ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৯ মে ২০১৫

জমে উঠেছে প্রিমিয়ার  লীগ ফুটবল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রিকেটের ডামাডোলের মধ্যেও বেশ জমে উঠেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের খেলা। গত মৌসুমের লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন পর্বে। এবার আগের ফরম্যাটেইÑ অর্থাৎ দুই পর্বে খেলা হবে। ভেন্যু পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আপাতত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই সব ম্যাচ হচ্ছে। অবস্থার উত্তরণ ঘটলে দ্বিতীয় পর্বের কিছু খেলা ঢাকার বাইরে হওয়ার কথা। লীগ শুরু হয়েছে গত ৭ এপ্রিল থেকে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪০ ম্যাচে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে গতবারের শিরোপাধারী শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড। এখন দেখা যাক, কোন্ দলের কি অবস্থাÑ * শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড ॥ গত কয়েক বছর ধরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে চলেছে ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’খ্যাত শেখ জামাল ধানম-ি। মৌসুমের শুরুতেই জিতেছে ফেডারেশন কাপের শিরোপা। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে চলমান লীগেও। যদিও জাতীয় দলের ১২ ফুটবলার খেলেন এই ক্লাবে, তার পরও ৮ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট খুইয়েছে তারা। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপারÑ যেখানে বাকি দলগুলো হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে, সেখানে জামাল এখনও অপরাজিত! কোচ মারুফুল হকের সুযোগ্য কোচিংয়ে তার শিষ্যরা মাঠে পারফর্ম করেই নিজেদের এখনও সবার ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে মামুনুল-ইয়ামিনের ইনজুরি, শেষ দুই ম্যাচে ড্র (ব্রাদার্স এবং মোহামেডানের সঙ্গে) ... এগুলোর কারণে কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে। জামালের সংগ্রহ ৮ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিপক্ষের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বেশি। ৬ জয়, গোল করেছে ১৬টি, বিপক্ষে হয়েছে ৪টি। দলের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বাধিক ৫টি করে গোল করেছেন দুই বিদেশী ফরোয়ার্ড হাইতির ওয়েডসন এ্যানসেলমে এবং নাইজিরিয়ার এমেকা ডার্লিংটন। * বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ॥ মৌসুমসূচক ফেডারেশন কাপে শেখ জামালের কাছে হেরে টানা দুই বার রানার্সআপ হওয়া ‘অল রেডস্’খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চলমান লীগেও অবস্থান করছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। ৮ খেলায় ৫ জয়, ১ ড্র ও ২ হারে তাদের পয়েন্ট ১৬। শুরুটা ভালই করে তারা। কিন্তু ভাল খেলেও অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যায় ব্রাদার্স ও মোহামেডানের কাছে। দলটির রক্ষণভাগে যে দুর্বলতা আছে, তার প্রমাণ তাদের ১৫ গোল করার বিপরীতে ১৩ গোল হজম করা! দলটির প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে ফরোয়ার্ড-অধিনায়ক এনামুল হকের দীর্ঘ সময় পর আবারও গোলের ধারায় ফেরা (ফেডারেশন কাপেই যার ঝলক দেখা গিয়েছিল)। করেছেন ৭ গোল, যা চলমান লীগে সর্বোচ্চ। বিদেশী স্ট্রাইকারদের দাপটের মাঝেও তার এই উদ্ভাসিত নৈপুণ্য দারুণ আলোচিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিফেন্ডার আশরাফুল করিম এবং মিডফিল্ডার ফয়সাল মাহমুদসহ দলের অনেকেই নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন। অনেকেই ধারণা করছেন অচিরেই জাতীয় দলে তারা তিনজনসহ আরও অনেকেই খেলার সুযোগ পাবেন। * মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ॥ অনেক বছর ধরে লীগে শিরোপা নেই ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’খ্যাত দেশের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল দল ঢাকা মোহামেডানের। তার ওপর এ বছর দল ছেড়ে গেছেন এমিলি, জাহিদ, হেমন্ত, মামুন খান ও তপু। তবে দলের সাবেক খ্যাতনামা ফুটবলার কাজী জসিমউদ্দিন জোসি দলের কোচ হওয়ার পর সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। কেননা, দলটি এখন অবস্থান করছে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে। ৮ ম্যাচে ৪ জয়, ২ ড্র ও ২ হারে অর্জন ১৪ পয়েন্ট। তবে তাদের খেলা ছিল মিশ্র ধরনের, যা ক্লাব সমর্থকদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করেনি। যেমন তাদের নিচে থাকা শেখ রাসেলের কাছে হার এবং অনেক নিচে থাকা ফেনী সকারের সঙ্গে ড্র করা। তবে কৃতিত্ব হচ্ছে এক নম্বরে থাকা শেখ জামালের সঙ্গে ড্র করা এবং দুই নম্বরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে দেয়া। মোহামেডান করেছে ১৪ গোল, খেয়েছে ৭ গোল। এই ১৪ গোলের ৫টিই করেছেন গিনি ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরা। * আবাহনী লিমিটেড ॥ ৭ ম্যাচে ৪ জয়, ১ ড্র ও ২ হারে ১৩ পয়েন্ট ও চতুর্থ স্থান নিয়ে মোহামেডানের ঘাড়ের কাছেই উষ্ণ নিশ্বাস ফেলছে তাদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’খ্যাত ঢাকা আবাহনী। তবে দলের অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের জন্য দুঃসংবাদÑ নির্ভরযোগ্য হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড জাবালোস সোর্বা পেটের মাংসপেশীর ইনজুরিতে। দ্রুতই তিনি হাঙ্গেরি ফিরে যাবেন চিকিৎসার জন্য। চলতি মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলো আর নাও খেলতে পারেন জাবালোস। আবাহনীর ১১ গোলের সর্বোচ্চ ৪টিই করেছিলেন এই জাবালোস। স্বদেশী সতীর্থ ফরোয়ার্ড গ্যাবর ডেমিয়েনও করেছেন ৪ গোল। * শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড ॥ ৭ খেলায় ৪ জয়, ১ ড্র, ২ হার, পয়েন্ট ১৩, অবস্থান পঞ্চমÑ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ২০১২-১৩ লীগের শিরোপাধারী ও ওই মৌসুমের ট্রেবল ট্রফি চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় দলের আট ফুটবলারকে দলে ভেড়ানো দলের এমন অবস্থা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দলটির সমর্থকরা। দলের বিদেশী (মন্টেনিগ্রোর) কোচ দ্রাগান দুকোনোভিচও চেষ্টা করে পারছেন না পয়েন্ট টেবিলে দলকে ওপরের দিকে ওঠাতে। দলের ১০ গোলের (খেয়েছে ৭ গোল) মধ্যে সমান চারটি করে করেছেন দুই ফরোয়ার্ড, যাদের নামের সাদৃশ্য আছেÑ জাহিদ হাসান এমিলি এবং ক্যামেরুনের পল এমিল। দুই জায়ান্ট আবাহনী-মোহামেডানকে হারিয়ে প্রশংসা কুড়ালেও নিচের দল ফরাশগঞ্জের সঙ্গে ড্র করে সমালোচিত হয় ক্লাবটি। * ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড ॥ ৭ খেলায় মাত্র ৩ জয়, ২ ড্র, আর ৩ হারে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ১১ দলের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানটি ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’খ্যাত ব্রাদার্স ইউনিয়নের। দলের ভারতীয় কোচ সৈয়দ নইমউদ্দিনের অধীনে দলটি মোটামুটি খেলছে। মোহামেডান ও মুক্তিকে হারানো এবং শেখ জামালকে রুখে দেয়াই হচ্ছে এখন পর্যন্ত তাদের বড় সফলতা। দলের ১০ গোলের মধ্যে একাই ৬টি করেছেন হাইতির ফরোয়ার্ড অগাস্টিন ওয়ালসন। মুক্তির বিরুদ্ধে করেন হ্যাটট্রিকসহ করেন চার গোল। এখন পর্যন্ত চলমান লীগে এটিই একমাত্র হ্যাটট্রিক।
×