ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মায়ের বুকে মাথা রেখে সন্তান বলবে আজ মা দিবস

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১০ মে ২০১৫

মায়ের বুকে মাথা রেখে সন্তান বলবে আজ মা দিবস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মা একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। মা, মাদার, মম, মাম, আম্মা যাই বলি না কেন একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের চেয়ে অধিক প্রিয় কোন কিছুই এই পৃথিবীতে নেই। তাই যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাকে নিয়ে কবিতা গান রচনা আজও অব্যাহত রয়েছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। কবি নজরুলের ভাষায়- যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা/ একটি কথায় এত সুধা নাই/ মায়ের মতোন এত/ আদর সোহাগ সে তো/ আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই। অথবা কামিনী রায়ের- জড়ায়ে মায়ের গলা, শিশু কহে হাসি/ মা তোমারে কত ভালবাসি/ কত ভালোবাস ধন? জননী শুধায়/ “এ-ত” বলি দুই হাত প্রসারি দেখায়? তুমি মা আমায় ভালোবাস কতখানি? মা বলে মাপ তার আমি নাহি জানি/ তবু কতখানি বল, যতখানি ধরে তোমার মায়ের বুকে নহে তার পরে। যে মাকে নিয়ে এত ভালবাসা, কবিতা, গান সে মাকে স্মরণ করতে আজ পালিত হবে বিশ্ব মা দিবস। অভিধানের ভাষায়Ñ মা সেই, যিনি হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন। তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারিণী। গর্ভধারণের ন্যায় জটিল এবং মায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থানে থেকে এ সংজ্ঞাটি বিশ্বজনীন গৃহীত হয়েছে। তাই পবিত্র গ্রন্থ আল কোরানে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন, আমি মনুষকে তাঁর পিতা- মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। সনাতন ধর্মেও বলা হয়েছে, সন্তান লাভের পর নারী তার রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। এ কারণেই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় এবং মধুরতম শব্দটি ‘মা’। মা শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন, প্রিয় অনুভূতি, প্রিয় ব্যক্তি, প্রিয় দেখাশুনা, প্রিয় রান্না এবং প্রিয় আদর মা। যতগুলো প্রিয় আছে তার সব প্রিয়ই শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করেই। পৃথিবীর ইতিহাসে সন্তানের জন্মদাত্রী হিসেবে প্রাকৃতিকভাবেই মায়ের এই অবস্থান। মানব সমাজে যেমন মায়ের অবস্থান রয়েছে। পশুর মধ্যেও মাতৃত্ববোধ প্রবল। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মা সকল মমতার আধার ও কেন্দ্রবিন্দু। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায়ই মা-এর সমার্থক শব্দটি ম ধ্বনি দিয়ে শুরু। তাই আজকের দিনটি শুধু মাকে ঘিরেই আবর্তিত হবে। প্রিয় সন্তান তার মায়ের জন্য দেবে নানা প্রকার উপহার। এছাড়া পেশাগত কারণে যারা মায়ের কাছ থেকে বহু দূরে অবস্থান করেন তারা টেলিফোনের মাধ্যমে মাকে বিশেষভাবে স্মরণ করবেন। এই মাকে বিশেষভাবে স্মরণ করতেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশে আজ পালিত হবে ‘মা’ দিবস। তবে বাংলাদেশে এখন ব্যাপক পরিসরে মা দিবস পালনের রীতি প্রচলন হয়নি। এখনও জাতীয় পর্যায়ে এ দিবসে তেমন কর্মসূচী দেখা যায় না। কিছু কিছু সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তি নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করে থাকে। তবে সম্প্রতি মা দিবস পালনের প্রতি মানুষের গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এবং বিএনপির চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও পৃথক বাণী দিয়েছেন। যে মাকে নিয়ে আজ এত আয়োজন সেই মা দিবস একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আবার বিশ্বেও সব দেশেই একদিনে মা দিবস পালন করা হয় না। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ সালে ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ। সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রবিবারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হতো। তবে সতেরো শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তাঁর দিনটির কর্মসূচীতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। বাণিজ্যিকভাবেও মা দিবস বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মা দিবসে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিআইপি কমিউনিকেশনের জরিপে বলা হয়েছে, মা দিবসে নববষের্র চেয়ে ৮ শতাংশ, ভালবাসা দিবসের চেয়ে ১১ শতাংশ এবং হ্যালোয়েনের চেয়ে ৬২ শতাংশ বেশি ফোন কল হয়। দক্ষিণ আফ্রিকানরা মা দিবসে ফোন করে সবচেয়ে বেশি। তাদের ফোন কলের হার ৯১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঘানার অধিবাসীরা। বিশ্বে মাত্র দুটি দেশ মিসর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মা দিবসে ফোন কলের সংখ্যা কম বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে ম দিবসকে বিশেষভাবে পালনের জন্য দেশেও বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। সংবাদপত্রসহ রেডিও, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গান, কবিতা, ফোন, শুভেচ্ছা ও উপহার পাঠানোর মধ্য দিয়ে মাকে স্মরণ কর হবে। এছাড়া দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মাকে নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে পালন করতে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। বিভিন্ন হোটেলে আয়োজন করা হয়েছে সুপার মা সপ্তাহ। এতে রয়েছে মা দিবসের জন্য বিশেষ লাঞ্চ ও ডিনার। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস মা দিবসে মায়েদের জন্য এনেছে শাড়ি, রেডি থ্রিপিস ও আনস্টিচ থ্রিপিছ।
×