভব হলে আশ্রয় নেয়ার সময় মাথার ওপর এক বা একাধিক বালিশ নিয়ে রাখবেন। কেননা, মাথার চোট বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া গাড়িতে থাকলে যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে থাকুন। আর কখনই সেতুর ওপর গাড়ি থামাবেন না। শুধু আমরা সাধারণ জনগণ সচেতন হলেই চলবে না, সচেতন হতে হবে নগর পরিকল্পনাকারীদেরও। কেননা, তাদের ওপরই নির্ভর করে ভূমিকম্প রোধের মূল দায়িত্ব। হোসাইন মোহাম্মদ সাগর ধানমন্ডি, ঢাকা।
×