ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পটুয়াখালীর জামায়াতী প্রতিষ্ঠান আরডিপির ২ কর্মকর্তা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ মে ২০১৫

পটুয়াখালীর জামায়াতী প্রতিষ্ঠান আরডিপির ২ কর্মকর্তা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ সদস্যদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পটুয়াখালীর গলাচিপায় জামায়াতী প্রতিষ্ঠান আরডিপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রতারিত সদস্য গলাচিপা পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাগরদী রোডের বাসিন্দা মোঃ খোকন বাদীহয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আরডিপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম. ইব্রাহিম খলিল, সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মাহবুব হোসেন, সহসভাপতি হাজী সাইদুল ইসলাম, ৮ পরিচালক যথাক্রমে মোঃ সাইদুর রহমান রানা, মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ জুলফিকার আলী ভুট্টো, আদম শফিউল্লাহ, সাহাদাত হোসেন সাকিব, মোঃ ইউসুফ আলী, মোঃ আশিকুর রহমান, মোঃ নাজমুল আহসান, সাবেক ম্যানেজার মোঃ রাশেদুল ইসলাম, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মোঃ জাহিদুল ইসলামসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ মোঃ জাহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার রাতে গলাচিপা পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে এবং তা তদন্তের জন্য পটুয়াখালী জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে হস্তান্তর করেছে। ঁজানা গেছে, ‘রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ সংক্ষেপে আরডিপি নামের এ সমবায়ী প্রতিষ্ঠান ২০১১ সালের মার্চ মাসে গলাচিপায় শাখা খুলে কার্যক্রম চালু করে। এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে দু’ হাজার টাকা মুনাফা, স্থায়ী আমানতে ৫ বছরে দ্বিগুণ, সাড়ে সাত বছরে তিনগুণ, দৈনিক সঞ্চয় ২০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা ও মাসিক সঞ্চয় ২শ’ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা এবং মেয়াদ শেষে দ্বিগুণ মুনাফাসহ সংস্থায় এ ধরনের ১৮টি লাভজনক প্রকল্প রয়েছে বলে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে এ সকল গ্রাহকের অর্থ জমা নেয়া হয়। আর প্রায় প্রতিটি প্রকল্পের নামের শুরুতে ‘ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক’ পরিচালিত শব্দগুলো যুক্ত করায় গ্রামের মানুষদের আকৃষ্ট করা সহজ হয়। মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আরডিপিতে ৯৬ হাজার ৩২০ টাকা জমা রেখেছেন। তার মতো শত শত মানুষ কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন। কিন্তু জমা টাকা ফেরত চাইতে গেলে আসামিরা তা ফেরত দেয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরিচালকরা এখানকার টাকা দিয়ে কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি ক্রয় করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর কয়েক নেতা ২০০৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমবায় দফতর থেকে নিবন্ধন নিয়ে আরডিপির কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরডিপির ৭৮টি শাখা রয়েছে। এসব শাখার মাধ্যমে জামায়াত নেতারা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ঢাকায় জমি-ফ্লাটসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। কোন সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আরডিপি তা মানেনি। এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস জানান, সমবায় সমিতি (সংশোধন) ২০১৩ আইন অনুযায়ী সমবায় অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নেয়া কোন সমিতি শাখা কার্যালয় খুলতে পারে না। সমবায় সমিতি স্থায়ী আমানতও নিতে পারে না। আরডিপি এ সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করায় একাধিকবার নোটিস দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরেও জামায়াতী এ সমবায়ী প্রতিষ্ঠানটি কেবলমাত্র পটুয়াখালী জেলায় ৭টি শাখার মাধ্যমে কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলা প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শিশির কুমার পাল জানান, মামলাটি দুর্নীতি দমন আইনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তা দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে, একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আরডিপির সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সকলেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যুবক, ডেসটিনির মতো এ প্রতিষ্ঠানটিও সারাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় হয়েছে জামায়াত রাজনীতিতে। সারাদেশ জুড়ে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা বছরের পর বছর চললেও প্রশাসন আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ রয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা পটুয়াখালী থেকে জানান, পটুয়াখালীতে জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘আরডিপি’ গ্রাহকদের প্রায় শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ শিবিরের সাবেক সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাকসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করে মামলা হয়। মামলাটি দায়ের করেছেন পটুয়াখালী শহরের আদালতপাড়ার আমানতকারী এটিএম শহিদ ইসমাইল। এদিকে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা আরডিপির আলমগীর নামের একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
×