ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে হবে নাছিরকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ মে ২০১৫

দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে হবে নাছিরকে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকেন্দ্রিক প্রকাশ্য যে গ্রুপিং মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাপা থাকলেও তার কোন স্থায়ী অবসান ঘটেনি। নেতাকেন্দ্রিক যে গ্রুপিংয়ের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতার আধিপত্য। দেশের স্বাধীনতার আগে থেকে জহুর আহমদ চৌধুরী ও এম এ আজিজ কেন্দ্রিক নগর আওয়ামী লীগের যে গ্রুপিংয়ের জন্ম হয়েছিল ঐ নেতাদের তিরোধানের পর নতুন নেতাদের নিয়ে সৃষ্ট গ্রুপিং চলেই আসছে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মরহুম মন্ত্রী এম এ মান্নান ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দলীয় রাজনীতিতে একক আধিপত্য থাকলেও ভেতরে ভেতরে গ্রুপিংয়ের কমতি ছিল না। চলমান দলীয় রাজনীতির এক পর্যায়ে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের গ্রুপিং ছিল তুঙ্গে। মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী এমপি নগর রাজনীতির কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও নেতাকর্মী মহলে তার আধিপত্য ছিল। বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের ৫ নেতার নেতৃত্বে গ্রুপিং দৃশ্যমান। মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ সময়জুড়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতির পদে আসীন হয়েছেন। মন্ত্রী এম এ মান্নানের মৃত্যুর পর তিনি সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতির পদে মনোনীত হন। মাঝপথে ১৭ বছর ছিলেন মেয়র। এ সুবাধে দলীয় রাজনীতিতে তার একচেটিয়া আধিপত্য বিরাজ করছিল। পরবর্তীতে দলের সহসভাপতি সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমানে সহসভাপতি ডাঃ আফছারুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং কোষাধ্যক্ষ ও চউক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে নগর রাজনীতিতে আবির্ভূত হন। তবে আ জ ম নাছির উদ্দিন শুরু থেকে তার নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ নিয়ে কাজ করে বর্তমানে নগর পিতার আসনে আসীন হয়েছেন গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে। সোমবার নগর আওয়ামী লীগের পক্ষে তাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরী আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করবেন এবং ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটিগুলোকে ভেঙ্গে দিয়ে তৃণমূলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনবেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছেন, দলীয় রাজনীতিতে যারা সততা, বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তারাই দলে আসীন হবেন। আর যারা পদ আঁকড়ে থেকে দলীয় কর্মকা- সঠিকভাবে পালন করবেন না, শুধু নিজের আখের গোছান তারা সরে যাবেন। তিনি এও বলেন, দলের বর্তমান নগর সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, পরীক্ষিত এবং কর্মী মহলে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদেরই বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেয়া হবে। একদিকে সাধারণ সম্পাদক অন্যদিকে নবনির্বাচিত মেয়র হওয়ার পর আ জ ম নাছির উদ্দিনের এ ঘোষণা চট্টগ্রামে দলীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ যে সৃষ্টি করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দলীয় সূত্রে নতুন মেয়রের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য আসছে তা নিয়ে অনেকে আশ্বস্ত আবার অনেকে শঙ্কিত। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আ জ ম নাছির উদ্দিন ইতোমধ্যে শপথ গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ফিরে এসে একের পর এক সংবর্ধিত হচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে। এসব সংবর্ধনায় তিনি চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন মেগাসিটি হিসেবে পরিণত করার ঘোষণা যেমন দিচ্ছেন তেমনি দলের নগর রাজনীতিতেও মেরুকরণের মাধ্যমে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত নেতাদের বিভিন্ন সূত্রে সোমবার জানানো হয়, আ জ ম নাছির বর্তমানে দলীয়ভাবে যেমন ক্ষমতার অধিকারী তেমনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তা আরেক ধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের সভাপতি আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছাড়া আর অন্য কোন নেতা নেই যে, আগামীতে নাছিরের কর্মকা-ে চ্যালেঞ্জ বা বিরোধিতা করতে পারেন। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আ জ ম নাছির উভয়েই প্রকাশ্যে এক হয়ে দলীয় রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, যা চট্টগ্রামে দলীয় রাজনীতির জন্য আশাব্যঞ্জ। কিন্তু তাদের এ ঘোষণা শতভাগ বাস্তবায়ন ঘটবে কিনা তা দেখতে আগামী দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, নুরুল ইসলাম বিএসসি কোতোয়ালি আসনে দলের টিকেট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন তখন তিনি নিজস্ব একটি গ্রুপ সৃষ্টি করেন। আর যুগ্ম সম্পাদক পদে থেকে ডাঃ আফছারুল আমিন যখন এমপি হয়ে মন্ত্রিত্ব লাভ করেন তখন তার নেতৃত্বে সৃষ্টি হয় আরেক গ্রুপ। এর পাশাপাশি দলের কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম যখন চউক চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন, তিনি তখন নিজস্ব একটি বলয় সৃষ্টি করে গ্রুপিংয়ের জন্ম দেন। এই ৫ জনের ইশারা ইঙ্গিতে এবং গ্রুপিং নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ চলে আসছে গত প্রায় ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে। গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কড়া নির্দেশে গ্রুপিং নেতৃত্বদানকারী এসব নেতারা এক মঞ্চে আসতে বাধ্য হলেও ভেতরে ভেতরে তাদের একক আধিপত্য বিস্তারের যে রাজনৈতিক অভিলাষ তার অবসান ঘটেনি।
×