ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুর টেস্ট গুটিয়ে গেল একদিন আগেই

সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ মে ২০১৫

সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ পাকিস্তানের ছুড়ে দেয়া ৫৫০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২২১ রানেই অলআউট বাংলাদেশ। দৌড়ে এসে উইকেট তুলে নিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। উচ্ছ্বাসও করলেন। করারই কথা। দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিকদের ৩২৮ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথমবারের মতো জয় তুলে নিল পাকিস্তান। সেই সঙ্গে টেস্ট সিরিজও জিতে নিল অতিথিরা। ফলে ওয়ানডে সিরিজ ও একমাত্র টি২০ জেতা টাইগারদের টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না। বাংলাদেশ সফরে এসে পাকিস্তানের কোন ক্রিকেটার যা করতে পারেননি, অবশেষে সফরের শেষ ম্যাচে এসে সেই কাজটি করতে পারলেন মিসবাহ। বাংলাদেশ তাহলে কী করতে পারল? টেস্ট সিরিজ ০-১ ব্যবধানে হেরে গেল। টেস্ট সিরিজে প্রাপ্তি বলতে প্রথম টেস্টে ড্র আর তামিম ও ইমরুলের অসাধারণ ব্যাটিংই পুঁজি হয়ে থাকল। মিরপুর টেস্ট শেষ হলো সাড়ে তিন দিনেই! বাংলাদেশকে এ টেস্টে খুঁজেই পাওয়া গেল না। দৌড়ে এসে উইকেট হাতের মুঠোয় করে নেয়া, তা জয়ী দলের ক্রিকেটাররাই করেন। বাংলাদেশ সফরে এসে পাকিস্তান দলের ক্রিকেটাররা শত চেষ্টাতেও যেন তা করতেই পারছিলেন না। ওয়ানডে সিরিজে টানা তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা এমনটি করেছেন। পাকিস্তান ‘বাংলাওয়াশ’ হয়েছে। একমাত্র টি২০ ম্যাচেও একই চিত্র দেখা গেছে। খুলনা টেস্ট ড্র হলেও, তাতেই জয়ের স্বাদ পাওয়া বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা উইকেট তুলে নিয়েছেন। অবশেষে মিরপুর টেস্টে এসে জয়ের স্বাদ পেল পাকিস্তান ক্রিকেটাররা। সেই জয়টিও অবশ্য অনেক বড়ই হলো। মিরপুরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় হারের সম্মুখীনই হলো। এর আগে মিরপুরে কখনই ৩০০ রানের বেশি ব্যবধানে হার নেই বাংলাদেশের। এবার পাকিস্তান সেটি করে দেখাল। খুলনা টেস্টে যেখানে একটি শতক ও একটি দ্বিশতকের দেখা মিলেছিল, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তো মিরপুর টেস্টে কোন শতকই করতে পারেননি। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৫৫৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে ২০৩ রানের বেশি করতে পারল না বাংলাদেশ। ফলোঅনে পড়ে ইনিংস হারের শঙ্কাতেও পড়ে গেল। কিন্তু পাকিস্তান আবার ব্যাটিং করতে নামায় সেই হার থেকে রক্ষা মিলল। কিন্তু পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিনের শেষ ভাগে এসে ৬ উইকেটে ১৯৫ রান করে আবারও ইনিংস ঘোষণা করল। বাংলাদেশের সামনে জিততে ৫৫০ রানের টার্গেট দাঁড় হলো। সে টার্গেট অতিক্রম করে যদি বাংলাদেশ জয় তুলে নিত, তাহলে ইতিহাসই হয়ে যেত। বিশ্ব ক্রিকেটে যা কোনদিন হয়নি, তাই বাংলাদেশকে করতে হতো। বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো। কিন্তু তা যে বাংলাদেশ পারবে না, তা এতবড় টার্গেট পড়াতেই বোঝা গেছে। তৃতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ৬৩ রান করার পর যখন জিততে ৪৮৭ রান লাগত, তখন নিশ্চিত হারই যে হচ্ছে, তা বোঝাই গেছে। তাই বলে এত দ্রুত গুটিয়ে যাবে বাংলাদেশ! চতুর্থ দিন যখন বাংলাদেশ খেলতে নামে, তখন শাহাদাতের উইকেটটি বাদ দিয়ে ৮ উইকেট হাতে ছিল। সঙ্গে ছিল চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের ৩টি করে মোট ৬টি সেশন। এর মধ্যে ২ সেশনই পুরোপুরি খেলতে পারল না বাংলাদেশ! সিরিজজুড়ে ভাল খেলে, দাপট দেখিয়ে শেষে এসে সব দাপট উধাও হয়ে গেল। এটা কোনভাবেই কেউ-ই ভাবেনি। অন্তত খুলনা টেস্টে যেভাবে ড্র করেছে বাংলাদেশ তাতে এতটুকু ভরসা ছিলই; বাংলাদেশ লড়াই করেই হারবে। কিন্তু কোন লড়াইয়ের দেখা মিলল না। চতুর্থ দিনে এসে দ্বিতীয় সেশনও শেষ হলো না, তার আগেই বাংলাদেশের ইনিংসের পতন ঘটে গেল। তামিম (৪২) রান করল, আর ৭ রান করলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ক্রিকেটার হয়ে যেতেন; কিন্তু পারলেন না। মাহমুদুল্লাহ (২) এসে যে কী ব্যাটিং করলেন, তা নিজেই মনে হয় জানেন না। সাকিব (১৩) যেন সাজঘরে ফেরার তাড়ায় ছিলেন। যে হাফিজ সিরিজের শুরু থেকে চোখ রাঙিয়ে চলেছেন, তার বলেই আউট হয়ে গেলেন সাকিব। মুশফিককে নিয়ে তো এ টেস্টে তর্কের শেষ নেই। সেই মুশফিক টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন। দ্বিতীয় দিন আগ বাড়িয়ে নিজে নেমে গিয়ে আউট হলেন। চতুর্থ দিন রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন। দলকে বাঁচাবেন কী, উল্টো ডুবিয়ে দিয়ে গেলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ৪০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই মুলত বাংলাদেশের লড়াই করে হারার সব আশা-ভরসা শেষ হয়ে গেল। এরপর সৌম্য (১) যথারীতি ব্যর্থ হলেন। মুমিনুল এগিয়ে চলছিলেন। দেশের মাটিতে ১০০০ রানও করেছেন। আবার টানা ১১ টেস্টে অর্ধশতক বা তার বেশি রান করে ভিভ রিচার্ডসকে ছুঁয়েছেন। কিন্তু যেই ৬৮ রান করেছেন তিনিও আউট হয়ে গেছেন। এরপর তাইজুল (১০), শুভগত (৩৯) মিলে শুধু ব্যবধানটা খানিক কমানোর চেষ্টা করেছেন। শহীদ (১৪*) শেষপর্যন্ত অপরাজিতই থেকেছেন। কিন্তু তাতেও হারের ব্যবধান কমেনি। অনেক বড়ই থেকেছে। লাভের লাভ এতটুকু হয়েছে, ইনিংস হারের যে আশঙ্কা ছিল; তা থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ। তবে হার হয়েছে। আর সেই হারে টেস্ট সিরিজ হারও হয়েছে বাংলাদেশের।
×