ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

শুরুটা পিতার, কন্যা করেছে শেষ/সার্থক হোক সীমান্ত চুক্তি, ভারত-বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ মে ২০১৫

শুরুটা পিতার, কন্যা করেছে শেষ/সার্থক হোক সীমান্ত চুক্তি, ভারত-বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ না জানিয়ে ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে পিতার সময় সীমান্ত চুক্তি আর কন্যার সময় তা বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর বন্দনায় মুখর ছিলেন। এ সময় সমুদ্র বিজয়, ইন্দো-বাংলা সীমান্ত চুক্তি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিন বাঙালী কন্যার বিজয়সহ সরকারের বিভিন্ন সাফল্য নিয়ে আলোচনা হয়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি ভারতের লোকসভায় অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নিজের খুশি হওয়ার কথা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এক মন্ত্রী বলেন, এতদিন পর খালেদা জিয়ার মনে হয়েছে ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানোর। অথচ কাজ করেছি আমরা, কিন্তু তিনি আমাদের সরকারকে কোন ধন্যবাদ জানাননি। মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনার শুরুতেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। পরে মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান একটি স্বরচিত কবিতাও পাঠ করেন। কবিতায় তিনি বলেন, শুরুটা পিতার করা/কন্যা করেছে শেষ/সার্থক হোক সীমান্ত চুক্তি/ ভারত-বাংলাদেশ/ ছিটমহলের মানুষের মাঝে বইছে আনন্দ বন্যা/অভিনন্দন দীর্ঘায়ু হে বঙ্গবন্ধু কন্যা। প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত চুক্তি সম্পর্কে বলেন, না বুঝেই বিএনপি বলেছিল- ইন্দিরা-মুজিব গোলামি চুক্তি। কিন্তু আজ সেই চুক্তির আলোকেই সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হলো। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত সম্পর্ক হওয়ার কারণেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ-নেপাল ট্রানজিট চুক্তিটাও হয়েছে বাংলাদেশের কারণেই। ছিটমহলবাসীর নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কারণে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরায় গিয়ে সে রাজ্যের সরকার ও পার্লামেন্টকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য মন্ত্রিসভার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের একটি টিম পাঠানোর প্রস্তাবও করা হয় এ বৈঠকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে সীমান্ত চুক্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিন বাঙালী কন্যার বিজয় নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় মন্ত্রিসভার এক সিনিয়র সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের জন্য অনেক সাফল্য বয়ে আনে। আগের আমলে ফারাক্কা চুক্তি করা হয়। এমনকি দেশের মধ্যেও পার্বত্য শান্তি চুক্তি ছিল উল্লেখ যোগ্য। আগের মেয়াদে সমুদ্র বিজয় হয়েছে। ভারত, মিয়ানমারের কাছ থেকে মামলার মাধ্যমে এতো বড় সাফল্য অর্জন করলেও প্রতিবেশী কোন দেশের সঙ্গে এ নিয়ে সম্পর্কের কোন অবনতি হয়নি। এটি ছিল সরকারের একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। অথচ বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কোন ঘাটতি হয়নি। তিনি বলেন, সীমান্তচুক্তি ভারতের লোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। কেউ এতে কোন বিরোধিতা করেনি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কেও উন্নতি হয়েছে। বিগত আমলে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিলে তখনকার বিরোধীরা এর বিরোধিতা শুরু করে। এমনকি তারা বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে, যাতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু করতে সহযোগিতা না করে। কিন্তু সব শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের। অবশেষে নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সহসের কারণে আমাদের মতো দেশ এতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশের সরকার একটি গোষ্ঠীকে নিয়ে বেশি ভাবে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সাধারণ মানুষের উন্নতির কথা ভাবে না। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখেছি তিনি দেশের ধনী-দরিদ্র প্রতিটি লোকের কথা ভাবেন। দেশের সাধারণ মানুষ যাতে দারিদ্র্যমুক্ত হয় সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সব সময় নেক দৃষ্টি রয়েছে। তিনি প্রতিটি স্তরের লোকের জন্য কর্মসৃজন করছেন। দেশ থেকে মঙ্গা দূর করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য এতো উন্নতি অন্য কোন সরকার প্রধানকে করতে দেখি না। তিনি বলেন, আগামী ২০১৮ সালে দেশ দারিদ্র্য বিমোচন হবে। দেশের আর কেউ না খেয়ে থাকবে না। এখনই অনেক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামগঞ্জের মানুষ আর অভাবে নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ব্যাপক বিশ্ব মন্দার মধ্যেও দেশের মানুষ কোন কিছু বুঝতে পারেনি। ইউরোপসহ উন্নত অনেক দেশ ব্যয় কমাতে কৃচ্ছ্র সাধন করলেও বাংলাদেশে এর কোন আঁচ লাগতে দেয়নি হাসিনা সরকার। এ পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি অবসরে যাওয়ার পর ঘরে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যখন মন্ত্রী হিসেবে আমার ডাক পড়ল, তখন অনেক ভেবেছি। পরে মন্ত্রী হিসেবে শপথও নেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করে আমার মনে হয়েছে, আমি কোন ভুল করিনি। আমি সঠিক ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেছি। এটি আমার সৌভাগ্য। তিনি আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ না করলে হয়তো তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতাম না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছে। এতে সব চেয়ে বড় অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, টিউলিপসহ ব্রিটেনে বিজয়ী তিন বাঙালী কন্যাকে দেশে এনে সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করবে সরকার। যে ব্রিটিশ গোটা বিশ্ব শাসন করেছে, সেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিন বাঙালী কন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটি বাঙালীর গর্বের বিষয়।
×