ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় পাঁচদিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব শুরু

তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান বিস্ময়ে তাই জাগে...

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ মে ২০১৫

তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান বিস্ময়ে তাই জাগে...

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ ধন রবীন্দ্রনাথ। অন্ধকার যতই আসুক, কবিগুরুর সৃষ্টির আলোর কাছে তা ম্লান। ধ্রুপদী এই আলো পথ দেখায়। সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। কবিগুরু তাই প্রতিদিনের। আর বিশেষ বিশেষ দিবসে তো কথাই নেই। এ সময় রবির আলোয় আরও বেশি উদ্ভাসিত হয় চারদিক। এখন সেই সময়। ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবির জন্মদিন সামনে রেখে শুরু হয়ে গেছে উৎসব অনুষ্ঠান। প্রতিবছরের মতো এবারও বড়সড়ো উৎসবের আয়োজন করেছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। এবার পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজন। জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উৎসবের স্লোগান- হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ,/ যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ। এই স্লোগানে মুখরিত ছিল মিলনায়তন। সন্ধ্যায় মিলনায়তনে প্রবেশ করতেই মন ভরে ওঠে। যেদিকে চোখ যায়, কবিগুরুর সৌম্য শান্ত চেহারা। তাঁর গানের বাণী প্রতি দেয়ালে। শিল্পীরাও সেজে এসেছিলেন। মেয়েদের মেরুন রং শাড়ি। খোঁপায় জড়ানো সুগন্ধী বেলি ফুল। ছেলেদের সফেদ পাঞ্জাবি। সকলেই মঞ্চে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মঞ্চটাও এবার সুন্দর সাজানো। ব্যাকড্রপে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি। সেই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন এক ঝাঁক শিল্পী। ওমনি বেজে উঠল সুর। দেশের প্রতি আনুগত্যের সবটুকু প্রকাশ করে সবাই গাইলেন কবিগুরুর সেই অমর রচনা- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।/ চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি...। শিল্পীদের সঙ্গে যথারীতি গাইলেন দর্শক। জাতীয়সঙ্গীতের পর শিল্পীরা হাঁটু ভাজ করে বসলেন। তখন মনে হচ্ছিলÑ ঠাকুর বাড়ির উঠোন! দেশমাত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শিল্পীরা গাইলেন- ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।/ তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।/ তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,/ তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,/ তোমার ওই শ্যামল বরণ কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা...। পরের গানে জীবন নিয়ে কবিগুরুর বিস্ময়। সেখান থেকে শিল্পীরা গেয়ে যানÑ আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,/ তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,/ বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ...। পরের গানে সমবেত কণ্ঠে শিল্পীদের উচ্চারণÑ ভাঙো বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও।/বন্দী প্রাণ মন হোক উধাও।/ শুকনো গাঙে আসুক/ জীবনের বন্যার উদ্দাম কৌতুক—/ ভাঙনের জয়গান গাও...। ৫ সারিতে মোট ৮০জন শিল্পী। নবীন প্রবীণের সম্মিলিত পরিবেশনা মুহূর্তেই বদলে দেয় মিলনায়তনের পরিবেশ। অবশ্য তখন পর্যন্ত কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। মঞ্চে আহ্বান করা হয় অতিথিদের। অনুষ্ঠানে এদিন প্রধান অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের উপ হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী। শিল্পী সংস্থার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সাজেদ আকবর। আলোচনা ছাড়াও এ পর্বে সম্মাননা জানানো হয় বিশিষ্ট শিল্পী নাসরিন শাম্সকে। নাতিদীর্ঘ পর্বটি শেষে ফের গানে গানে রবীন্দ্রনাথ। এবার একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন মামুন জাহিদ খান। প্রেম পর্যায় থেকে তিনি গেয়ে যান- এত ভালোবাসি, এত যারে চাই, মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই-/ যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে তাহারে আনিবে ডাকি/... দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি...। ইন্দ্রানী কর্মকার পূজা পর্ব থেকে গান- আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারি নি তোমারে নাথ-/ আমার লাজ ভয়, আমার মান অপমান, সুখ দুখ ভাবনা...। এভাবে একে একে গেয়ে যান শিল্পীরা। একেবারে নবীনরা যেমন গেয়েছেন, তেমনি গেয়েছেন খ্যাতিমানরা। সবাই গানে গানে পরম শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জানিয়েছেন কবিগুরুকে। উৎসব আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে।
×