ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মমতাজ লতিফ

জঙ্গী ও যুদ্ধাপরাধী-মিত্র ॥ বুয়েট শিক্ষকদের প্রতি নজর দিন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ মে ২০১৫

জঙ্গী ও যুদ্ধাপরাধী-মিত্র ॥ বুয়েট শিক্ষকদের প্রতি নজর দিন

দুটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রথম প্রশ্নটি মুনতাসীর মামুন প্রায়ই উচ্চারণ করেন- বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন! তারা কি আসলে স্বাধীনতার মূল্য জানত? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে- জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষ যত শিক্ষিত হবে, সে তত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে, ততই অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ হবে এবং দেশের স্বাধীনতা, এর প্রধান নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। অপরদিকে স্বদেশের স্বাধীনতার শত্রু, যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা করবে। তাদের অসমাপ্ত বিচারকাজটি দ্রুত সম্পাদনের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করবে। উপরোক্ত প্রশ্ন দুটি যেন জাতিকে ঠাট্টা করে! মাতৃভূমি রক্ষায় ত্রিশ লাখ শহীদ, চার লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন কী ভাববে আমাদের? অথচ বাংলাদেশ যেন এর একমাত্র ব্যতিক্রম। তা না হলে যুদ্ধাপরাধী-মিত্র, বিএনপি নেত্রী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এবং ২০১৩-তে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও হিন্দু হত্যা-নির্যাতন, ২০১৫-তে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে খালেদা-তারেকের নেতৃত্বে এবং নির্দেশে দেশে পেট্রোলবোমা মেরে স্বদেশী, নিরীহ, দরিদ্র শ্রমিক, চালক, হেলপার, ছাত্র, শিক্ষক, বাস-ট্রাক-রেলযাত্রী, নারী-পুরুষ-শিশুকে আগুনে দগ্ধ করে মেরেছে, পঙ্গু করেছে। তারপরও পর এক মাসের মধ্যে সংঘটিত মেয়র নির্বাচনে এ দলের প্রার্থীরা কয়েক লক্ষাধিক ভোট কিভাবে লাভ করেÑ এ প্রশ্নে জাতি বিস্ময়ে বিমূঢ়! তাহলে সত্যিই তো, ’৭১-এ বিজয়ের পরে ’৭১ ও ’৭৪-এ আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে ভেবেছিলাম, এই দশ-বিশ হাজার দালাল ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়ে গেলে জাতি যুদ্ধাপরাধীমুক্ত হবে, সাফসুতরো হয়ে নবউদ্যমে জাতি দ্রুত আধুনিক বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষিত হয়ে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। তা তো হয়ইনি, বরং জাতি ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা হত্যার পর যাত্রা শুরু করেছিল উল্টোপথেই! কেউ কি কোনদিন ভাবতে পেরেছিল, যুদ্ধাপরাধীরা ধনে-সম্পদে ক্ষমতায় যে শুধু বৃদ্ধি পাবে তা নয়, তারা জনসংখ্যায়ও বৃদ্ধি পেল কেন? কই, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে তো যুদ্ধাপরাধীদের তৈরি কোন রাজনৈতিক দল নেই! তাদের স্ত্রী-সন্তানরা তো তাদের পিতাদের নির্দোষÑ নিরপরাধ দাবি করে না! এ দেশে যুদ্ধাপরাধী সাঈদী বিবাহিত অবস্থায় একজন হিন্দু নারীকে তিন-চার মাস নিজ বাড়িতে বন্দী রেখে নিয়মিত ধর্ষণ করেছিল! সেই খুনী-ধর্ষককে মৌলানা মানে যারা, তাদের কি মানুষ বা মুসলিম বলা যায়? তাদেরও কি অপরাধীর সমর্থক হিসেবে দণ্ডিত হওয়ার কথা নয়? আবার যুদ্ধাপরাধী খুনী কসাই কাদের মোল্লা কারও কারও কাছে হয়ে উঠল ’শহীদ’ কাদের মোল্লা! স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ, শহীদের পরিবারের তরুণরা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিবিদরা, প্রশাসন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই অন্যায়টি সংশোধন করবেনÑ এটিই কাক্সিক্ষত। শুধু তাই নয়, এদের ’৭১-এর পর অর্জিত সব সম্পদ বাজেয়াফত হতে হবে এবং দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবার অথবা রাষ্ট্র এসব সম্পদের মালিক হবেÑ এমন আইন প্রণয়ন সমাজদেহ থেকে যুদ্ধাপরাধীর কালো জন্মবীজ উৎপাটনের জন্য প্রয়োজন। বর্তমানে একদিকে মুক্তিযুদ্ধপন্থী সরকার জাতির দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে, অপরদিকে জাতি দেখছে জ্ঞান-বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষিত জঙ্গী, ধর্মান্ধ গোঁড়া খুনী-খুনের পরিকল্পক ও বাস্তবায়নকারীদের উত্থান! কোথায়? বর্তমান যুগে বুয়েটে, বিশ্ববিদ্যালয়ে! পশ্চিমারা পৃথিবী, মহাজগৎ সৃষ্টি, মহাবিশ্বের কোন গ্রহ-উপগ্রহে পৃথিবীর মতো প্রাণের বসবাসযোগ্য পরিবেশ আছে কিনা ইত্যাদি রহস্য উদ্ঘাটনে অব্যাহতভাবে গবেষণা করে চলেছে। সেখানে বাংলাদেশের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটে জন্ম নিয়েছে প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধির মানুষের হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী সমর্থক জঙ্গী শিক্ষক ও তাদের অনুসারী ছাত্রদল! এরচেয়ে লজ্জাকর, অবমাননাকর বিষয় বাঙালী জাতির জন্য আর কিছু কি হতে পারে? আমাদের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাদাতারা হয়ে উঠেছে প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ মেধাবী তরুণদের খুনী ও খুনের প্ররোচনাদানকারী! নিহত প্রগতিশীল ব্লগার অভিজিত তো বুয়েটেরই ছাত্র ও শিক্ষক ছিল! তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে ‘চায়ের দাওয়াত’ দানকারী বুয়েট শিক্ষক, অভিজিতের অচেনা সেখানে যারা উপস্থিত ছিল আর যারা দাওয়াত পায়নি বলেছেÑ সবার সঙ্গে, সবাইকে মুখোমুখি করে পুলিশ কি এ হত্যার তদন্ত কাজটি করেছে? অথচ আজ অভিজিত হত্যার দু’মাস পার হওয়ার পর কেন আকস্মিকভাবে আল কায়েদা অভিজিতসহ আগে নিহত ব্লগারদের হত্যার দায় নিতে এগিয়ে এলো? হত্যার দায় তো আনসারুল্লাহ বাংলাটিম সঙ্গে সঙ্গেই স্বীকার করেছিল! এতদিন পর যখন পুরো দেশকে গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানানো হয়েছেÑ অভিজিতকে বইমেলায় দেয়া ‘চায়ের দাওয়াত’কে কেন্দ্র করে একটি খুনী-জঙ্গীচক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে উপমহাদেশীয় আল কায়েদার ব্লগার হত্যার দাবিটিকে তাদের জন্য ‘স্ট্র্যাটেজিক মিথ্যাচার’ বলেই ধারণা করা যায়। এর পেছনে কিছু যুক্তিও রয়েছে, যেমন- ০১. খালেদা কর্তৃক আগুন-সন্ত্রাস পরিচালনার সময় আইএস যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক-সিরিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছিল, তখন নাটকীয়ভাবে আইএস প্রধান বাগদাদী একটি ভিডিওবার্তায় জানিয়েছিল যে, উপমহাদেশে আইএসের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে! ০২. আল কায়েদা আইএসের অনেক তৎপরতা সমর্থন করেনি। এ সংস্থাটি এখন আইএসের মতো এক প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বা ধর্মীয় জিহাদী ইসলামের নেতৃত্ব যাতে আইএসের হাতে চলে না যায়, সেজন্য আইএসকে একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া সাম্প্রতিককালে আল কায়েদার জন্য জরুরী হয়ে পড়েছিল বলে মনে হয়! এই প্রেক্ষাপটে জাওয়াহিরির বাংলাদেশের ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রগতিশীল, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ তরুণদের হত্যার দাবিটি কৌশলগত লড়াই হিসেবে করা হয়েছে বলে মনে হয়! কারণ একই ক্ষেত্রে, অর্থাৎ ইসলামপ্রধান দেশে ইসলাম রক্ষায় দুই জঙ্গীগোষ্ঠীর নেতৃত্বের লড়াই, মর্যাদার লড়াই, অস্তিত্বের লড়াইয়ের শুরু হবে না, তা বলা যাবে না। বরং এটি ঘটাই বেশি সম্ভব। এ যেন বাঘ-সিংহের শিকারের ওপর নেকড়ের দাবি! বর্তমানে চলমান বর্বর-হিংস্র যুদ্ধে আইএসের কাছে আল কায়েদা প্রেস্টিজ হারানোর শঙ্কায় ভুগছে! তারা ‘প্রেস্টিজ’ রক্ষার একটি ইস্যু খুঁজবে, এ তো বলা বাহুল্য! ০৩. তাছাড়াও আল কায়েদার জন্ম হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত বাহিনীকে ইসলাম রক্ষার লক্ষ্যে মুসলিমপ্রধান আফগানিস্তান থেকে হটানোর এক দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু জঙ্গী, জিহাদী জোশে উদ্দীপ্ত নানা দেশ থেকে সংগৃহীত অনিয়মিত যোদ্ধাবাহিনীর লড়াইয়ের মধ্যে। তাদের শেখানো হয়েছিলÑ ইসলামের প্রধান শত্রু সাম্যনীতির প্রবক্তা সমাজতন্ত্র এবং সোভিয়েত রাশিয়া! অথচ ইসলামই সাম্যের ধর্ম! সুতরাং তাদের যুদ্ধ ও সমাজতান্ত্রিক আফগান সরকার ও রাশিয়ান সেনাদের বিরুদ্ধে, পুঁজিবাদী অস্ত্র ব্যবসায়ী পশ্চিমের পক্ষে! বর্তমানে সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। ইয়েমেন, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার শক্তিশালী সরকার উচ্ছেদ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে উস্কে দেয়া হয়েছে প্রাচীন শিয়া, সুন্নী, কুর্দীতে বিভক্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। স্থানীয় আরবদের প্রাচীন বিভিন্ন উপজাতিতে উপজাতিতে চলে আসা সুপ্ত নেতৃত্বের আকাক্সক্ষাও এ সুযোগে জেগে উঠেছে! এই নতুন ক্ষেত্রেজীর্ণ আল কায়েদাকে ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করে পুঁজিবাদী পশ্চিমা শক্তি নতুন অর্থ-সম্পদ লোভী বর্বরতম অদৃষ্টপূর্ব দল আইএসের জন্ম দেয়া হয়েছে, যারা নব্য নাজিদের মতোই অর্থ-সম্পদ অর্জন ও মানুষের প্রাণ হরণে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে! এরা ইসলামের নামে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন, ইসলামপূর্ব আসিরীয়, সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় সভ্যতার বিস্ময়কর নিদর্শন, স্থাপনাসমূহ ধ্বংস করে দিচ্ছে! এভাবে এদের ব্যবহার করে ইসলাম ও মুসলিমদের বর্বর, খুনী, সংস্কৃতি ও সভ্যতাবিরোধী হিসেবে পুরো বিশ্বে উপস্থাপন করা হচ্ছে! অপরদিকে দলে দলে মূর্খ, বুদ্ধি বোধ বিবেচনাহীন মুসলিমরা বিভিন্ন দেশ থেকে আইএসে বর্বর খুনী হতে নাম লেখাচ্ছে! শেষ পর্যন্ত মানবিক প্রগতিশীল মুসলিমদের কাছেই তারা ঘৃণ্য, পরিত্যাজ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ০৪. সুতরাং বর্তমান এই ইসলামী লড়াইয়ে আল কায়েদার ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই সম্ভবত বাংলাদেশের প্রগতিশীল ব্লগারদের হত্যার দায়ের মতো একটি ‘বাসি’ হয়ে যাওয়া দাবি তাদের ‘অর্জন’ হিসেবে দেখাতে হচ্ছে! এটি আল কায়েদার দুর্বল অবস্থানের প্রমাণ মাত্র। তবে স্মরণ রাখতে হবেÑ বাংলাদেশের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল ভিত হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ, উদার, নানা মত ও নানা পথের সমাহারে গড়ে ওঠা সব ধর্মের মিলন-মিশ্রণের সমন্বয় সাধন। আরও স্মরণ রাখতে হবে, বাঙালীর যুদ্ধের, লড়াইয়ের প্রবাদপুরুষ ঐতিহাসিক মুক্তিযোদ্ধা তো মোহন লাল আর মীর মদন, যুদ্ধাপরাধী সিরাজ হত্যাকারী তো মীরজাফর, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ! ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তো যুদ্ধ করেছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান, আদিবাসী নারী-পুরুষ একযোগে, হাতে হাত রেখে! এ যুদ্ধের দুই প্রবাদপ্রতিম নেতা-নেত্রী তো ইন্দিরা গান্ধী আর শেখ মুজিব! আজ এই মুহূর্তে, ’৪৭-এর বিশাল অন্যায় দেশ বিভাগের শত শত ক্ষতের একটি, শতাধিক ‘ছিটমহল’বাসীর নাগরিকত্বহীন, দেশহীন জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল ভারতের মনমোহন, নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের শেখ হাসিনার মানবতার প্রতি দৃঢ় অবস্থানের কারণে! সুভাষ বসুর যোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালী সংস্কৃতির এই মূল ভিতটিকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চার ভিত্তির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে স্থান দিয়েছিলেন! সুতরাং বাঙালী হবে ধর্মনিরপেক্ষ, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক, বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, বাঙালী সংস্কৃতি চর্চায়-অনুশীলনে এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষায় ব্রতী দেশপ্রেমিক, যারা ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী, ’৭৫-এর খুনী এবং বিগত চার দশকে বেড়ে ওঠা শিক্ষিত যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীদের মিত্র ও তাদের প্রগতিশীল ব্লগার হত্যার খুনী ও খুনের পরিকল্পকদের তীব্রভাবে ঘৃণা করবে! এ প্রসঙ্গে বলতে হয়Ñ বুয়েটে জঙ্গী দমন যখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে, তখন বুয়েটের যুদ্ধাপরাধীদের মিত্র শিক্ষককের দণ্ড না হয়ে দণ্ডিত হলো ঐ যুদ্ধাপরাধী-প্রেমী শিক্ষকের মন্তব্যের প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থীরা! কেন? বুয়েট দীর্ঘকাল যাবত জঙ্গী উৎপাদন করে চলেছেÑ এ তথ্য কখনও গোপন ছিল না! তবে এর সর্বোচ্চ প্রমাণ প্রকাশ হয় ২০১৩-তে, উপাচার্য অপসারণের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধপন্থী সরকার পতন আন্দোলনে, অবশ্যই খালেদার নির্দেশে! এখন সময় এসেছে বাঙালী সংস্কৃতির সুরক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সুরক্ষায় প্রকৃত রাষ্ট্রবিরোধীদের রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতার অপরাধের বিচার করা ও দণ্ড প্রদান করা। স্মরণ রাখতে হবে, ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত সত্তরের বেশি ট্রাইব্যুনালে প্রথমে ৩৭ হাজার, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীর চলমান বিচার প্রক্রিয়াটি ’৭৬ সালে জিয়া কর্তৃক বন্ধ হলে সব যুদ্ধাপরাধী মুক্তিলাভ করে এবং তারা দীর্ঘ ৪০ বছরে ধনে, জনে, ক্ষমতায় আজ বিশাল আকার ধারণ করেছে! ’৭৩ সালের বিচার যদি ’৭৬, ’৭৭-এ সম্পন্ন হতো, তবে আজ এই বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিতরা অশিক্ষিত, মূর্খ, অন্ধ, মোল্লা-মৌলবী, তালেবান হয়ে সারা দেশে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা করার সুযোগ লাভ করত না! বুয়েট হোক, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদ্রাসা হোক, এসব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত অন্ধ মোল্লা-মৌলবীদের দ্রুত বিচার করে দণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা করলেই একমাত্র আমাদের নিহত মুক্তমনা, উদার তরুণদের আত্মা শান্তি পাবে। এছাড়া কিন্তু দেশকে জঙ্গীমুক্ত করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে জঙ্গীবাদ বিস্তারে সক্রিয় জামায়াত-শিবিরসহ সব জিহাদী দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে, যার কোন বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পড়া মোল্লাদের জানাচ্ছিÑ শৈশবে যখন কোরান ও আরবী পড়া শেখার দরকার হয় তখন আমার বাবা বলেছিলেন, ‘অর্ধশিক্ষিত, মূর্খ মোল্লা-মৌলবীরা এ বাড়িতে আসবে না, আমিই শেখাব।’ তিনিই আমাদের আরবী পড়া শিখিয়েছিলেন। তোমরা সে যুগের প্রাচীন ব্যক্তিটির কাছে বুদ্ধি, বোধ, বিবেচনা ও মানবিকতায় পুরোপুরি হেরে গেলে! এ আমরা চাইনি। অথচ চোখের সামনে শিক্ষা যে তৃতীয় চক্ষুটি দেয়, তোমরা সেটি তো গ্রহণ করইনি, বরং চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে থাকলে! হায় আফসোস! লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×