ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আশুলিয়ায় অপহৃত শিশু ওয়ারী থেকে উদ্ধার

শিশু অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১০ মে ২০১৫

শিশু অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার আশুলিয়া থেকে গত ৬ মে আব্বাস (৬) নামে এক শিশু অপহরণের ঘটনায় শনিবার পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে চার অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য। শুক্রবার গভীর রাতে আব্বাস ওয়ারী থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশী পিস্তল। পাঁচ লাখ টাকার জন্য ফুচকা খাওয়ার লোভ দেখিয়ে অপহরণকারীরা আব্বাসকে অপহরণ করেছিল। গত ৬ মে ঢাকা জেলার আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকা থেকে অপহৃত হয় আব্বাস। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, নিখোঁজের দিনই আব্বাসের পরিবারের তরফ থেকে আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ডায়েরির অভিযোগের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আব্বাসকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। শনিবার র‌্যাব আব্বাস অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আব্বাস অপহরণ ও উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় র‌্যাব-১ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আব্বাস উদ্ধারের ঘটনা বর্ণনা করে র‌্যাব। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জনকণ্ঠকে জানান, আব্বাস নিখোঁজের পর তার পরিবার র‌্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতেই র‌্যাব অভিযান শুরু করে। আব্বাসের পরিবারের তরফ থেকে সন্দেহভাজন অপহরণকারী হিসেবে প্রথমেই সোহেলের কথা জানানো হয়। গত ৭ মে বৃহস্পতিবার রাতে সোহেলকে কাঠগড়া বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোহেল আব্বাস অপহরণের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। এদিকে শুক্রবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় আব্বাসকে কে বা কারা রাজধানীর ওয়ারী থানার কাছে ছেড়ে দিয়ে যায়। আব্বাসকে পুলিশ থানা হেফাজতে নেয়। এরপর আব্বাসকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, আব্বাসের পিতার নাম জমির সরকার। তিনি লেপ তোষক ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে। আরেক ছেলের বয়স প্রায় দেড় মাস। মাসখানেক আগে গ্রেফতারকৃত নজরুলের সঙ্গে সোহেলের মাদারীপুর কারাগারে পরিচয় হয়। জামিনে বের হওয়ার পর তারা টাকার জন্য শিশু অপহরণ কাজে নামে। সোহেল আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে আব্বাসদের পাশের বাড়িতে বসবাস করত। সোহেল টার্গেটকৃত শিশু হিসেবে আব্বাসকে বেছে নেয়। গত ৫ মে রাতে সোহেল, গ্রেফতারকৃত নজরুল, ইমরান ও রতন জুরাইন কবরস্থানে আব্বাসকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক পরদিন দুপুরে তারা তাদের দলের নিজস্ব একটি সিএনজি নিয়ে কাঠগড়া বাজারে যায়। আব্বাসকে ফুচকা খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে সিএনজিতে তুলে সোজা জুরাইনের দিকে রওনা হয়। সোহেল নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে কাঠগড়া বাজারের অদূরে নেমে বাসায় চলে যায়। আব্বাসকে সূত্রাপুরের একটি বাড়িতে রেখে প্রথমে তার পিতার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। এরপর দর কষাকষি চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অপহরণকারী দলের নেতা নজরুল এক লাখ টাকার বিনিময়ে আব্বাসকে মুক্তি দিতে রাজি হয়। আব্বাসের পিতা পাঁচ দফায় ১০ হাজার টাকা করে বিকাশের মাধ্যমে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়। এরপর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয় অপহরণকারীরা। এদিকে গ্রেফতারকৃত সোহেলের তথ্যমতে জুরাইন হোটেলের সামনে থেকে শনিবার সোহেল ছাড়া অপর তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের আশুলিয়া থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
×