ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখনও গেল না আঁধার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ মে ২০১৫

এখনও গেল না আঁধার

সমাজে নারীরা এগিয়ে চলেছেন সাধারণভাবে এ কথা আমরা বলে থাকি। বিগত বছরগুলোয় নারীর অবস্থা ও অবস্থানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলেও আমরা মাঝে-মধ্যে আত্মশ্লাঘা অনুভব করে থাকি। অথচ হঠাৎ হঠাৎ এমন সব নারী নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যেগুলোর প্রকৃতি ও অন্তর্নিহিত নির্মমতার পরিচয় পেয়ে আমাদের বিবেক যেন বিবশ হয়ে পড়ে। আমরা অনুধাবনে সক্ষম হই যে, সমাজ থেকে এখনও দূর হয়নি অন্ধকার। এখনও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে দাপটের সঙ্গে বিরাজ করছে। এখনও কোন কোন স্বামীর হাতে স্ত্রীর মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটে চলেছে। তবে এটাও অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে, আমাদের সমাজে যে পরিমাণে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে তার বড় অংশই গণমাধ্যমে অপ্রকাশিত থেকে যায়। বহু নারী মুখ বুজে সর্বংসহা হয়ে লাঞ্ছনা ও পীড়ন সহ্য করে যান। এ কথা খুব কাছের দুয়েকজন মানুষ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। নড়াইলে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় ববিতা বেগমকে প্রহারের ঘটনাটিও প্রায় এক সপ্তাহ পর প্রচার মাধ্যমে এসেছে। এটিও হয়ত আরও অনেক নারী নির্যাতনের মতো ধামাচাপা পড়ে যেত। প্রতিবছর নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের আওতায় হাজার হাজার নতুন মামলা দায়ের করা হয়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটে তার মাত্র শতকরা ১০ ভাগ মামলা হয়ে থাকে। বাকি ৯০ ভাগ ঘটনার মামলা সামাজিক কারণে বা চক্ষুলজ্জার জন্য হয় না। নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি। বাংলাদেশে এই ব্যাধি যেন দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সমাজের যে কোন স্থানে, যে কোন শ্রেণীতে, যে কোন ধর্মে এবং যে কোন গোষ্ঠীর যে কোন বয়সী নারী যে কোন সময় এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন বা বলা সঙ্গত এই ব্যাধির শিকার হচ্ছেন। ঘরের বাইরেও যেমন নারীরা নিরাপদ নন, তেমনি ঘরেও নন। বিবাহিত নারীরা যেমন স্বামী ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় যেমন শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবর দ্বারা নির্যাতিত হন, অবিবাহিত নারীরাও একইরকমভাবে বাবা বা ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার হন। উন্নত সমাজেও নারীরা অনেকেই বিভিন্ন অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। তবে তাঁদের সান্ত¡¡না এই যে, সেখানে রয়েছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ। পুলিশকে বা আইন রক্ষাকারী বাহিনীকে ফোন করলেই তারা দ্রুত ছুটে আসে, অপরাধী ব্যক্তি শাস্তি পায় এবং নির্যাতনের শিকার নারীটির যদি কোন আশ্রয় না থাকে তাহলে রাষ্ট্র তার আশ্রয়সহ জীবনযাপনের সমুদয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সেখানে রয়েছে অনেক বড় বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান যারা তাঁদের আইনী সহোযোগিতাও দিয়ে থাকে । বাংলাদেশে আছে শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, যে আইন বারবার সংস্কার করতে হয়েছে। কারণ, দেখা গেছে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে, আবার নির্দোষ অনেককে এই আইনের ফাঁদে ফেলে কেউ কেউ নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। নড়াইলে নারী নির্যাতনের যে বর্বর ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ করা দরকার। একই সঙ্গে এ কথাও আমাদের বলতে হবে যে, সবার আগে পুরুষের মনমানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও মনে করে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা স্বামীর অধিকার। এ মানসিকতা অনেক উচ্চশিক্ষিত পুরুষের মাঝেও আছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন করলে সমাজের নারী নির্যাতন অনেকখানিই বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আইন দিয়ে সমাজের এই অন্যায়-অনাচার দূর করা সম্ভব নয়।
×