ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেট ভাবনা ॥ এবারেই বোঝা যাবে

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী- বছরে দাঁড়াবে ৭ লাখ কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১২ মে ২০১৫

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী- বছরে দাঁড়াবে ৭ লাখ কোটি

এম শাহজাহান ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ কোটি টাকা। এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ শুরু করেছে সরকার। আসন্ন বাজেট ঘোষণায় এর একটি আভাস দেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, উচ্চাভিলাষী নয়, এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত বাজেট। মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে বাড়াতে হবে বাজেটের আকার। ওই সময়ের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাবে। বাড়বে মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ, রেমিটেন্স, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রফতানি। এছাড়া অবকাঠোমো উন্নয়ন বিশেষ করে বিদ্যুত ও গ্যাসের যে সঙ্কট রয়েছে তা দূর হবে। দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। সর্বোপরি জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি অর্জনে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বা শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতা অর্জিত হবে। ভিশন-২১ সামনে রেখে এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে আসন্ন বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছেÑসপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ পূরণে এগিয়ে যাওয়া, চলমান রাজস্ব বৃদ্ধি ও মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। সেই সঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে বাজেটের আকার ৭ কোটি টাকা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। সম্প্রতি একটি সেমিনারে বাজেটের আগাম ধারণা দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বর্তমান সরকার ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই বাজেটের আকার ৭ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাবে। এ লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটেও কিছুটা দিকনির্দেশনা থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্বের ৫৭টি দেশের চেয়ে বাংলাদেশ আয়তন ও সম্পদে বড়। ৬৪টি জেলাকে ৬৪টি দেশে পরিণত করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক সংস্কার। ১৬ কোটির মধ্যে কর প্রদান করছেন মাত্র ১১ লাখ মানুষ। কিন্তু উপার্জনক্ষম সব ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা গেলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এসব সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই আগামীতে ৭ লাখ কোটি টাকা বাজেট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমিই সংসদে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। যা পর্যায়ক্রমে ’২১ সাল পর্যন্ত ১০ শতাংশে নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে সরকার। এ প্রসঙ্গে অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আস্থা বাড়ানো ও বিজনেস এনভায়রনমেন্ট নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে। বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে চীন, জাপান ও কোরিয়ার উদ্যোক্তাদের ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে কিছু জমি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইপিজেডগুলোতেও তাদের প্লট ও শেড বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে আরও ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন যাতে ব্যবসাবান্ধব হয় সে বিষয়ে কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোপূর্বে ব্যবসায়ীদের মতামত নেয়া হয়েছে। আশা করছি, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করেই আইনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এদিকে, আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকেও সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দাতাগোষ্ঠীর সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য অনুরোধ করা হবে। ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়নে পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে বিপুল পরিমাণ বিদেশী অর্থের প্রয়োজন হবে তার একটি অংশ চাওয়া হবে দাতাদের কাছ থেকে। একইসঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশী বিনিয়োগ ও রফতানি বৃদ্ধির জন্য দাতাদের কাছে নীতিগত সহায়তা চাওয়া হবে। জানা গেছে, সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মধ্য আয়ের দেশ হতে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর অন্তত ৩০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। এই সহায়তা আরও বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পাঁচ বছরের মাথায় বাজেটের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। আর গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। নতুন বাজেটের দর্শন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) ফ্লাইওভারসহ যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের সিঁড়িও হবে এবারের বাজেট। এই সরকারের মেয়াদের আগেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেটা ২০১৩ সালেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। দারিদ্র্যের হার এখন ২০ শতাংশের নিচে। সে কারণেই আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট হবে সরকারের ‘স্বপ্ন’ পূরণেরও বাজেট। বাড়ছে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ॥ ভিশন-২১ সামনে রেখে সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে। আসছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আগামী অর্থবছরের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। সূত্র মতে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬ থেকে ২০২০ সাল) জন্য অনুমোদিত রাজস্ব প্রাক্কলন অনুযায়ীই ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। এনবিআর আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, আয়কর বা প্রত্যক্ষ কর এবং অন্যান্য কর ও ভ্রমণ কর থেকে উল্লেখিত রাজস্ব আদায় করবে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ২ লাখ ৫০ হাজার ৬০২ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আহরণের জন্য এনবিআরকে বড় লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় সরকার। সেক্ষেত্রে ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয় এনবিআরকে। তার মধ্যে মূসকে ৫৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, আয়করে ৫৬ হাজার ৫৮০ কোটি, শুল্কে ৩৫ হাজার ৭২০ কোটি ও অন্যান্য কর বাবদ ৯২০ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে বছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সব খাত মিলে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮০ হাজার ৪৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
×