ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে ধরা পড়েছে তিন জেএমবি জঙ্গী

বাংলাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে আইএস

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১২ মে ২০১৫

বাংলাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে আইএস

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের ১১ জেএমবি জঙ্গী পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পাকিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে সেখানে বাংলাদেশের চার জঙ্গী মারা গেছে বন্দুকযুদ্ধে। তিন জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। অপর চার জঙ্গী আইএসে যোগ দেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে চলে গেছে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গী সংগ্রহ করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেয়ার পর কেউ বাংলাদেশে ফিরে আসছে আবার কেউবা আইএস জঙ্গী সংগঠনে যোগ দেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাচ্ছে। পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসে ধরা পড়া তিন জঙ্গীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে যে চার জঙ্গী মারা গেছে তার মধ্যে দুই জঙ্গির নাম জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। এই দুই জঙ্গীর নাম হচ্ছেÑ সাইজুদ্দিন ওরফে কারগিল ও শামিম। অপর নিহত দুই জঙ্গীর নাম সংগ্রহের চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের যে তিন জঙ্গী পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে ধরা পড়েছে তারা হচ্ছেÑ শাখাওয়াতুল কবীর, আনোয়ার হোসেন বাতেন ও নজরুল ইসলাম। এই তিন জঙ্গীর মধ্যে শাখাওয়াতুল কবীর জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, তার ভায়রাভাই হচ্ছে সাইজুদ্দিন ওরফে কারগিল, যিনি পাকিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। ধরা পড়া অপর জঙ্গী আনোয়ার হোসেন বাতেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছেÑ শামিম হচ্ছেন তার ভগ্নিপতি, যিনি পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসার সময় বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আইএস সন্দেহে দুই জেএমবির জঙ্গীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতার হওয়া ২ জঙ্গী হচ্ছেÑ মোতাকাব্বির ওরফে সনি ও আশরাফুল ওরফে রনি। তারা জেএমবির জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্য। তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। আদালতের রিমান্ডের আবেদনে জানানো হয়, এই দুইজন জেএমবি গোষ্ঠীর জঙ্গী সদস্য। ল্যাপটপের মাধ্যমে তারা আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহ করার সময় ধরা পড়ে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক একেএম কামরুল আহসান জানান, মোতাকাব্বির ওরফে সনি ও আশরাফুল ওরফে রনি দুই জঙ্গী সদস্য গ্রেফতার হয় রাজশাহীর নাচোলে। তাদের শ্যোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। যেহেতু এর আগে গোয়েন্দা পুলিশ শাখাওয়াতুল কবীর, আনোয়ার হোসেন বাতেন ও নজরুল ইসলামকে ঢাকায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, সেজন্য রাজশাহীর নাচোলে গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের ঢাকায় এনে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জঙ্গীদের পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন, রকেটলঞ্চার তৈরি থেকে শুরু করে চালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের আগে কলকাতায় জেএমবি রকেটলঞ্চারের পরীক্ষা চালিয়েছে। জেএমবির সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে প্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের চেষ্টা করছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে হামলার টার্গেটে থাকা কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। মানুষবিহীন ড্রোন বা কোয়াড হেলিকপ্টার দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তির ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। ড্রোন দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ তলা উঁচু ভবনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। হেলিকপ্টারের আদলে কাঠ দিয়ে তৈরি কোয়াড হেলিকপ্টারের একটি রেপ্লিকা, ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও উগ্রমতবাদ সংবলিত বইপত্রসহ জঙ্গী সংগঠনটির দুই সদস্য গ্রেফতারের পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিত রায় হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে প্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা বাংলায় যে ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে, তা পাকিস্তান থেকেই। এর আগে আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনটি হত্যার দায় শিকার করে আরবী, উর্দু ও ইংরেজীতে ভিডিও বার্তা প্রচার করে তারা। তিন ভাষায় প্রচারিত ভিডিও বার্তার পাশাপাশি বাংলা অনুবাদজুড়ে দেয়ার ঘটনাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের জঙ্গীরা অবস্থান করছে পাকিস্তানেই। গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখতে পেয়েছেন, এই ভিডিও বার্তা পাকিস্তান থেকে আপলোড করা হয়েছে। বাংলা অনুবাদ প্রচার করার পেছনে বাংলাদেশের কেউ জড়িত থাকতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে পড়ায় তাদের তৎপরতাও সীমিত হয়ে পড়েছে। এর আগে বাংলাদেশের জঙ্গীরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘাঁটি গড়ে তুললেও এখন তারা পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকে থাকতে পারে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসএস আগে থেকেই বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে যে মদদ দিয়ে আসার অভিযোগ আছে সে কারণেও জঙ্গীরা পাকিস্তানকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারে।
×