ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় বললেন জোনাথন ট্রট

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৬ মে ২০১৫

বিদায় বললেন জোনাথন ট্রট

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দ্বিগি¦জয়ী মানুষও যে কখনও নিজের কাছে হেরে যান, বিশ্ব তা আরও একবার দেখল। বিবেকের তাড়নায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন জোনাথন ট্রট! সেই ট্রট যিনি ২০১১ সালে হয়েছিলেন ‘উইজডেন’ ও ‘আইসিসির’ বর্ষসেরা। ইংল্যান্ডের এ্যাশেজ সাফল্যে রেখেছিলেন মহাগুরুত্বপূর্ণ অবদান। ৪ বছরের ব্যবধানে সব কিভাবেই না বদলে গেল। গত বছর মানসিক অবসাদে অস্ট্রেলিয়া সফরের মধ্যপথে দেশে ফিরলেন, এবার উইন্ডজ মিশনে প্রত্যাবর্তনটা সুখের হলো না। ড্র সিরিজে তিন ম্যাচে রান ০, ৪, ৫৯, ০, ০ ও ৯, বুঝলেন, আর নয়। ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্তটা অত্যন্ত কঠিন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, মনে হয় না ইংল্যান্ডের হয়ে এই লেবেলে যে রকম সামর্থ্য প্রয়োজন তা আমার আছে। মানসিক অবসাদ কাটিয়ে আবার ক্রিকেট খেলতে পেরে, গর্বের জার্সি পরে আমি সম্মানিত। কিন্তু তা দলের জন্য কোন কাজে আসেনি বলে একই সঙ্গে হতাশও।’ অবসরের ঘোষণা দিয়ে বলেন ৩৪ বছর বয়সী ইংলিশ ব্যাটসম্যান। দু-একটা সিরিজ খারাপ হতেই পারে, শচীন টেন্ডুলকর-ব্রায়ান লারাদেরও হয়েছে। তাই বলে দল থেকে অন্তত বাদ পরতেন না ট্রট। সামনে ঘরের মাটিতে এ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের কঠিন মিশন। এমন সময় বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া সৈনিককে বড় প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পেরে উঠলেন না আধুনিক সময়ের অন্যতম স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান। বক্তব্যেই তা পরিষ্কার। ২০১৩-১৪ এ্যাশেজ সফরের মধ্যপথে মানসিক চাপজনিত অসুস্থতার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরেন ট্রট। উইন্ডিজ সফরে হারানো আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পেতেও ছিলেন আশাবাদী। ‘আমি ক্রিকেটের একজন মনোযোগী ছাত্র। ব্যাট হাতে সারাজীবন এটাই ভেবে এসেছি। এবার উইন্ডিজে ভাল কিছু করার অপেক্ষা।’ বলেছিলেন তিনি। ৩ টেস্টের ৬ ইনিংসে মোটে ৭২ রান। সঙ্গে এগিয়ে গিয়েও সিরিজে দলের ড্র দেখা, অবসাদটা হয়ত ফের পেয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইংলিশম্যানকে। ওপেনিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে তিন-তিনবার আউট হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগে। ‘আমার পারফর্মেন্সটা ঠিক ইংল্যান্ড জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো নয়!’ এমন বক্তব্যে অবসাদটাই ফুটে ওঠে। ২০০৯ সালে সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডের হয়ে স্বপ্নের মতো এক অভিষেক হয়েছিল ট্রটের। অমীমাংসিত এ্যাশেজ পকেটে পুড়তে লর্ডসের শেষ টেস্টটা জিততেই হতো এ্যান্ড্রু স্ট্রসদের। ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে জীবনের প্রথম ইনিংসে ৪১Ñএর পর দ্বিতীয় ইনিংসেই সেঞ্চুরি (১১৯)। অভিষেকে সিরিজ জয়ী টেস্টের নায়ক ছিলেন ট্রট। পরের বছর লর্ডসেই বাংলাদেশে বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা ২২৬ রান। ৫২ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৪৪ গড়ে রান ৩৮৩৫, ৯ সেঞ্চুরির সঙ্গে ১৯ হাফসেঞ্চুরিতে ছিল উজ্জ্বল ইতিহাসের হাতছানি। ৬৮ ওয়ানডেতে ৫১ গড়ে রান ২৮১৯, সেঞ্চুরি ৪, হাফসেঞ্চুরি ২২Ñ ট্রটের মাঝে কিংবদন্তির ছবি দেখছিলেন ইংলিশরা। অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক স্ট্রসও এ বিদায় মানতে পারছেন না। ‘শুরু থেকে ওর মাঝে পরিপূর্ণ এক ব্যাটসম্যানের ছবিই দেখতাম। ইংল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর এই সময়ে ট্রটকে খুব প্রয়োজন ছিল। দুঃখজনক শেষ পর্যন্ত ও নিজের সঙ্গেই পেরে উঠল না।’ বর্তমান অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুকের মন্তব্য, ‘ট্রটের সঙ্গে খেলতে পেরে গর্বিত। ও ছিল সত্যিকারের যোদ্ধা।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলবেন ট্রট।
×