ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ ২৫ বৈশাখÑ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী

এসো গন্ধে বরণে, এসো গানে...পুলকময় পরশে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৮ মে ২০১৫

এসো গন্ধে বরণে, এসো গানে...পুলকময় পরশে

মোরসালিন মিজান ॥ এসো গন্ধে বরণে, এসো গানে।/ এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে,/ এসো চিত্তে সুধাময় হরষে,/ এসো মুগ্ধ মুদিত দু নয়ানে।/ তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে...। আবারও ডাক এসেছে চির নূতনের। রবির বিপুল আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার দিন এসেছে। ...সেই-যে নূতন তুমি,/তোমারে ললাট চুমি/এসেছি জাগাতে/বৈশাখের উদ্দীপ্ত প্রভাতে।/ হে নূতন,/দেখা দিক্আরবার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ...। আজ শুক্রবার ২৫ বৈশাখ চির নূতন কবি চির নূতনের কবি বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সঙ্গীতের কিংবদন্তি পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের দেড়শ বছর গত হয়েছে। তবু বাঙালীর প্রতিদিনের জীবন ও মানসে এই মহামানবের উপস্থিতি দেদীপ্যমান। রবীন্দ্রনাথের লেখা, দর্শন, চিন্তাচেতনা, তথা বহুমাত্রিক আলোকছটার ঔজ্জ্বল্যে ও মহিমায় বাঙালীর জাতিসত্তা হয়েছে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তাঁর এ প্রাপ্তি বাংলা সাহিত্যকে বিরল গৌরব এনে দেয়। বাঙালীর চেতনার রং স্পষ্ট হয়েছিল রবির আলোয়। বাঙালীর প্রতিটি আবেগ আর সূক্ষ্ম অনুভূতিকে স্পর্শ করে থাকা এই মহামানবকে বিনম্র শ্রদ্ধায় গভীর ভালবাসায় স্মরণ করবে কৃতজ্ঞ বাঙালী। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবীন্দ্রনাথ এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেন যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন। চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর। এ সময় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তাজগতে আধুনিকতার বীজ বুনে দিয়েছিলেন তিনি। বাঙালীর মানস গঠনে পালন করেছিলেন অগ্রদূতের ভূমিকা। বাঙালীকে আবেগ অনুভূতি প্রকাশের ভাষা দিয়েছেন রবীন্দ্রাথ। তাঁদের দেখার দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছেন। সৃষ্টির প্রেরণা দিয়েছেন। বাঙালীর শিক্ষায়, নান্দনিক বোধে, সাংস্কৃতিক চর্চায়, দৈনন্দিন আবেগ-অনুভূতির অভ্যাসে এবং সাহিত্য-সঙ্গীত-শিল্পকলায় সারাক্ষণ আছেন তিনি। আছেন আমাদের নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে, বুদ্ধি-বোধে-মর্মে-কর্মে। তাই তিনি আমাদের লোক। তাকে আমরা পাই প্রেমে, প্রতিবাদে, আন্দোলনের অঙ্গীকারে এবং স্রষ্টার আরাধনার নিবিষ্টতায়। আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে আমরা তাঁকে পেয়েছি আত্মশক্তিরূপে। এই মহামানবের জন্মদিন উদ্যাপন মানে বাঙালীর আত্মপরিচয়ে প্রত্যয়দীপ্ত হওয়া। আজ তাই তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করবে সারাবিশ্বের বাঙালী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজ কর্মের মাধ্যমে সূচনা করে গেছেন একটি কালের। একটি সংস্কৃতির। কৈশোর পেরোনোর আগেই বাংলা সাহিত্যের দিগন্ত বদলে দিতে শুরু করেন তিনি। তাঁর পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয়েছে বাঙালীর শিল্প-সাহিত্য। বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের ৫২ কাব্যগ্রন্থ, ৩৮ নাটক, ১৩ উপন্যাস ও ৩৬ প্রবন্ধ ও অন্য গদ্য সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খ-ে রবীন্দ্ররচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, আধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদী ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সাহিত্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা সঙ্গীত ভা-ারকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আজকের বদলে যাওয়া সময়েও বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে টিকে আছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। এর আবেদন যেন কোন দিন ফুরোবার নয়। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাণী ও সুরের ইন্দ্রজালে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে বাঙালী। তাঁদের আবেগ-অনুভূতি কবিগুরুর গানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জাতীয় সঙ্গীতেরও রচয়িতা তিনি। বহু প্রতিভার অধিকার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় সত্তর বছর বয়সে নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে অঙ্কিত তাঁর স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে। এর পর সমগ্র ইউরোপেই কবির একাধিক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তাঁর আঁকা ছবিতে আধুনিক বিমূর্তধর্মিতাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। মানবতাবাদী কবি মানুষের ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল ছিলেন। তাঁর মতে, মানুষই পারে অসূরের উন্মত্ততাকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে সুরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। তাই ‘সভ্যতার সঙ্কট’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেনÑ ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে সেই উপাধি বর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ। সমাজের কল্যাণেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তিনি দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ চার বছর ঘন ঘন অসুস্থতার মধ্য দিয়ে গেছেন। এ সময়ের মধ্যে দু’বার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল কবিকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল। তখন সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে ওঠেননি। প্রথম জীবনে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলিতে কবি লিখেছিলেনÑ মরণ রে,/ তুঁহু মম শ্যামসমান... মৃত্যু অমৃত করে দান। একইভাবে মৃত্যুকে জীবনের নিস্তাররূপে বর্ণনা করে তিনি উচ্চারণ করেনÑ প্রেম বলে যে যুগে যুগে, তোমার লাগি আছি জেগে, মরণ বলে আমি তোমার জীবনতরী বাই। জীবনের শেষদিকে এসে কবি জীবনের প্রতি নিজের তৃষ্ণার কথা জানিয়ে লেখেন বিখ্যাত সেই পঙ্ক্তিÑ মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। বলা বাহুল্য, মানবের মাঝে রবীন্দ্রনাথের বেঁচে থাকার এ স্বপ্ন শতভাগ পূর্ণতা পেয়েছে। কবির ভাষায়Ñ তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।/ সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি- আহা,/ নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,/ আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।...হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ চিরদিনের। চির নূতন তিনি। নব নব রূপে তিনি আসেন। আসবেন। রাষ্ট্রপতির বাণী ॥ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ রবীন্দ্র চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কল্যাণকর সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষণজন্মা কবির অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্যই আনন্দের বার্তাবহ, কারণ বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও বাঙালী জাতিকে তিনি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) দিয়েছেন শুভ-সুন্দর ও কল্যাণের শাশ্বত বার্তা। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ মানেই মহৎ মানবিক মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, যা ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের সংকীর্ণ সীমা ভেদ করে রূপসাগরে গান গায় অরূপরতনের। কবির এই অরূপরতন তো প্রকৃতপক্ষে তাঁর জীবন দর্শনেরই নাম যে দর্শনের মূলে রয়েছে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার শিল্পিত রূপায়ন। প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও বৈষম্যের বিলোপ সাধন এবং ধর্ম-বর্ণ-ভাষার বৈচিত্র্যে সমুন্নত রাখতে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দর্শন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মননে বিশ্বকবির ব্যঞ্জনাময় উপস্থিতি শোষণ, বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা ও অমানবিকতা প্রতিরোধে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, কালজয়ী এ কবি জীবন ও জগৎকে দেখেছেন অত্যন্ত গভীরভাবে যা তাঁর কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনী, সঙ্গীত ও চিত্রকলায় সহস্রধারায় উৎসারিত হয়েছে। রবীন্দ্রজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠান প্রতি বছরের মতো এবারও প্রাণের আবেগ ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় বাঙালী উদ্যাপন করবে দিবসটি। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে বরাবরের মতোই থাকবে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। টেলিভিশনগুলোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে আরও অনেক আগে। পত্রিকাগুলোতে চলছে বিশেষ সংখ্যার প্রস্তুতি। এবার সরকারীভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের থিম নির্ধারণ করা হয়েছেÑ ‘সভ্যতার সঙ্কট ও রবীন্দ্রনাথ’। বিশেষ এই থিম সামনে রেখে জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বছর কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। শুক্রবার শাহজাদপুরে বহু কাক্সিক্ষত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় শাহজাদপুরের পাইলট হাইস্কুল মাঠে আয়োজন করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র স্মারক বক্তব্য প্রদান করবেন এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওগাঁর পতিসর ও খুলনায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। তবে রাজধানী ঢাকায় এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উৎসবের সেøাগানÑ হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ,/ যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ। এই সেøাগানে এখন মুখরিত মিলনায়তন। রবীন্দ্রজয়ন্তীর পরদিন শনিবার পর্যন্ত এখানে অনুষ্ঠিত হবে উৎসব। প্রতিদিনই গানে গানে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাবেন শিল্পীরা। শুক্রবার ছায়ানট আয়োজন করবে দুদিনের রবীন্দ্রউৎসব। রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন অধ্যাপক সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে দৃষ্টান্তসহ বক্তৃতা করবেন তিনি। থাকবে অতিথি এবং ছায়ানটের শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি। পাঠের পাশাপাশি থাকবে সুরের ধারার রবীন্দ্র-নাটকের গান। দ্বিতীয় দিন শনিবারও অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। এদিন পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রাথের গান থেকে কবিতা, কবিতা থেকে গান নিয়ে সন্জীদা খাতুনের গ্রন্থনা ‘রূপে রূপে অপরূপ’। থাকবে সুরতীর্থ-এর মূল গান ও তা থেকে ভাঙা রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপস্থাপন, নৃত্যদল জাগো আর্ট সেন্টার ও ভাবনার পরিবেশনা। পাশাপাশি থাকবে অতিথি এবং ছায়ানট-এর শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি ও পাঠ। সব মিলিয়ে মানসম্পন্ন একটি উৎসব আয়োজনের আশা করছে ছায়ানট। পঁচিশে বৈশাখ বিকেল থেকে পরবর্তী তিন দিন রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প নিয়ে আয়োজিত হবে বিশেষ প্রদর্শনী। কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ২৬ বৈশাখ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলা একাডেমি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে পঁচিশে বৈশাখ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে ‘এবি ব্যাংক চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা’। কার্যালয়ের সামনে খোলা মঞ্চে থাকবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১০টায়। থাকবে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য, রবীন্দ্র কবিতা থেকে আবৃত্তি, রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে পাঠ, রবীন্দ্র বিষয়ক ছবি আঁকাসহ নানা আয়োজন। আয়োজকরা জানান, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে মেলায়। মেলায় আরও থাকবে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫টি স্টল। মেলায় রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, বরেণ্য শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিকরা উপস্থিত থাকবেন। রবীন্দ্রমেলায় এবার সম্মাননা জানানো হবে নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। মেলা সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার বিশেষ আয়োজন থাকছে ঢাকার নাট্যমঞ্চে। এদিন রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’র বিশেষ মঞ্চায়ন করবে স্বপ্নদল। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরায়ত সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’র গবেষণাগার নাট্যরীতিতে নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান অবলম্বনে কিছু রূপান্তরসহ দুই ভিন্ন সময়ে এবং দুটি আলাদা আঙ্গিকে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেছিলেন। ১৮৯২-এ তাঁর একত্রিশ বছর বয়সে রচনা করেন কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং এর প্রায় চুয়াল্লিশ বছর পরে ১৯৩৬-এ পঁচাত্তর বছর বয়সে রচনা করেন নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ সুপরিচিত এবং এটি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন দলের মাধ্যমে অসংখ্যবার মঞ্চায়িত হয়েছে। স্বপ্নদলের প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ পা-ুলিপিটি অবলম্বনে। পরদিন শনিবার শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হবে প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের ‘শ্যামাপ্রেম’ নাটকের ৫০তম প্রদর্শনী। নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন শ্রী চিত্তরঞ্জন ঘোষ ও নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, রামিজ রাজু, ইউসুফ পলাশ, নিজাম লিটন, শুভেচ্ছা, আশা, আবু হায়ত জসিম, রিগ্যান রতœ, জসিম, সুজন, সুজয়সহ আরও অনেকে। এছাড়াও দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে উদ্যাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করবে।
×