ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়র নাছিরের সামনে অঙ্গীকার বাস্তবায়নই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৭ মে ২০১৫

মেয়র নাছিরের সামনে অঙ্গীকার বাস্তবায়নই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বুধবারই মেয়র হিসেবে শপথগ্রহণ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে নতুন মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করান। চট্টগ্রামে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। নতুন মেয়রের জন্য চসিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও অন্য রকমের ব্যস্ততা। উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি শঙ্কাও বিরাজ করছে অনেকের মধ্যে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নির্বাচনের আগেই জলাবদ্ধতামুক্ত নান্দনিক নগরী উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। ব্যক্ত করেন স্বপ্নের মেগাসিটি গড়ার। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে নগরীর উন্নয়নে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার ছিল তার। পুরনো প্রকল্পের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু এবং কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করতে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি ছিল তার নির্বাচনী ইশতেহারে। মোট ৩৬ দফা ইশতেহার তুলে ধরেছিলেন তিনি। নতুন মেয়র তার অঙ্গীকার কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন, কতটুকু সক্ষম হবেন তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ইতোপূর্বের তিন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর গ্রহণ করা অনেক প্রকল্পই এখন বন্ধ। তদুপরি বিগত পাঁচ বছরে উল্লেখ করার মতো কোন আয়বর্ধক প্রকল্প নেই। ফলে নতুন মেয়রের অন্যতম অগ্রাধিকার পাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্ভাবনাময় প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করা এবং আরও নতুন প্রকল্প গ্রহণ। তবে নগরবাসীর সবচেয়ে বড় চাওয়া একটি আবর্জনামুক্ত ও মশামুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী। নবনির্বাচিত মেয়রের প্রথম একশ দিনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যেও রয়েছে নগরীকে পরিচ্ছন্ন করে শ্রী ফিরিয়ে আনা। চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাস্তবায়িত ফার্মাসিউটিক্যালস প্রকল্পটি এখন বন্ধ। কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য নিজস্ব উদ্যোগে ওষুধ তৈরি এবং ওষুধ বিপণনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করাই ছিল এ ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা স্থাপনের উদ্দেশ্য। বর্তমানে এটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রিমিয়ার ড্রিঙ্কিং ওয়াটার নামের একটি পানি প্রকল্পও ছিল সিটি কর্পোরেশনের। সেটি এক সময়ে বন্ধ হয়ে গেলেও পুনরায় চালু করা হয়েছে, যা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। নগরীর আবর্জনা থেকে বিশেষ প্রযুক্তিতে লাকড়ি তৈরির প্রকল্পটিও বন্ধ। তবে আনন্দবাজার এলাকায় জৈব সার তৈরির প্রকল্পটি চালু রয়েছে। আবর্জনা থেকে এখানে তৈরি করা হয় জৈব সার। এক সময়কার স্বাবলম্বী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এখন আর সে অবস্থায় নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কলেবর বৃদ্ধি পেলেও কমেছে এর আয়। ফলে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং শিক্ষা ও সেবা খাতের বিশাল জনবলের বেতনভাতা পরিশোধও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ঠিকাদারি বিলও বকেয়া পড়েছে পর্বত সমান। ফলে অনেক দায় এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েই যাত্রা শুরু করতে হবে নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোহাম্মদ হোসেন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স, বন্দর থেকে পাওয়া কর এবং ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন খাতের আয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনভাতা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। তবে উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালনায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, শুধু চসিকই নয়, প্রত্যেকটি সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় সরকারী বরাদ্দে। কারণ, সিটি কর্পোরেশন কোন লাভজনক সংস্থা নয়, বরং একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নগরীর অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সহযোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসছে বলে তিনি জানান। এদিকে, নতুন মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দিন শপথ গ্রহণের পর তার চট্টগ্রামে আগমনের প্রতীক্ষায় রয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও পরিলক্ষিত হচ্ছে ব্যস্ততা। চসিক ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার তৎপরতাও দেখা যায়। চসিকে আগে থেকেই অনেক রাজনৈতিক নিয়োগ থাকায় অনেকেই যেমন উৎফুল্ল, তেমনিভাবে শঙ্কিতও অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী। তবে নতুন মেয়র দল মতের উর্ধে থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন এমনই আশা সকলের।
×