ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতি প্রতিষ্ঠান আরডিপি ॥ গ্রাহকের শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৬ মে ২০১৫

জামায়াতি প্রতিষ্ঠান আরডিপি ॥ গ্রাহকের শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী, ০৫ মে ॥ এবার পটুয়াখালীতে জামায়াত ইসলামীর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘আরডিপি’ গ্রাহকদের প্রায় শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। সোমবার গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কোন প্রকার নোটিস ছাড়াই ওইদিন অফিস বন্ধ করে এর কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর মঙ্গলবারও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ আরডিপির কোন কর্মকর্তাকেই এখনও আর মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে একই সময়ে জেলার গলাচিপা উপজেলা ও বাউফল উপজেলা থেকেও প্রতিষ্ঠানটির শাখার কর্মকর্তারা উধাও হয়েছেন বলে জানা গেছে। কোটি কোটি টাকার আমানত নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সটকে পড়ায় পথে বসেছেন হাজার হাজার গ্রাহক। পটুয়াখালী শহরের সদর রোডে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভবনে একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ২০১২ সালে আর্থিক কার্যক্রম শুরু করে জামায়াত শিবিরের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আরডিপি ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসিএস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল নারায়ণগঞ্জ জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি। আর এ প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবেই জেলায় পরিচিত ছিল। এতো কিছুর মাঝেও দিব্যি প্রশাসনের নাকের ডগায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গত কয়েক বছরে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। আরডিপির একজন গ্রাহক আরিফুল হক জানান, পটুয়াখালীর স্থানীয় কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের টাকা এখানে জমা ছিল। এর মধ্যে অনেকেই এফডিআর করে টাকা রেখেছিলেন আর কারও কাছ থেকে আবার লোন দেয়ার কথা বলে সপ্তাহিক কিস্তিতেও টাকা সংগ্রহ করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। অপর এক গ্রাহক শহরের বড় মসজিদ এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘আমি আরডিপিতে প্রতি সপ্তাহে ৭শ’ টাকা করে জমা রেখেছিলাম। এতে আমার ২৬ হাজার টাকা জমা হয়েছিলো। আমার কাছে টাকা জমার রশিদ ও পাশ বই আছে। কিন্তু সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠানটি তালা মারা। ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করছে না। এ প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে আমানতের বিপরীতে লোভনীয় সুদ দেয়ার কথা বলে আমানত সংগ্রহ করে। আর ধর্মপ্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করতে প্রচার করেন ‘ইসলামী শরিয়াহ্ মোতাবেক পরিচালিত’ হচ্ছে। তবে এ সব যে তাদের ব্যবসায়িক প্রতারণার কৌশল ছিল তা এখন বুঝতে পারছেন শহরের সহস্রাধিক গ্রাহক। এদিকে পুলিশ আরডিপির এক নিরাপত্তা কর্মী ও এক স্থানীয় এক প্রতিনিধিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল হক জানান, কোন গ্রাহকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে। তবে কিভাবে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এভাবে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করলো এবং এতো দিন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলো তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শহরের সুধীজনরা। তারা বলছেন, এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও আগেই সরকারের কঠোর নজরদারিতে নেয়ার দরকার ছিল। পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জী বলেন, ‘জামায়াতের আর্শীবাদপুষ্ট এ প্রতিষ্ঠানটি এতদিন কিভাবে জনগণের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করলো এবং কিভাবে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলো এসব বিষয়ে সরকারের নজদারী ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।’ এদিকে ভবনের মালিক ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী হাফিজুর রহমান শবির সাংবাদিকদের জানান, আরডিপির সঙ্গে তাদের ভবনের তিন বছরের চুক্তি হয়েছিলো। সে মোতাবেক এ বছরের জুন মাসে তিন বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তারা ভবনের একটি ফ্লোর ভাড়া দিয়েছে এবং আরডিপি ভাড়া নিয়েছে। এর বাইরে তারা কিছুই জানেন না। সরকারী হস্তক্ষেপে আরডিপিতে জমানো অর্থ ফেরত চাচ্ছেন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আরডিপি কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কাউকেই পাওয়া যায়নি। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের সাধারণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, এ নামের কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- সম্পর্কে জেলা প্রশাসন জ্ঞাত নয়।
×