ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চোখ খোলা রাখুন

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১৩ মে ২০১৫

চোখ খোলা রাখুন

কর্মবীর হিসেবে বাঙালীর সুনাম নেইÑ এমনটা নিন্দুকেরাও বলবেন না। তবে রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ এসব শব্দ বাঙালীর অভিধান থেকে মুছে যাচ্ছে কিনা এমন সংশয় হয়। বিশেষ করে দুই করিৎকর্মা সংস্থা প্রশাসন এবং রাজউক কর্তৃপক্ষ একের পর এক যেসব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে তাতে খানিকটা ধন্দে পড়ে যেতে হয় বৈকি। জীবিকার সন্ধানে রাজধানীতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছে যে, সড়কে হাঁটলে আরেকজনের গায়ের সঙ্গে শরীরের স্পর্শ বাঁচানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। গাড়ির সারি এত দীর্ঘ হয়ে থাকে যে, কুড়ি মিনিটের পথ পেরুতে লেগে যায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। ঢাকায় এই যে এত এত মানুষ তাদের কোথাও না কোথাও তো ঘুমুতে হয়। ভবনবাসী হওয়ার সৌভাগ্য ক’জনারই বা হয়, বস্তির সীমানা আর কত বাড়ানো চলে! তাই এখন নদী-খাল-ঝিল এসব জলাশয় ও জলাধারের ওপর অবৈধভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের বন্দোবস্ত শুরু হয়েছে। প্রথমত প্রশাসনের এসব দেখার কথা। তাদের নাকের ডগায় অবৈধ কা-কারখানা চলতে পারে না। এ নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার হলেও কাজ হয় না। কিন্তু যখন প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে তখন বাধ্য হয়ে সবাইকে নড়েচড়ে বসতে হয়। ঘটনাটি কিছুদিন আগের। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় ঝিলের জায়গা দখল, সেখানে অবৈধভাবে ঘর বানানো, সেগুলো ভাড়া দিয়ে ভাড়া আদায়Ñ এসব চলছিল নির্বিঘেœই। কিন্তু বিধিবাম। টিনশেড দেবে পানিতে ডুবে মারা যায় ১২জন। বাড়ির মালিক প্রভাবশালী। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, বর্তমানে তিনি কারাগারে। ওই বাড়িধস প্রমাণ করছে, এই শহরে কোথায় কী হচ্ছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সেসব নেই। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, ঝিলের ওপর কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বাড়িটি। কিন্তু দিনের পর দিন লোকজন সেখানে বসবাস করেছে ভাড়া দিয়ে। দেরিতে হলেও বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু এ থেকে যে প্রভাবশালী মহল শিক্ষা নেয়নি তার প্রমাণ আবার নতুন করে একই স্থানে টিনশেড নির্মাণ করা। ১২ জনের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর একই জায়গায় পুনরায় বিপজ্জনক আবাসন নির্মাণের সাহস কিভাবে পায় দখলবাজরা? এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন ছাড় নয়। ঢাকা শহরের আর কোন্ কোন্ স্থানে এমন অবৈধ কাজ চলছে সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকার জলাধারগুলো দখল করে সাময়িক ও বিপজ্জনক আবাসন নির্মাণের তুঘলকি কা- চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দায় প্রথমত রাজউকের। ঢাকার ফুসফুসকে সুস্থ করে তুলতে হলে যে জলাধার স্থাপন এবং উদ্ধার জরুরী এটা অনুধাবনের জন্য নগরবিশারদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। নতুন জলাধার গড়ে তোলার কাজ কি শুরু করা হয়েছে? বহুতল ভবন ব্যবসায়ীরা আগে যেভাবে ঢাকায় জমি কিনে যত্রতত্র আকাশছোঁয়া অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছে, আগামীতে যাতে সেটি আর সম্ভব না হয় সে বিষয়ে কি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? দখল ও অবৈধ স্থাপনা দেখার কথা যাদের তারা চোখ খোলা রাখুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
×