ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ানডের আত্মবিশ্বাস টেস্টে না থাকার নেপথ্যে!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১২ মে ২০১৫

ওয়ানডের আত্মবিশ্বাস টেস্টে না থাকার নেপথ্যে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটা ছন্দের ভেতর ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর সফরকারী পাকিস্তান দল ছিল ছন্দের বাইরে। টেস্ট সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সবার মনে একটা কথাই উঁকি দিচ্ছে ছন্দে-ছন্দেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত খেলেছে। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে আর সেটা থাকেনি। বার বার কোণঠাসা অবস্থা থেকে দুর্দান্তভাবে প্রত্যাবর্তন করাটা কঠিন। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল সেটা বার বার করে দেখাতে পারেনি। ব্যতীক্রম শুধু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে গত বছরের শেষে তিন টেস্টের সিরিজ। চরম পেশাদার, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পাকিস্তান দলের কাছে মিরপুর টেস্টে বাজেভাবে হারের কারণ হয়ত সেটাই। ওয়ানডেতে টাইগাররা ইতোমধ্যেই নিজেদের বড় ক্রিকেট শক্তি হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে প্রায় নিয়মিত ভাল খেলে। হয়ত গত বছরটা খারাপ গেছে যেটা সব দলের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু সময় থাকে। কিন্তু গত বছর নবেম্বর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ আত্মবিশ্বাস ও উজ্জীবিত মনোভাব নিয়েই খেলেছে টাইগাররা। টেস্ট ক্রিকেটে কবে একই আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে ‘টিম বাংলাদেশের’ মধ্যে? গত বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে দুই টেস্ট খেলার পর ছিল দীর্ঘ ৮ মাসের বিরতি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। টানা দেড় বছর পর সেটি ছিল বাংলাদেশ দলের প্রথম বিদেশ সফর। এর মধ্যে শুধু দেশের মাটিতে স্বল্প পরিসরের ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এমনকি ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসরেও নিয়মিত খেলতে পারেননি। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের পরও দল ব্যস্ত ছিল স্বল্প পরিসরের ক্রিকেট নিয়ে। বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের কারণে আরেকটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেট কিংবা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এত বেশি অনিয়মিত হলে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে কোথা থেকে? এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পেসারদের ইনজুরি। ইনজুরির বিষয়টা ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের পেসারদের সঙ্গে। প্রতিটি সিরিজেই আকাক্সিক্ষত পেসার নিয়ে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে টেস্ট সিরিজ খেলার মতো উপযুক্ত পেসার পাওয়া যায়নি। দেশের অন্যতম সেরা পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা এখনও টেস্ট খেলার মতো ফিটনেস অর্জন করতে পারেননি। একই সমস্যা তরুণ উদীয়মান তাসকিন আহমেদের। আরেক পেসার নাজমুল হোসেন অস্ত্রোপচার করানোর পর নিজেকে ফিরেই পাননি। মাশরাফির মতো নাজমুলও যখনই কোন সিরিজে ডাক পেয়েছেন, ইনজুরিতে পড়েছেন। ২০১৩ সালে সবচেয়ে সঙ্কটে পড়েছিল বাংলাদেশ পেসারদের নিয়ে। শফিউল ইসলাম, নাজমুলরা ছিলেন ইনজুরিকে। সুযোগ পেয়েছিলে রবিউল ইসলাম শিবলু। তিনিও ইনজুরির মধ্যে পড়েন পরবর্তীতে জিম্বাবুইয়ে সফর শেষেই। গত বছর সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দলের হয়ে দারুণ বোলিং করেছিলেন আল-আমিন হোসেন। কিন্তু এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁকে দলেই নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালে বলেন, ‘আল-আমিন সঠিক ছন্দে নেই। আমরা বিসিএলে তাঁর বোলিং দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানেও তিনি উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি।’ এবার খুলনায় প্রথম টেস্টের পরই ইনজুরিতে পড়েন বর্তমানে দুনিয়া কাঁপানো পেসার রুবেল হোসেন। ফিরলেন শাহাদাত হোসেন রাজিব। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে মাত্র দুটি বল করেই এমন ইনজুরিতে পড়লেন যে ৬ মাসের জন্য ছিটকে গেলেন দল থেকে। দীর্ঘ ইনজুুরি কাটিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে দলে থাকলেও একাদশে ঠাঁই পাননি আরেক সম্ভাবনাময় পেসার আবুল হোসেন রাজু। সবকিছু মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় বোলিং করার মতো পেসারের ঘাটতি রয়েই গেছে বাংলাদেশ দলে। দ্বিতীয় টেস্টে বাজেভাবে হারের পর এমন কথাই বললেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করতে হলে আমাদের বোলিংয়ে উন্নতি করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। ব্যাটসম্যানরা ভাল ফর্মে আছেন কিন্তু বোলাররা তাঁদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না।’ ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ তো আছেই সেই সঙ্গে ব্যাটসম্যানরাও কি টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক? ওয়ানডে ক্রিকেটে যে ব্যাটসম্যানরা দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন তাঁরা টেস্টে পারছেন না। খুলনায় দারুণ ব্যাটিংয়ের পর মিরপুরে ব্যাটসম্যানদের উইকেটে গিয়ে আত্মহত্যা সেটাই প্রমাণ করে। টানা খেলতে থাকলে বিশ্বাস জন্ম নেয়, অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ হয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে যেটা ভালভাবেই পুঞ্জীভূত হয়েছে। গত বছর টানা হারের মধ্যে থাকলেও নিয়মিত ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার কারণে অনেক শিক্ষাই অর্জন করেছে টাইগাররা। এখন সে জন্যই এ ফরমেটে সাফল্য আসছে। টেস্ট ক্রিকেটেও একই আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়ার জন্য ইনজুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলার সুযোগ বৃদ্ধিটাও হয়ত ভূমিকা রাখতে পারে।
×