ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবর্ধনার জবাবে ঢাকার দুই মেয়র

ফুটপাথমুক্ত করার সঙ্গে ভাসমান ব্যবসায়ীদের বিষয়টি ভাবা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ মে ২০১৫

ফুটপাথমুক্ত করার সঙ্গে ভাসমান ব্যবসায়ীদের বিষয়টি ভাবা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠন করে রাজধানী ঢাকার সব সমস্যা সমাধান করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। সত্বরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমন্বিত কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন দুই নগরপিতা। সোমবার রাজধানীর আইডিইবি ভবনে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিশ্রুতি দেন নবনির্বাচিত দুই মেয়র। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত দুই মেয়রকে সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানো, যানজট দূর করা, ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করা, ব্যবসায়ীদের জন্য হেল্পলাইন চালু, কাঁচাবাজারগুলো পরিচ্ছন্ন করাসহ একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া ঢাকা সিটির দুই মেয়রের কাছে তুলে ধরেন ব্যবসায়ী নেতারা। এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এফবিসিসি-আইয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে দুই মেয়রকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় দুই মেয়র ছাড়াও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাবেক সভাপতি মহাম্মদ আলী, বর্তমান পরিচালক আবদুল হক, আবু আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সেলিমা আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নতুন দুই মেয়র এই শহরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবেন। এজন্য চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের ‘সিটি করাপশন’ খ্যাতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফুটপাথ দখলমুক্ত এবং মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া পার্কগুলো পুনরুদ্ধার অথবা নতুন পার্ক স্থাপন করতে হবে। এ সময় ব্যবসায়ী নেতারা ব্যবসায়ীদের জন্য সিটি কর্পোরেশনে হেল্পলাইন স্থাপন, সম্প্রতি ট্রেড লাইসেন্স ফি যে হারে বাড়ানো হয়েছে তা আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া, এফবিসিসিআইয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধন বুথ স্থাপন, খাল-বিল দখলমুক্ত করে পরিবেশ রক্ষা, সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন কাঁচাবাজারগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা ও পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান। এসব দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আপনাদের আমরা হতাশ করব না। এই শহরকে তিলোত্তমা করা যাবে না, তবে সুন্দরী করা যাবে। তিনি বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য সমগ্র ঢাকায় সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আগামী দুই বছরে আমরা বর্জ্য সমস্যার সমাধান করব, আর তিন বছরে এটিকে একটি গ্রিন সিটিতে রূপান্তর করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে চাই এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য, যে মানুষটি ফুটপাথে কাজ করে এটি তার জীবনের রোজগার। তাই আগে তার জন্য একটি ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি এটা সম্ভব। যানজট সমস্যার বিষয়ে আনিসুল বলেন, যানজট একটি অবকাঠামোগত সমস্যা। চাইলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। তাছাড়া আমরা এক্সপার্ট না। তারপরও আমরা সবার সঙ্গে বৈঠক করব। আমরা আশাবাদী আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারব। পাঁচ বছরের জন্য উত্তর ও দক্ষিণের জন্য আমরা আমাদের সকল পরিশ্রম ও সততা নিয়োগ করব। এ সময় তিনি সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করতে কর প্রদান করে সহায়তার দাবি জানান। দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের প্রিয় এই ঢাকার অনেক সমস্যা রয়েছে। একজন ভুক্তভোগী হিসেবে আমি জানি এই শহরে সমস্যা রয়েছে। আমি নির্বাচনের আগে যেসব কথা বলেছি। যেসব স্বপ্ন দেখিয়েছি তার কিছুই অলিক নয়। আপনারা আমাদের পাশে থাকলে সবকিছুই আমরা বাস্তবায়ন করব। ঢাকাকে মানুষের বাসযোগ্য করব। খোকন আরও বলেন, ঢাকার সমস্যা সমাধানে আমরা সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠন করব। যার প্রধান হবেন মেয়র। এই সমন্বিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরা দুই মেয়র একত্রে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমন্বিত কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব নিয়ে যাব। আশা করি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ করতে পারলে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণে ১৪৩ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য সকলকে ফ্রি ব্যাগ সরবরাহ করা হবে। দক্ষিণের ল্যাম্পপোস্টগুলোর মধ্যে মাত্র ১০ ভাগের মতো আলো জ্বলে। শব-ই-বরাতের রাত থেকে ঢাকা দক্ষিণে শতভাগ ল্যাম্পপোস্টের লাইট জ্বলবে। যদি কোথাও না জ্বলে আপনারা আমাদের বলবেন আমরা সমস্যার সমাধান করব। শুধু ব্যবসায়ী না সর্বস্তরের মানুষের জন্য আমরা হেল্পডেক্স চালু করা হবে উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, আপনারা যখন যে সমস্যার কথা বলবেন, আমরা তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। সিটি কর্পোরেশনের অফিস আগে যেভাবে চলেছে সেভাবে চলবে না। অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনে নতুনত্ব আসবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে অনেক জমি রয়েছে উল্লেখ করে খোকন বলেন, এখানে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। আপনারা দক্ষিণে বিনিয়োগ করেন। আপনারা নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে ফিরে যেতে পারবেন। আপনারা ফ্লাইওভার, বড় বড় প্রকল্প, বড় বড় ফ্লাট করতে পারেন, শপিংমল করতে পারেন। তিনি বলেন, বাইরের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা বিনিয়োগে আসেন। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি অন্যস্থানে বিনিয়োগ করে আপনারা যতটুকু রিটার্ন পাবেন দক্ষিণে বিনিয়োগ করে তার থেকে বেশি রিটার্ন পাবেন। এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা নির্বাচনের আগে জনসাধারণকে যে সব কথা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করলে ঢাকাবাসীর কোন কিছুই অপূর্ণ থাকবে না। এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরের কোন বাজারে শাক-সবজি পরিষ্কার করার জন্য একটিও পানির কল নেই। ব্যবসায়ীরা নর্দমার পানিতে শাক-সবজি পরিষ্কার করেন। এ অবস্থা বন্ধ করতে আপনারা (দুই মেয়র) প্রতিটি বাজারে একটি করে পরিষ্কার পানির কলের ব্যবস্থা করে দেন।
×