ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষক ধারেকাছেও যেতে পারছেন না

পাবনায় গম সংগ্রহে অনিয়ম ॥ ফায়দা লুটছে সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৯ মে ২০১৫

পাবনায় গম সংগ্রহে অনিয়ম ॥ ফায়দা লুটছে সিন্ডিকেট

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৮ মে ॥ মহাজোট সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি গম ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গম উৎপাদনকারী কৃষি সহায়ক কার্ডধারী কৃষকরা চলতি মৌসুমে গম বিক্রির জন্য সরকারী খাদ্য গুদামের ধারে কাছেও যেতে পারছেন না। ধান্দাবাজ রাজনৈতিক নেতা, গম ব্যবসায়ী ও সরকারী কর্মকর্তা সিন্ডিকেট খোলাবাজার থেকে কম দামে নিম্নমানের গম কিনে সরকারী গুদামে সরবরাহ করছে। এ চক্রটি কৌশলে সরকারী গম সংগ্রহ অভিযানে ১১ কোটি টাকার অধিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, জেলায় এবার ৫৭ হাজার টন গম উৎপাদন হয়েছে এবং সরকারীভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ১৪ হাজার ৫শ’ টন গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ খাদ্য শস্য নীতিমালা ২০১০,৯ (খ) বিধানে কৃষি সহায়ক কার্ডধারী প্রকৃত গম উৎপাদনকারী প্রতি কৃষক ৫০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ টন গম সরকারী খাদ্যগুদামে বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। একশ্রেণীর ধান্দাবাজ রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি মেঃটনে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা কমিশন নিয়ে গম সরবরাহের বরাদ্দ সিøপ ডিসি ফুডের কাছে প্রেরণ করে। এ বরাদ্দ সিøপে প্রতি গম ব্যবসায়ীর নামে ১শ’ থেকে ৫শ’ টন পর্যন্ত গম সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই ব্যবসায়ীরা খোলা বাজার থেকে নিম্নমানের প্রতি টন গম ১৮-১৯ হাজার টাকায় কিনে সরকারী খাদ্যগুদামে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। এভাবে এ সিন্ডিকেট চলতি মৌসুমে জেলায় সরকারী গম সংগ্রহ অভিযানে ১৪ হাজার ৫শ’ টন গম সরবরাহ করে ১১ কোটির টাকার অধিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে। তবে এসব ব্যবসায়ীর নামে সরবরাহকৃত গমের মূল্য বাবদ ফুড চেক ইস্যু করা হচ্ছে না। কৃষি অফিস থেকে কৃষি সহায়ক কার্ডধারী কৃষকদের নামে ৩ টন করে বিক্রি দেখিয়ে তাদের নামে বাহকের ফুড চেক ইস্যু করা হচ্ছে। গম ব্যবসায়ীরা এসব চেক সংগ্রহ করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। যেসব কৃষকের নামে গম বিক্রির চেক দেয়া হচ্ছে তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। পাবনা সদর, সুজানগর, বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, আটঘড়িয়া ও ঈশ্বরদী সরকারী খাদ্যগুদামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি সহায়ক কার্ডধারী প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ১ কেজি গমও কেনা হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কৃষি সহায়ক কার্ডধারী কৃষকদের ফটোকপি সংগ্রহ করে তাদের নামে গম বিক্রি দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সুজানগর উপজেলার বাঘুলপুর গ্রামের গম চাষী সৈয়দ আলী, হজরত আলী জানিয়েছেন, তারা সরকারের কাছে গম বিক্রি করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরাই সরকারের কাছে গম বিক্রি করছে। একই কথা জানালেন আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুরের কৃষক রেজাউল। এ নিয়ে জেলায় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। ধান্দাবাজ কতিপয় রাজনৈতিক নেতার কারণে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও উঠেছে। জেলার খাদ্যগুদামে সংগৃহীত এ গমের আর্দ্রতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সর্বোচ্চ ১৪ % আর্দ্রতা থাকার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সরকারী খাদ্যগুদামের মজুদকৃত এ গম টিআর, কাবিখা প্রকল্পসহ খোলা বাজারে দরিদ্রদের মাঝে আটা বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হয়। নিম্নমানের ভেজা এ গম দিয়ে আগামীতে টিআর, কাবিখা প্রকল্পে ব্যয় করা হলে একদিকে যেমন বাজারমূল্য কম হবে তেমনি ওজনেও ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জায়ান। এ ব্যাপারে ডিসি ফুড মোঃ মাইন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রকৃত কার্ডধারীদের কাছ থেকেই গম সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা কৃষিমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার দাবি করেছেন।
×