বাংলাদেশে প্রতিটি নির্বাচনেই নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরবর্তী কয়েকদিন সহিংস ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু দেখতে হবে এটা মূল নির্বাচনী মূল প্রক্রিয়ার কত ভাগ। ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচনের আগে ও পরে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। কেবল নির্বাচনের দিন কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। যে অজুহাতে বিএনপি সিটি নির্বাচন বর্জন করলো এবং কিছু মিডিয়া যেভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলো সেই বিষয়গুলোই সবিস্তারে তুলে ধরেছেন লেখক মুনতাসীর মামুন। ৭ মে’র পর আজ পড়ুন-
মেয়র প্রার্থীদের ভোট নিয়ে কোন সংঘর্ষ হয়নি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হয়েছে। এই প্রার্থীরা শুধু আওয়ামী লীগের ছিল, এ ব্যাপারে মিডিয়া নির্দিষ্ট অভিযোগ কী ভাবে করলো? বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়নি, তারা কী ভাবে নিশ্চিত হলেন? এক লক্ষ ভোট বাতিল হয়েছে। সরকার পক্ষের উদ্দেশ্য অসৎ হলে এসব ভোট বাতিল করা হতো না। এগুলো সরকার সমর্থকদের পক্ষেই যেত। এ ছাড়া, মিডিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে, সেন্টারে সেন্টারে প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল না। আবার খবরের কাগজেই প্রকাশিত ও প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি সেন্টারে সেন্টারে নিজেদের এজেন্ট দেয়নি। প্রার্থীরা বাধ্য হয়ে অনেক ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং করেছেন। টাকা দিয়ে আউটসোর্সিং করে যেসব এজেন্ট দেয়া হয়েছে, তারা কোন্ দুঃখে ভোট কেন্দ্রে থাকবেন? তা’হলে সেন্টার সেন্টার থেকে এজেন্ট বহিষ্কার করা হবে কী ভাবে, যদি সেন্টারে বাস বা মগ প্রতীক প্রার্থীদের এজেন্ট না থাকেন? তারপরও যদি বলেন, এরকম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতেও পারে। তা’হলে ধরে নিতে হবে, যেসব বিএনপি-জামায়াত কাউন্সিলর বিজয়ী হয়েছেন, তাদের সেন্টার থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে? মোহাম্মদপুর কেন্দ্রে নাকি তাবিথ আনিসুল থেকে মাত্র ৮০০ ভোট কম পেয়েছেন। সেই সেন্টারে যদি তাবিথের এজেন্ট না থেকে থাকে, তা’হলে ধরে নিতে হবে, আওয়ামী লীগ এজেন্টরাই তার ভোটের বাক্স ভরে দিয়েছেন।
সাংবাদিক বা সম্পাদকদের মাইন্ডসেট সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুল মান্নান ফেসবুকে কী আলোচনা চলেছে তার একটি বিবরণ শোনালেনÑ
এক প্রসিদ্ধ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সম্পাদককে জিজ্ঞেস করলেন, শিরোনাম কী করব? সম্পাদক বললেন, তুমি কী ভাবছ? বার্তা সম্পাদক বললেন, নেপালের ওপর করে দিই কী বলেন? সম্পাদক উত্তর দিলেন, ঠিক আছে। এর কয়েক মিনিট পর সম্পাদক বার্তা সম্পাদককে ডেকে পাঠালেন, বললেন, দ্বিতীয় শিরোনামটি ছাত্রলীগের ওপর করা যায় না? বার্তা সম্পাদক অবাক হয়ে বললেন, সেটি কী রকম?
নেপালে ছাত্রলীগ ত্রাণসামগ্রী নয় ছয় করছে এমন কিছু করা যায় না?
ছাত্রলীগতো নেপালে ছিল না?
কী যেন বল, নেপালে কী একটা শ্যুটিং ছিল না, সেখানে কি ছাত্রলীগ সমর্থক দু’একজন যায়নি? বা যেসব ডাক্তার পাঠানো হয়েছে, সেখানেও কী যুবলীগ ছাত্রলীগের কেউ নেই? খুঁজে দেখ।
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
॥ ৭ ॥
নির্বাচন অবাধ হয়েছে, সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে তা বলব না। কিন্তু, পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো থেকে নির্বাচন অনেক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত যাতে থাকে, সে পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করা বা কী করা যেতে পারে, তার প্রস্তাবই জরুরী। সব কিছু নস্যাৎ করে দিলে ফলাফল শুভ হয় না। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমাদের থাকতেই হবে। এ ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক লক্ষণীয়। ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহী এবং তাদের অধিকার প্রয়োগে সচেতন। না হলে দু’পক্ষের এত ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতেন না। অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলে একটি ঐকমত্যে পৌঁছা গেছে। আমাদের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে, একটি পরিবর্তন সবাই চাচ্ছেন। প্রাক-নির্বাচনী প্রচারণা এর প্রমাণ।
স্থানীয় নির্বাচনও দলভিত্তিক হওয়া উচিত, এ কথা আমরা অনেক দিন বলে আসছি। সব কিছু দল ভিত্তিক হচ্ছে, সেটি দৃশ্যমান এবং আমরা তা মেনে নিচ্ছি। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বলব যে নির্বাচন দল ভিত্তিক হচ্ছে না- তা ইয়ার্কির মতো শোনায়।
(চলবে)
বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কিছু প্রস্তাবনা
ড. আবদুল ওয়াহাব
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বপ্নের নাম। এই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন শুক্রবার শাহজাদপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কোন বাঙালীর জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ! এ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে হলেও সারাবিশ্বের রবীন্দ্রপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে তাতে সন্দেহ নেই। এটি মিলনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বিশ্বমানবের। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সর্বতোভাবে আন্তর্জাতিকতাবাদী, তাই বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। বহুদিন ধরে বিশ্ব বিদ্বৎসমাজ মুখিয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের নামে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে যদি কখন-কোন দিন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়, তখন তারা পূর্ণ উদ্যমে হাত বাড়াবে, এজন্য তাদের সহযোগিতার ডালি থরে থরে সাজানো রয়েছে। এজন্য কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট সকলের। এর জন্য যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যতদূর জানি সেভাবেই কাজ এগোচ্ছে।
শাহজাদপুর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে বর্তমানে যে স্থাপনা বা অবকাঠামো রয়েছে তাতে প্রকল্প পরিচালকসহ অন্তত দশজন কর্মকর্তা খুব ভালভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়া ৫-৬টি বিভাগের পাঠদানের জন্য শ্রেণীকক্ষের ব্যবস্থাও এই অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে। শাহজাদপুর একটি বর্ধিষ্ণু শহর; এ শহরে বেশ কয়েকটি সরকারী-বেসরকারী কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানে অনেক উন্নত স্থাপনা রয়েছে, অস্থায়ীভাবে এসব স্থাপনা ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এজন্য স্থানীয় এমপি এবং পৌরপ্রধানের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সিরাজগঞ্জ জেলার ডিসির সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খানিকটা দূর অবস্থানে যেসব ভূমি-জমি চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলোর উন্নয়নের কাজ শুরু করা যাবে। এছাড়া রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে যে পরিমাণ ভূমি রয়েছে সেখানেও একাধিক বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ সম্ভব হবে। এই মুহূর্তে জরুরী ভিত্তিতে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর অডিটরিয়ামের অফিসকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক কাজ শুরু করা যায়।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সেশন হবে ২০১৫-১৬। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম বা শিক্ষা ব্যবস্থা হবে বিশ্বভারতীর (শান্তিনিকেতন) আদলে। এ কথাই আমাদের শিরোধার্য। পাশাপাশি আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী ছাত্রী ছিলেন। ভারতের শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা আদর্শ হিসেবে নিতে পারি। এটা করতে পারলে শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। মূল পরিকল্পনায় থাকতে পারে ১৫টি অনুষদ এবং ৫টি ইনস্টিটিউট। অনুষদগুলো হলোÑ ১. কলা অনুষদ, ২. সঙ্গীত ও নাট্যকলা অনুষদ, ৩. সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ৪. ব্যবসায়-বাণিজ্য অনুষদ, ৫. আইন অনুষদ, ৬. পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ, ৭. রসায়নবিজ্ঞান অনুষদ, ৮. গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অনুষদ, ৯. প্রাণিবিদ্যা অনুষদ, ১০. কৃষি অনুষদ, ১১. ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ, ১২. চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুষদ, ১৩. প্রকৌশল অনুষদ, ১৪. রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদ এবং ১৫. কারুকলা অনুষদ। ইনস্টিটিউটগুলো হলোÑ ১. ফোকলোর ইনস্টিটিউট, ২. ভাষা ইনস্টিটিউট, ৩. রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৪. রবীন্দ্র চারুকলা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট এবং ৫. রবীন্দ্র কৃষি ইনস্টিটিউট।
প্রাথমিকভাবে দুটি অনুষদ যেমনÑ কলা অনুষদ, সঙ্গীত ও নাট্যকলা অনুষদ এবং একটি ইনস্টিটিউটÑ ফোকলোর ইনস্টিটিউট নিয়ে এই স্বপ্নের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করতে পারে। তবে উল্লেখ করতে চাই, ‘রবীন্দ্রচর্চা’ নামে তিন মাসের ক্ষুদ্র একটি কোর্স শুরুতেই চালু করতে হবে যা সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের জন্য অবশ্য পাঠ্য হবে। এই কোর্সটি হবে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্র সৃষ্টি ও রবীন্দ্র দর্শনকে যাতে সংক্ষেপে জানা যায় তার আলোকে। দেশবাসী দ্রুত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়ন দেখার জন্য স্বপ্নে বিভোর।
বিশ্বকবির নামে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য এবং সেই সঙ্গে বিশ্ববাসীর জন্য বিশাল সম্ভাবনার, বিশাল আনন্দের খবর। যে স্বপ্ন একদিন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন করতে চলেছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ কাজটি করে বাংলাভাষী মানুষসহ সকল বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা সেই সময় ও ক্ষণের জন্য প্রহর গুনছি।
লেখক : শিক্ষাবিদ