ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৫ মে ২০১৫

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ

সীমিত ওভার, টি২০-এর পর এবার টেস্টের মাঠেও অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে সাফল্যের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পেল সাফল্যের পর সাফল্য। প্রথম ওয়ানডে জয়, প্রথম সিরিজ জয়, প্রথম হোয়াইটওয়াশ, প্রথম টি২০ জয়। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো টেস্টে প্রথম ড্র। ম্যাচ জয়ে নয়, ড্র নিয়েই খুশি। ১৯৫২ সাল থেকে টেস্ট খেলুড়ে দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে এই ড্র যেন জয়ের চেয়েও অনেক বড়। তবে মানসিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এই ম্যাচে বিজয়ী বাংলাদেশ। ম্যাচের স্কোরকার্ডে ড্র লেখা থাকবে ঠিকই। কিন্তু টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দলের সঙ্গে এই লড়াইটা যেন জয়েরই সমান। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর ক্রিকেটের পরাশক্তি পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল টি-২০তে ঘুরে দাঁড়ানো। সেখানেও ব্যর্থ হলো তারা। তারপর পাঁচ দিনের ম্যাচ। এখানে অতীত জয়ের পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশের। তাই সাদা পোশাকে মেজাজী লড়াইয়ে পাকিস্তানের ভাবভঙ্গিই ছিল আলাদা। খুলনা টেস্টের প্রথম তিন দিন ছিল তারই আভাস। কিন্তু চতুর্থ আর পঞ্চম দিনে এসে বাংলাদেশ প্রমাণ করল, সেই দিন আর নেই। এই বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। নিশ্চিত পরাজয়ের মুখেও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি-সামর্থ্য সবই রয়েছে বাংলাদেশের। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সঙ্গে এ পর্যন্ত নয়টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আটটিতেই হেরেছে। সেই রেকর্ড এখন পুরনো। খুলনা টেস্টে ড্রয়ের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান জেনে গেছে বাংলাদেশের টেস্ট দল আর সেই টেস্ট দল নেই। শক্তিমত্তার বিচারে টেস্টেও বাংলাদেশ এখন আস্থার প্রতীক। ড্রয়ের কারণে এই টেস্ট ম্যাচটি হয়ত বেশিদিন আলোচনায় থাকবে না। ম্যাচটি আলোচনায় রাখবে তামিম-ইমরুলের অনন্য রেকর্ড। এই বিস্ময়কর জুটি নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ৫৫ বছরের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন এই দুই ওপেনার। ৩১২ রানের অনন্য এক জুটি গড়ে নিজেদের নিয়ে গেলেন রেকর্ড বইয়ের তালিকায়। ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ইনিংসে ইংলিশ ওপেনার কলিন কাউড্রে ও জিওফ পোলার ২৯০ রান করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন। তামিম তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডবল সেঞ্চুরি (২০৬)। ইমরুল ১৫০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে তিনিও এই ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে আরেক বীর। শুধু টি২০ বা সীমিত ওভারের ম্যাচে নয়, দলীয় প্রচেষ্টায় ক্রিকেটের যে কোন ফরমেটে বিশ্বের যে কোন দলকে হারানোর সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছেÑ যা ক্রিকেট বিশ্বও মানতে বাধ্য। খুলনা টেস্টে বাংলাদেশ যা দেখিয়েছে তা সেই আস্থারই প্রতিফলন। ক্রিকেটে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার কথা যাঁরা বলেন, তাঁদের কথা যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ রেখে চলছেন আমাদের খেলোয়াড়রা। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা যে অনেক বেশি দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠছে তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। এখনকার ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এবং ট্যালেন্টদের অবদান নিয়ে রীতিমতো গর্ববোধ করা যায়। একথা সত্য যে, ক্রিকেট অত্যন্ত ব্যয়বহুল খেলা। এই খেলাটা চালিয়ে নেয়ার জন্য শারীরিক গঠন এবং শক্তির প্রয়োজন। আমাদের খেলোয়াড়রা এসব দিক দিয়ে অনেক দেশের চেয়ে এখনও পিছিয়ে। এতসব প্রতিবন্ধকতার পরও সাম্প্রতিক সময়ে তামিম, ইমরুল, সাকিব, মুশফিক, সৌম্য সরকারের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড় বেরিয়ে এসেছে। তাদের একাগ্রতা, নিষ্ঠা, অনুশীলন আর বুদ্ধিমত্তায় এদেশে ক্রিকেট এখন অন্য উচ্চতায়। তাই আরও সাকিব, তামিম, ইমরুল আমাদের দরকার। নতুন সাকিবদের তৈরি করতে হবে। এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। দরকার বিকেএসপির মতো আরও ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। প্রয়োজন জেলায় জেলায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা। তাতে সাকিবদের মতো প্রতিভা বের করে আনা সম্ভব। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হলে এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়া দরকার। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে এর বিকল্প নেই।
×