ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোজার আগেই মূল্যসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার;###;বিধিমালাও চূড়ান্ত হওয়ার পথে

সত্বর প্রতিযোগিতা কমিশন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ মে ২০১৫

সত্বর প্রতিযোগিতা কমিশন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ বাজার সিন্ডিকেটের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রমজানের আগেই কম্পিটিশন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান এবং চারজন কমিশনার নিয়ে গঠিত হবে প্রতিযোগিতা (কম্পিটিশন) কমিশন। আগামী রমজানে এই কমিশন মূল্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করবে। কমিশনে একজন সচিব থাকবেন, যিনি সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং তার চাকরির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে। আশা করা হচ্ছে, চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের মধ্যদিয়ে প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হবে। এই আইন বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, আড়াই বছর আগে প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ জাতীয় সংসদে পাস হলেও এখন পর্যন্ত কমিশন গঠন করতে পারেনি সরকার। এছাড়া আইনের বিধিমালাও প্রণয়ন করা হয়নি। ফলে জনস্বার্থে করা প্রতিযোগিতা আইনটি বাস্তবায়িত হতে পারছে না। যদিও ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে একটা স্বাধীন প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের বিষয়টি মাথায় রেখেই আইনটি করা হয়। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নে দ্রুত কম্পিটিশন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ করা হবে। এজন্য নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্তকরণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইন করা হয়েছে, বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে এবং সর্বশেষ কমিশন গঠন করা গেলে আইনটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন বাস্তবায়িত হলে বন্ধ হবে মূল্যসন্ত্রাস। প্রতিবছর রমজানের চাহিদা পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে থাকেন। একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ নেয়া হয়। কিন্তু এই আইনটি কার্যকর হলে এসব অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাই দ্রুত কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যদের নিয়োগ দিতে বিধিমালা প্রণয়ন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। জানা গেছে, কমিশনের কাজ হবে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং একচেটিয়া ব্যবসা রুখে দিয়ে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করা। এছাড়া এ কমিশন আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে তা হলো- মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙা, মূল্যের ওঠানামার ওপর নজর রাখা, অতিরিক্ত মুনাফার শিকার থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করা, বাজার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করা এবং ভোগ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা। প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিধান রয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলাসহ যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রতিযোগিতা কমিশন। এছাড়া আইনে সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করলে ১ বছরের কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতা কমিশন হবে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা ॥ প্রতিযোগিতা কমিশন বিলে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির বয়স ৬৫ বছর হলে তাকে কমিশনের চেয়ারপার্সন বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। কমিশনের চেয়ারপার্সন ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর হবে। এ ছাড়া বিলের ৮ ধারায় কমিশনের কার্যাবলী ও ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাজারে প্রতিযোগিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিষয় নির্মূল করা কমিশনের কাজ। বাজারে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসাবাণিজ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে এই কমিশন। রমজানে মূল্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী রমজান মাস সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা একচেটিয়া ব্যবসাবাণিজ্য করার অপকৌশল গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন সব পণ্য নিয়ে কারসাজি হতে পারে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করে দ্রুত চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করা হলে এই তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব। আর তাই প্রতিযোগিতা কমিশন আইন কার্যকর করতে রমজানের আগে কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। ওই সময় দ্রব্যমূল্য বাড়ানোসহ পণ্যের মজুদ, ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, মনোপলি অবস্থা, জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকা- করলে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। রমজান সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি, মজুদ, অভ্যন্তরীণ চাহিদা, বাজার ব্যবস্থাপনা এবং মূল্যসংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
×