ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন মেয়রের শপথ করালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ মে ২০১৫

ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন মেয়রের শপথ করালেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আনন্দঘন পরিবেশে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং দেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করে শপথ নিলেন নবনির্বাচিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি মেয়র আনিসুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাছির উদ্দিন। একই সঙ্গে শপথ নিয়েছেন তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত ১৭৬ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও। শপথবাক্য পাঠ করানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত তিন মেয়রকেই সততা ও আইনের মধ্যে থেকে নগরবাসীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে শপথ নিয়েই যানজটমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণের সাঈদ খোকন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বন্দরনগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিন মেয়রই সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নেরও অঙ্গীকার করেন। ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন আজ বৃহস্পতিবারই দুই প্রশাসকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের সাঈদ খোকন এবং চট্টগ্রামের আ জ ম নাছির উদ্দিনকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে নবনির্বাচিত ১৭৬ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল মালেক। নির্বাচনে জয় পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় নির্বাচিত তিন মেয়র শপথ নিলেন। শপথবাক্য পাঠ করার পর শপথ ফাইলে স্বাক্ষর করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের এই তিন মেয়র। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট পরিহিত ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও চট্টগ্রামের আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং নীল পাঞ্জাবি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল আনিসুল হক অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরসহ অভ্যাগত অতিথিরা তাঁদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় তিন মেয়রই নিজ নিজ আসনের সামনে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে ও সালাম দিয়ে দোয়া কামনা করেন। আর তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরের মধ্যেও ছিল উচ্ছ্বাস। আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠানস্থলে একে অপরের সুযোগ হাত মিলিয়ে, কেউ আবার কোলাকুলি করে একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন এবং কুশল বিনিময় করেন। হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ কাউন্সিলরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় পুরুষ কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই শপথ নিতে পরে এসেছিলেন মুজিব কোট। সকাল সোয়া দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পবিত্র কোরআন শরিফ, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠের পরই এলজিআরডিমন্ত্রী প্রথমে শপথ গ্রহণ করান ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচিত ১৭৬ জন্য সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের। নিজ নিজ আসনে দাঁড়িয়ে শপথ নেন কাউন্সিলররা। এরপরই শপথ গ্রহণের জন্য তিন মেয়রকে আহ্বান জানান ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল মালেক। তিন মেয়র আনিসুল হক, সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাছির উদ্দিন নিজ আসন থেকে উঠে গিয়ে মূল মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ গ্রহণ শেষে তাঁরা নিজ নিজ ফাইলে স্বাক্ষর দেন। এরপরই নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের আপ্যায়িত করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। পুরো অনুষ্ঠান শেষে তিন মেয়রের সঙ্গেই কিছু সময় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডাঃ দীপু মনি, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী ড. আবদুর রাজ্জাক ও লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন মেয়রের পরিবারের সদস্য, রাজনীতিবিদ, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা এবং গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। শপথ গ্রহণ শেষে নবনির্বাচিত তিন মেয়রই সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রথমে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের পুত্র ও দক্ষিণের সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এরপর একই স্থানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র আনিসুল হক ও আ জ ম নাছির উদ্দিন। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মুজিব কোট পরা সাঈদ খোকন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ঢাকাবাসী আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। ঢাকাবাসীর আমার ওপর হক অনেক বেশি। আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার ওপর থাকা ঢাকাবাসীর হক আদায় করব। মেয়র হিসেবে রাজধানীর যানজট নিরসন, রাস্তাঘাট মেরামত এবং আবর্জনামুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলার বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার প্রথম দিন থেকে এ জন্য কাজ শুরু করব। সঙ্কট প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমি সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকাবাসীর উন্নয়ন করে যাব। বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মতোই ঢাকাবাসীর জন্য নিজেকে ‘উৎসর্গ’ করার প্রতিশ্রুতিও দেন সাঈদ খোকন। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন নিশ্চিত করে বসবাস উপযোগী সুন্দর নগরী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মেয়র আনিসুল হক। নীল পাঞ্জাবি পরিচিত হাস্যোজ্জ্বল এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, কোন কাজ একজন মেয়রের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকার উত্তর অংশের উন্নয়ন করে বাসের উপযোগী করে গড়ে তুলব। ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে আনিসুল হক আরও বলেন, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমাকে সমর্থন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ, আমার জয়ের জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে আমি ঋণী থাকলাম। সিটি নির্বাচন নিয়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, এগুলো নির্বাচন কমিশন দেখবে। সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক উভয়েই জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সততা ও আইনের মধ্যে থেকে ঢাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাবেন তাঁরা।
×