ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার সুন্দরবনের চরে সার বোঝাই জাহাজের তলা ফেটে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ মে ২০১৫

এবার সুন্দরবনের চরে সার বোঝাই জাহাজের তলা ফেটে গেছে

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ পূর্ব সুন্দরবনে এবার একটি সারবাহী জাহাজের তলা ফেটে গেছে। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা এলাকার ভোলা নদীতে চরে আটকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাহাজটি সারবোঝাই করে মংলা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। খোলা সারবোঝাই এ জাহাজটি সম্পূর্ণ ডুবে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ কামাল উদ্দিন জানান, সুন্দরবনের ভোলা নদীর মরাভোলা খালের চরে তিন’শ টন পটাশ সারবোঝাই একটি লাইটার জাহাজের তলা ফেটে জাহাজে পানি উঠে গেছে। এমভি জাবালে নূর নামে এই জাহাজটিকে উদ্ধারের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা থেকে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। সার নিয়ে মংলা থেকে ঢাকা যাবার পথে পূর্ব শরণখোলা চাঁদপাই রেঞ্জের মরাভোলা খালের চরে এ জাহাজটি আটকে যায়। পরে জাহাজের তলা ফেটে তাতে পানি উঠে যায়। এ স্থানটি সুন্দরবনের সীমানা থেকে ১৫ কিমির মধ্যে বলে শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সার সুন্দরবনের নদীতে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সার ছড়িয়ে পড়লে সুন্দরবনের জলজ প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। জানা গেছে, মংলা থেকে সারবোঝাই করে দুটি লাইলার জাহাজ ঢাকা যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ভোলা নদীর চরে একটি জাহাজ এমভি জাবালে নূর সোমবার আটকে যায়। এরপর পুনরায় জোয়ার এলে অপর জাহাজটি দড়ি বেঁধে আটকে পড়া এমভি জাবালে নূর জাহাজটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তখন এ জাহাজটির তলা ফেটে একদিকে কাত হয়ে যায়। সূত্র আরও জানায়, এ জাহাজের ট্যাঙ্কারের মধ্যে সার খোলা অবস্থায় ছিল। বস্তায় প্যাকিং করা ছিল না। এদিকে এ খবর পেয়ে জাহাজের মালিক ঢাকার বাবুল হাওলাদার ওই জাহাজটি উদ্ধারের জন্য এমভি নুরুল হক ও এমভি সাদি নামে দুটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠায়। নুরুল হক জাহাজের মাস্টার আঃ মালেক মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় জানান, ঘটনাস্থলে বিশাল চর থাকায় ওই জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই তারা সেখান থেকে ফিরে যাবে বলে জানান। ডুবে যাওয়া জাহাজের মালিক বাবুল হাওলাদার জানান, জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ অতুল ম-লের উদ্বৃতি দিয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, মরাভোলা নদীর চর এলাকায় সারবাহী একটি জাহাজ ভাটিতে আটকে যায়। ঘটনা স্থলে প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। তাঁরা জাহাজটিকে নিরাপদে উদ্ধারের তদারকি করছেন। এতে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। শরণখোলা স্টেশনের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে ৫০০ মেট্রিক টনের মতো লাল রঙের এমওপি সার রয়েছে। জাহাজটির কিছু পেছনের অংশ ছাড়া সম্পূর্ণটাই পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সারের লাল রং পানিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ওই জাহাজের সংরক্ষিত তেলও পানিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ডুবো জাহাজের মাস্টার ও নাবিক কাউকেই এ সময় ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর সরদার সরিফুল ইসলাম জানান, সার গলে পানির গুণগত মান ও জলজ প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সারবাহী জাহাজডুবির ঘটনাটি সুন্দরবন বিপর্যয়ের আরেকটি প্রধান কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ডুবে যাওয়া পটাশ (এমওপি) জাতীয় এ সারের বিষক্রিয়ায় গাছপালার চেয়ে জলজ প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে বলে তাকে মালিক পক্ষ জানিয়েছে। তবে গলিত সার পানিতে ফেলা হলে জাহাজটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×