ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যপ্রাণী রক্ষা ও দর্শনার্থীদের আতঙ্ক থেকে বাঁচাতেই এ উদ্যোগ

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে সেনা স্থাপনা দ্রুত সরানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ মে ২০১৫

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে সেনা স্থাপনা দ্রুত সরানো হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে সরানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর স্থাপনা। পরিত্যক্ত বোমা বিস্ফোরণের সময় শব্দ ও ভূ-কম্পনের সময় পার্কের পশু-পাখিদের জীবন এবং দর্শনার্থীদের আতঙ্ক থেকে রক্ষার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর (তৃতীয় সংশোধিত ) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অনুমোদন পেলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বন অধিদফতর। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন শামসুদ্দিন চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর ২৫ একর ডেমোলিশন গ্রাউন্ড রয়েছে। পরিত্যক্ত বোমা বিস্ফোরণের সময় সেখানে শব্দ ও ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। যা বন্যপ্রাণীর জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ কারণে ২৫ একর জমি অন্যত্র কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গাজীপুরের শালবন ঢাকার অতি নিকটে হওয়ায় দ্রুত শিল্পায়ন, জনসংখ্যার চাপ, পরিবেশ দূষণ ও গোচারণের ফলে শালবনের জীববৈচিত্র্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ভূমি দস্যুতা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, জবর দখল ও শিল্প বর্জ্য নিঃসরণের ফলে এ বনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক সময় শালবনে ৬৩ প্রজাতির গাছপালা ও ২২০ প্রজাতির পণ্যপ্রাণী ছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর রেঞ্জের রাথুরা বনবিটে খ- খ- শাল বনের ১৯৮৭ হেক্টর বনভূমি অসংখ্য স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, উভচর ও পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। মূল প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এ ভূমির ১ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত মোট জমির মধ্যে ৩২৫ দশমিক ১০ হেক্টর ব্যক্তিমালিকাধীন জমি রয়েছে। যার মধ্যে ৮০ দশমিক ৯৭ হেক্টর জমি প্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্পে অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০১০ সালের ১১ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি পাস করা হয়। তখন এর ব্যয় ছিল ৬৩ কোটি ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধি, চারটি থিমেটিক এলাকা যথা, কোর সাফারি পার্ক, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভারসিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক নির্মাণ এবং অতিরিক্ত ৩৫০ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণসহ কিছু নতুন নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পটি মোট ২১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ২০১৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধনী করা হয়। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমির মূল্য বৃদ্ধি, বন্যপ্রাণী ও পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেমোলিশন গ্রাউন্ড সাফারি পার্ক থেকে স্থানান্তরের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি পুনরায় প্রথম সংশোধনের তুলনায় ব্যয় বাড়িয়ে মোট ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরে দ্বিতীয় সংশোধন করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর পরিকল্পনামন্ত্রী এ সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেমোলিশন গ্রাউন্ড পার্কের ভেতর থেকে সরিয়ে বাইরে নিয়ে আসতে জমি অধিগ্রহণ, পার্কিং এরিয়ার জমি অধিগ্রহণ, মাস্টার বাউন্ডারি তৈরি এবং কিছু নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত করে ব্যয় ৩২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরে তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, নতুন করে ৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ (ডেমোলিশন গ্রাউন্ড-২৫ একর, পার্কিং এড়িয়া-৫ একর এবং মাস্টার বাউন্ডারির মধ্যে অবস্থিত ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ১০ একর)। তৃণভোজী প্রাণীর বেষ্টনী সম্প্রসারণ (৮ হাজার আর এম), কলাবাগান ও বাঁশবাগান সৃজন, এপ্রোচ রোড সম্প্রসারণ, মসজিদ নির্মাণ, সুভ্যেনির শপ, ইমু গার্ডেন, সর্প পার্ক নির্মাণ, মদন টাকের ঘর নির্মাণ, ফুটবাস-পাঁচটিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করা হবে।
×