ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষ

বিদেশী ফল, সুস্বাদু রসালো- ফলন ভাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ মে ২০১৫

বিদেশী ফল, সুস্বাদু রসালো- ফলন ভাল

রাজু মোস্তাফিজ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয় মানুষের রুচি ও অভ্যাসের। আর একইভাবে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে মানুষের খাদ্যাভ্যাসও। ইদানীং অনেকে দেশীর পাশাপাশি বিদেশী সুস্বাদু ফল-মূল খেতে পছন্দ করেন। এ কারণে কুড়িগ্রাম জেলার শৌখিন এবং কিছু উদ্যমী যুবক স্ট্রবেরি চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। এ জেলায় এ বছর প্রচুর পরিমাণে স্ট্রবেরির ফলনও হয়েছে। স্ট্রবেরি একটি খুবই উপকারী ফল। এটি শারীরিক দুর্বলতা কাটানো, কিডনির পাথর অপসারণ, ফোঁড়া-কণ্ঠনালীর ক্ষতরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতা, জ্বর, চর্ম ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপসহ মানুষের নানা রোগের পথ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে কুড়িগ্রামে স্ট্রবেরির ক্রেতা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছে স্ট্রবেরি চাষীরা। বাজার ব্যবস্থা দুর্বল এবং স্ট্রবেরি সংরক্ষণের অভাবে তাদের গুনতে হচ্ছে লোকসান। সুস্বাদু এ ফলটির উন্নয়নে সরকার কিংবা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নেই কোন কার্যকরী ভূমিকা। ফলে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষ সঙ্কোচিত হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় সিনাই ইউনিয়নের এক বাগানবাড়িতে ১০ শতক জমিতে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শখের বশে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চারা লাগানো থেকে ফলন পাওয়া পর্যন্ত নিবিড় যতœ এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছি। ফলনও হয়েছে ভাল। কিন্তু স্থানীয় বাজারে চাহিদা একদম নেই। উৎপাদন যা হয়েছে তাতে বাইরের জেলা বিশেষ করে ঢাকায় পাঠানো যায়নি। তাই সব স্ট্রবেরি নিজেদের মধ্যে বিলিবণ্টন করা হয়েছে। অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হলেও স্ট্রবেরি চাষের মূল প্রতিবন্ধকতা বাজারজাতকরণ সুবিধার অভাব। হলোখানা সন্ন্যাসী গ্রামের শিক্ষিত যুবক ইদ্রিস আলী ২০১১ সালে ছিল জেলা প্রথম স্ট্রবেরির চাষ করেন। মাত্র ৭ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে আয় করেন ৫০ হাজার টাকা। তার এ সফলতায় আশপাশের গ্রামের অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে ওঠে স্ট্রবেরি চাষে। কুড়িগ্রাম খামারবাড়িতে পর্যায়ক্রমে জেলার ৪৫ জন কৃষক স্ট্রবেরি চাষে প্রশিক্ষণ নেন। এ সব কৃষক স্ট্রবেরি চাষ করলেও লাভের মুখ দেখেনি। সরকারী বা বেসরকারী কোন ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা তারা পায়নি। ইদ্রিস আলী জানান, বিএসসি পাস করে বেকার ছিলাম কিছুদিন। একদিন পত্রিকায় স্ট্রবেরি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ে এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম মঞ্জুর হোসেন (স্ট্রবেরি বিশেষজ্ঞ) স্ট্রবেরি চাষের ওপর তিন দিনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করেন। ২০১০ সালের ১ হাজার টাকায় ৫০টি চারা এনে লাগাই বাড়ির উঠোনে। উজ্জ্বল লাল রঙের এই ফল দেখে নিজের মন ভরে যায়। এরপর ২০১১ সালে ৭ শতক জমিতে ১২শ’ চারা লাগাই। লাভ দেখে পরবর্তীতে ২০ শতক জমিতে চাষ করি। কিন্তু এর পর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে লাভের পরিমাণ কমে যায়। ফলে এখন নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য ২-৩ শতকে চাষ করছি স্ট্রবেরি। বেলে দোআঁশ মাটি স্ট্রবেরি চাষের জন্য উঁচু জমি উপযুক্ত। স্ট্রবেরি ফলে তেমন কোন রোগবালাই না থাকলেও পাখির খুব উপদ্রব হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত জমিতে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। জমিতে স্ট্রবেরির চারা রোপণের এক মাসের মধ্যে ফুল ধরে এবং ১৫-২০ দিনের মধ্যে তা উত্তোলন করা সম্ভব হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে গাছে প্রচুর ফল আসে। মার্চ মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরি সংগ্রহ করা যায়। আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতি গাছে কমপক্ষে আধা কেজি ফল পাওয়া যায়। স্ট্রবেরির পুষ্টিমান ও গুণাগুণ না জানার কারণে স্থানীয় মানুষরা এ ফলের প্রতি আগ্রহী না। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় এ ফলে পচন ধরে। পচে যায়। স্ট্রবেরি ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন জানান, দিনাজপুর থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে ৫-৬ কেজি স্ট্রবেরি এনে কুড়িগ্রামে বিক্রি করছেন ১৮০-২০০ টাকা দরে। দ্রুত পচে যাওয়ায় প্রায় সময় লোকসান গুনতে হয় তাকে। কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার জানান, কুড়িগ্রামের আবহাওয়া এবং মাটি স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী। এর ফলে পটাসিয়াম, কপার, আয়রন, ভিটামিন বি ও সি উপাদান রয়েছে। শারীরিক দুর্বলতা কাটানো, কিডনির পাথর অপসারণ- ফোঁড়া-কণ্ঠনালীর ক্ষতরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতা, জ্বর, চর্ম ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগের পথ্য হিসেবে স্ট্রবেরি খুবই উপকারী। তিনি আরও জানান, স্ট্রবেরির চারা উৎপাদন জটিল। খরচও বেশি হয় অন্যান্য চাষের থেকে। কিন্তু বাজারে স্ট্রবেরির চাহিদা কম হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত স্ট্রবেরি চাষে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কারণ কুড়িগ্রামে স্ট্রবেরি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় না। যতটুকু চাষ হচ্ছে তা ব্যক্তি পর্যায়ে এবং শখের বশে।
×