ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস জঙ্গী সন্দেহে চট্টগ্রামে ভার্সিটি শিক্ষক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১০ মে ২০১৫

আইএস জঙ্গী সন্দেহে  চট্টগ্রামে ভার্সিটি শিক্ষক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) সক্রিয়কর্মী সন্দেহে চট্টগ্রামে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম শরফুল আউয়াল (২৮)। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের একজন সংগঠক। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রভাষক। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর রোডের বি ব্লকের একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে নগরীর কাপাসগোলা এলাকার হাকিম আলী লেন থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তার চান্দগাঁওয়ের বাসা তল্লাশি চালিয়ে কিছু জিহাদী বই উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত শরফুলের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে ইরান, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের আইএসকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, শরফুল সম্পর্কে বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে তার আইএস জঙ্গী সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, গত প্রায় দু’মাস ধরে শরফুল আউয়ালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখেছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার রাতে পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট পর্যালোচনায় পুলিশ উদ্ঘাটন করে ইংল্যান্ড, ইরাক, ইরানসহ উগ্রপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও এর নেতাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। যাদের মধ্যে আইএসের উচ্চ পর্যায়ের একজন নেতাও রয়েছেন। আন্তর্জাতিক এসব জঙ্গীদের সঙ্গে তার ফেসবুকের মাধ্যমে আলোচনার তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে শরফুল আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গ্রেফতারের পর শনিবার চান্দগাঁও থানায় শরফুল সাংবাদিকদের সামনে তদন্তকারী পুলিশ সদস্যদের জানান, তিনি ইসলামী নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। যেখানে দাওয়াতের বিষয়টি ছিল মুখ্য। জিহাদ বা আইএস প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হত। তবে তার অর্থ এই নয় যে, তিনি আইএসের সঙ্গে যুক্ত। শরফুলের দেয়া তথ্য মতে, তিনি ইতোপূর্বে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইসলামী আইন নিয়ে আলোচনা করতেন। এতে কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝে তাকে চাকরিচ্যুত করে। শরফুল জানান, তিনি যদি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে গণতান্ত্রিক বিশ্বের তুলনা করতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই কমিউনিজম নিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। তার মানে এ নয় যে, তিনি কমিউনিস্ট হয়ে গেলেন। কমিউনিস্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে শরফুল আস্তাগফিরুল্লাহ বলে দু’হাতে দু’গালে তওবা কাটেন। শরফুলের বাসায় পুলিশ হিযবুত তাহ্্রীর বই গ্লোবাল আর্মির ধারণা পত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে শরফুল জানান, তার এক বন্ধু হিযবুত তাহ্রীরের বড় নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি হারানোর পর তিনি যখন হতাশায় ভুগছিলেন তখন ওই নেতা বইগুলো পড়তে দিয়েছিলেন। এসব বই থেকে তিনি মূলত ধারণা অর্জন করছেন বলে জানান। তবে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে শরফুল হিযবুত তাহ্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে এখনও হ্যাঁ বা না কিছু বলেননি। শরফুল আরও জানান, বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম জজ কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত এবং এ বারের নিবন্ধিত একজন আইনজীবী। অপরদিকে, গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে তথ্য আছে শরফুল চট্টগ্রামের যে কোন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। যেখানে লুকিয়ে রয়েছে শিক্ষকতার আড়ালে হিযবুত তাহ্রীর মাধ্যমে আইএস কর্মকা-কে সংগঠিত করা। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত শরফুল রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের মুন্সীবাড়ির আবদুল হামিদের পুত্র।
×