ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিশোরগঞ্জে বাঁধ ভেঙ্গে ॥ বোরো ধান পানির নিচে

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৫ মে ২০১৫

কিশোরগঞ্জে বাঁধ ভেঙ্গে ॥ বোরো ধান পানির নিচে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও ধানের বাজার নিয়ে তারা শঙ্কিত। বর্তমানে ধানের বাজার দর চলছে মণপ্রতি সাড়ে চার শ’ থেকে পাঁচ শ’ টাকা। এ দামে ধান বিক্রি করে কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠছে না। অপরদিকে কিশোরগঞ্জে ১০ হাজার একর কাঁচা-পাকা ধান বাঁধ ভেঙ্গে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে হাহাকার উঠেছে এলাকায়। স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর- কিশোরগঞ্জ ॥ কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত মিঠামইন ও ইটনা উপজেলায় ৪টি বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে অন্তত ১০ হাজার একর কাঁচা ও আধাপাকা বোরো জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে শত শত কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বছরে একটিমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ওইসব এলাকার কৃষকদের মাঝে এখন চলছে আহাজারি। কৃষি ঋণ নিয়ে ও ধার-দেনা করে এই বোরো আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কিভাবে ঋণ শোধ করবেন, আর কিভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে সারা বছর চলবেন সে চিন্তায় কৃষকরা এখন অস্থির সময় পার করছেন। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতিপুত্র ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মিঠামইনের কাটখাল ইনিয়নের সানকির, চরকাটখাল, কদমচাল ও হবিগঞ্জের মাতাবপুরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এই ৪টি বাঁধ ভেঙ্গে কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোন কোন জমি ১০ থেকে ১৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। বাঁধগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিঠামইনের কাটখাল, ঢাকী, চারিগ্রাম ও ইটনার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার একর উঠতি বোরো জমি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, পনির নিচ থেকে সামান্য কিছু ধান কাটতে পারলেও বেশিরভাগ কৃষক সে সুযোগ পাননি। কাটখাল ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কৃষক হযরত আলী জানান, তিনি এ বছর ধার-দেনা করে ৫ একর জমি আবাদ করেছিলেন। তার ৩ একর জমিই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঋণের জন্য চাপ আসছে। এ ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন আর পরিবারের খরচই কিভাবে যোগাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। একই কথা জানালেন, ঢাকী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া. গনি মিয়াসহ অনেকেই। কাটখাল ইউপি চেয়ারম্যান রইছ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, হাওরের কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল বিনষ্ট হওয়ায় তারা চরম অভাবের সম্মুখীন হবে। তিনি সানকির বাঁধ স্থায়ীভাবে নির্মাণের জোর দাবি জানান। ঈশ্বরদী ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগ,শ্রমিক সঙ্কট ও দরপতনে মাঠের পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঈশ্বরদীর কৃষকরা। মাঠে মাঠে ইতোমধ্যেই ধান পেকে গেছে। প্রচ- ঝড় ও ঝড়ো বাতাসে পাকা ধান মাটির সঙ্গে নুইয়ে পড়েছে। এদিকে ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। সম্প্রতি প্রায় রাতেই হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হবার দরুন অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়েছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ বছরপ্রতি বিঘা জমিতে ধানের গড় ফলনও বেশি পাওয়া যাবে। হাট-বাজারে ধানের ক্রেতা কমে গেছে। ঈশ্বরদীসহ আশপাশের চাতাল মালিকরা জানান, এলসির মাধ্যমে চাল আমদানি হওয়ায়, গত বছরের ধান মজুদ রয়েছে এবং দামও কমে গেছে। তারা অন্য বছরের মতো ধান কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বর্তমানে হাট-বাজারে ধান ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে প্রতিমণ সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। গত বছর এই দিনে ধান ক্রয় বিক্রয় হয়েছে ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা। প্রতিমণে কৃষক লোকসান হচ্ছে প্রায় ২শ’ টাকা করে। অথচ এ বছর শ্রমিক মজুরি, সার-কীটনাশকসহ আনুষঙ্গিক খরচ গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে বলে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়। এ ব্যাপারে ধান ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ধান হাটে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ধানের ব্যাপারীর সংখ্যা খুব কম। ফটিকছড়ি ॥ এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। স্বস্তিকর হলেও আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে কৃষকদের। এত শ্রম ও সাধনার পরও ধানের সঠিক ও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে, কৃষকেরা আপাতত ধানের দাম নিয়ে ভাবছেন না, আগে ধান ঘরে তুলতে চায় তাঁরা। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এবার বোরো চাষের আওতায় আনা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলেও কৃষকরা তাঁদের মেধা-শ্রম আর ঘামের বিনিময়ে বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের রেকর্ড করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখন কৃষকরা ব্যস্ত ধান কাটা নিয়ে। অভাব-অনটনের জন্য বছরজুড়ে বেঁচে থাকা কৃষাণীর মুখেও এখন স্বস্তির হাসি। কৃষক রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছায়াহীন জমিতে ধান কাটছেন আর কৃষাণী ছাতা মাথায় মুছকি হেসে স্বামীর জন্য ডাল-ভাত নিয়ে যাচ্ছেন। ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠি জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষাবাদের ক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশ না থাকায় ধানের আবাদ ভাল হয়েছে। তবে দাম কম থাকায় কৃষকরা হতাশ হয়েছে। কৃষকদের দাবি বাজারে মণপ্রতি (৪০ কেজি) সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা হারে ধান কেনাবেচা চলছে। গ্রাম অঞ্চল থেকে পূর্বে ব্যাপারীরা ধান কিনতে আসতেন কিন্তু এবার তাদেরও কম দেখা যাচ্ছে। এই দামে কৃষকের চাষাবাদের উৎপাদন খরচ সামাল দিতে পারছে না। সারের দাম কম থাকলেও কীটনাশক ও বীজ রোপণসহ ধান কাটার জন্য কামলা সঙ্কট চলছে। এ বছর নুতন জাত হিসেবে বিনা ১০ ও ৮ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় ৮৬৪৩ হেক্টরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৭০০ হেক্টরে বোরো চাষ হয়েছে। জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার সিংহভাগ জমিতেই বোরো আবাদ হয়েছে।
×