ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরাঞ্চলে সীমান্তজুড়ে রমরমা হুন্ডি ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১০ মে ২০১৫

উত্তরাঞ্চলে সীমান্তজুড়ে রমরমা হুন্ডি ব্যবসা

ডি.এম. তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ আবার শুরু হয়েছে হুন্ডির ব্যবসা রমরমা। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে চলছে হুন্ডি ব্যবসা। উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ৪ থেকে ১০ কোটি, মাসে প্রায় তিন শ’ কোটি টাকা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে। উত্তরের জেলাসংলগ্ন প্রতিটি সীমান্তজুড়ে চলছে এই অবৈধ ও বেআইনী তৎপরতা। জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্ট হুন্ডি কারবারীদের ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। এতদাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থার সদস্য ও কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকও এই অবৈধকাজে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে হুন্ডি কারবারি চক্রের একাধিক সিন্ডিকেটের নাম। তারাই এতদাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের নেটওয়ার্ক দেশের অভ্যন্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বেআইনী আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকদ্রব্য, স্বর্ণ চোরাচালান ও নারী শিশু পাচারকারী চোরাকারবারিদের। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষ পাচার ও সমুদ্রপথে অবৈধভাবে লোক পাঠানোর সঙ্গেও হুন্ডি সিন্ডিকেটের বড় ধরনের দহরম মহরম রয়েছে। এই সিন্ডিকেট প্রায় প্রতি জেলার একাধিক গ্রামে কমিশনভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ করে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নামে নানান ধরনের প্যাকেজ দিয়ে প্রলুব্ধ করছে। ইদানীংকালে বিভিন্ন এনজিও নাম ধারণ করে সেবা নামের আড়ালে মানুষ পাচারের কাজ করছে। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা জানাবার পর তার দাম পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নতুন সংযোজন ভারতীয় জাল রুপীর আমদানি করে প্রতারণা করা। ইদানীংকালে প্রায় সীমান্তে মাঝে মধ্যেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জাল টাকা আটক করছে। ভারতীয় জাল রুপী তুলে দিচ্ছে সীমান্তের ছোট ছোট প্রান্তিক চোরাকারবারিদের হাতে। এ ছাড়াও বেশ কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিকারী একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গেও হুন্ডি কারবারিদের গভীর সংযোগের মাধ্যমেই ব্যাপক হারে আসছে গানপাউডার, বিস্ফোরক, ছোট ছোট সেফ অস্ত্র ও মাদকের চালান। এসবে মূল্য পরিশোধে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তগুলোতে গোপনে হুন্ডির টাকা হাতবদল হলেও বর্তমানে তা ওপেনসিক্রেট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হুন্ডিকারবারি চক্রের এজেন্টরা সরাসরি সীমান্তে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থানে চলে যাওয়ার কারণে এবং টিটি ডিডি করতে গেলেই নানান ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এমনকি অন লাইনে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনে জিজ্ঞাসাবাদ ও পৃথক ঠিকানা নথিভুক্ত করায় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ব্যাংক এড়িয়ে চলছে। তারা সরাসরি নগদ টাকা কার, মাইক্রো বা নাইট কোচে বহন করছে। হুন্ডিকারবারিদের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, কানসাট, মনাকষা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা, ধামুরহাট, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, দিনাজপুরের খানপুর, রামসাগর ও একইভাবে অন্যান্য জেলার সীমান্ত শহরের এজেন্টরা এখন বৈধ ব্যবসার আড়ালে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে হুন্ডি সিন্ডিকেট ও হুন্ডি চোরাকারবারিরা ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক ব্যাংক টাকা লেনদেনে ব্যবহার হয়ে থাকত সেই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে ২৩০ জনকে চিহ্নিত করে। তার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ২১ জন বড় মাপের চোরাকারবারিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। অবৈধ হুন্ডির স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে, বেশ কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা তাদের ব্যাংকিং কর্মকা- বাসাবাড়িতে পরিচালিত করত। সারারাত ধরে চলত টাকা গণনার কাজ। কারণ এসব টাকা রাত্রেই বেশি আসে। পরবর্তীতে কী এক রহস্যজনক কারণে ডিটেক্ট করা হুন্ডি চোরাকারবারি ও তাদের দোসর ব্যাংক কর্মকর্তাদের কোন ধরনের আইনের আওতায় না এনে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।
×