ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার পরও ভোট পায় বিএনপি?

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ মে ২০১৫

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার পরও ভোট পায় বিএনপি?

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাতে যেমন ব্যক্তিক ও রাষ্ট্রিক স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত, তেমনি মানুষের মৌলিক মানবাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকারও সুরক্ষিত আওয়ামী লীগের হাতেই। বিগত ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচনে তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। তিন সিটিতেই জিতল দলটির সমর্থিত প্রার্থীগণÑ ঢাকার দক্ষিণে জিতেছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সাঈদ হোসেন খোকন; ঢাকার উত্তরে একেবারে মধ্যবিত্ত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা চৌকস আনিসুল হক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও মধ্যবিত্ত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা সাহসী রাজনীতিক আ জ ম নাছির উদ্দিন। পক্ষান্তরে পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে হেরেছেন সাঈদ খোকনের সঙ্গে বিএনপির মির্জা আব্বাস (অঢেল সম্পদের মালিক); আনিসুল হকের সঙ্গে একই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা এবং জামায়াতী পরিবারের জামাই (যুদ্ধাপরাধী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার মীর কাশেম আলীর ভাই রাজাকার মীর ইস্কান্দর আলীর মেয়ের জামাই তাবিথ আউয়াল (অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে) এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত বিগত ছয় বছরের মেয়র মনজুর আলম। এই ভদ্রলোক চট্টগ্রামের শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনীতিক ও সাবেক সফল মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন। ভোটের হিসাবে দেখা যায়, ঢাকার উত্তরে আনিসুল হক পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট, অর্থাৎ ব্যবধান ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭; ঢাকার দক্ষিণে সাঈদ খোকন পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৬ হাজার ২৯৬ এবং নিকটতম মির্জা আব্বাস ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ অর্থাৎ ব্যবধান ২ লাখ ৪১ হাজার ৫ ভোট এবং চট্টগ্রামে আ জ ম নাছির উদ্দিন পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ এবং তাঁর নিকটতম মনজুর আলম ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭, অর্থাৎ ব্যবধান ১ লাখ ৭০ হাজার ৫২৪ ভোট। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বাইরেও টিভি টক শোতে বুদ্ধি বিক্রেতা ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী, টিভি টক শোর বুদ্ধি বিক্রেতা জোনায়েদ সাকী, গোলাম মাওলা রনির মতো ৪২ জন মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াফত হয়েছে। এমন ব্যক্তিও মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন যাঁদের কেউ ৫০০, কেউ ৬০০, কেউ ৮০০ ভোট পেয়েছেন (অবশ্য তাঁদের মস্তিষ্কে দোষ আছে বলে মনে করা হয়)। প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হারের হিসাব হলো, আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা সম্মিলিতভাবে ভোট পেয়েছেন শতকরা ৫৫ ভাগ এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা শতকরা ৩৫ ভাগ। আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী ভোট পেয়েছেন সর্বমোট ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৪ এবং বিএনপি তিন প্রার্থী সর্বমোট ৯ লাখ ২৪ হাজার ২০৮ ভোট। এছাড়া তিন সিটিতে ১৩৪টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদে আওয়ামী সমর্থিত ৯৬টিতে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৮টি, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা ১১৪টিতে এবং বিএনপি সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছেন ১১টি ওয়ার্ডে। এক কথায় বলা যায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থিত প্রার্র্থীদের এ বিজয় নিরঙ্কুশ তো অবশ্যই, বরং বলা যায় বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতিতে এক ইতিবাচক দিকের নির্দেশনা বা আলোর সন্ধান দিয়েছে। যদিও নির্বাচনের দিন দ্বিপ্রহরের দিকে খালেদা জিয়ার নির্দেশে (মওদুদ-শিমুল বিশ্বাসের টেলিটক) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে একটা স্ট্যান্টবাজি করেছিল বিএনপি। অর্থাৎ হেরে তো যাবই, তবে একটা গালি দিয়ে যাই না কেন? কিন্তু সেটি সফল হয়নি। কিছু কেন্দ্রে অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা (তাও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে) ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ভোটার জনগণ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীদের বিপুলভাবে ভোটের ম্যান্ডেট দিয়ে এবং সাম্প্রদায়িক পেট্রোলবোমাবাজ খালেদা জিয়ার প্রার্থীদের বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিজয় ঘোষণা করে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নীতির অনুসরণে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি জয়ী হয়েছে, হেরেছে খালেদার নেতৃত্বাধীন সাম্প্রদায়িক, পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার রাজনীতি। সঙ্গে সঙ্গে হেরেছে এমাজউদ্দীন, শহীদুজ্জামান, সাদেক খানদের রাজাকারপন্থী বুদ্ধি বিক্রির রাজনীতি। তবে একটা বিষয় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে। যেভাবে ঢাকাবাসী খালেদা জিয়াকে রাজপথে প্রতিরোধ করেছে ভোটের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঠিক সেভাবে ঘটেনি। বিএনপি প্রার্থীরা তাদের চিরাচরিত ৩৩+২ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ ৩৩ শতাংশ বিএনপি এবং ২ শতাংশ জামায়াত-হেফাজতের ভোট। এ ভোটও পড়ার কথা ছিল না বিএনপি প্রার্থীদের পক্ষে। ঢাকাবাসী কি এত অল্পদিনেই ভুলে গেলেন? আমি বিশ্বাস করি মানুষ কিছুই ভোলেননি। কিভাবে ভুলবে মানুষ ২০১৩ সালের ৯ মাস আর এ বছরে প্রথম ৯২ দিনের আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী শিশু-নারী, সাধারণ কর্মজীবী-শ্রমজীবী মানুষের কথা? যেমন, বিগত ৯২ দিন খালেদা জিয়ার নাটক, স্বেচ্ছা অবরোধ রচনা করে শিবির-ছাত্রদল ক্যাডারদের হাতে পেট্রোলবোমা তুলে দিয়ে বোমার আগুনে দেড় শতাধিক মানুষের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া, অগ্নিদগ্ধ প্রায় সহস্র মানুষের পঙ্গুত্ববরণ, দেড় সহস্রাধিক যানবাহন পুড়িয়ে ছাই করা, ট্রেনের লাইন কেটে ফেলা, ফিসপ্লেট তুলে ফেলা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেন, বাস, ট্রাক-ভ্যান গাড়ির চালককে লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, এসব কিভাবে ভুলবে মানুষ? ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী আলবদর কাদের মোল্লার ফাঁসি রুখতে এবং ২০১৪ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচন প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের হত্যা, বাড়িঘরে আগুন, মানুষকে গৃহহারা করা, প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা, ৫৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (পোলিং সেন্টার) পুড়িয়ে ছাই করার কথা মানুষ সহজে ভুলে যাবে, এমনটি কি ভাবা যায়? মানুষ কিভাবে ভুলবে যে, তেঁতুল শফী হুজুরের নেতৃত্বে হেফাজতীদের ঢাকায় এনে আগুন দিয়ে ব্যস্ততম ঢাকার বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, পল্টন, বিজয়নগর প্রভৃতি এলাকা কিভাবে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। ফুটপাথের হকারদের দোকানপাট, রাস্তার আইল্যান্ডের গাছ নিধন, এমনকি পবিত্র কোরান-হাদিস (স) পোড়ানো, এ সবই তো ঘটেছে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। ঢাকার মানুষ কিভাবে ভুলবে হাওয়া ভবন-খোয়ার ভবনের কথা, বিদেশে অর্থ পাচারের কথা? জরিমানা দিয়ে খালেদা জিয়া ও সাইফুর রহমানের কালো টাকা সাদা করার কথা? ভুলতে পারে না। পক্ষান্তরে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে আজতক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথা, এসবও মানুষ ভুলতে পারে না। মানুষ ভোলেনি বলেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বা ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের পক্ষে ব্যাপক ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনাও মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন। আজ দেশের জিডিপির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি; বিশাল উন্নয়ন বাজেট, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, জানুয়ারির ১ তারিখেই বিনামূল্যে ৩৪ কোটি পাঠ্যবই বিতরণÑ এ সব কি ভোলা যায়? আজ রাজধানীতে হাতিরঝিলের মতো বিনোদন কেন্দ্র কিংবা ফ্লাইওভারে ফ্লাইওভারে ঢাকার চালচিত্রই পাল্টে গেছে। একদিকে যানজটের নিরসনের পাশাপাশি নান্দনিক সৌন্দর্যের নগরীতে পরিণত হচ্ছে, এখন কোন বিদেশী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে মূল শহরের পথে যাত্রা করলে ওপরে-পাশে হাত-পা ছড়িয়ে ফ্লাইওভারগুলো কোনটা মিরপুরের দিকে, কোনটা কুড়িলের দিকে চলে গেছে, তাতে কি এক আধুনিক নগরীর ঘোষণা দিচ্ছে না? ঢাকার প্রথম সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সফল নগর পিতা মোহাম্মদ হানিফের নামে নির্মিত বক্শিবাজার-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া ফ্লাইওভার হওয়ায় সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর ট্রাফিক জ্যাম এখন আর মানুষের জন্য শনিরদশা নয়। অথচ একদিন আমি নিজেই সায়েদাবাদ থেকে শনিরআখড়া হয়ে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত গিয়েছি চার ঘণ্টায়। এখন বক্শিবাজার কিংবা হাটখোলা দিয়ে উঠে শনিরআখড়া ক্রস করি কয়েক মিনিটে। তাই এবারের ঢাকা দক্ষিণের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকন। বর্তমানে নির্মাণাধীন শান্তিনগর-মালিবাগ-রেলগেট-রামপুরা ফ্লাইওভার ও রমনা-মগবাজার-বাংলামোটর বা রমনা-মগবাজার-মৌচাক বা রমনা-মগবাজার-তেজগাঁও-সাত রাস্তার মোড় হয়ে নাবিস্কো, এসব ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম অনেকাংশে কমে যাবে। এর পাশাপাশি জয়দেবপুর-টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ স্কাই ট্রেন চালু করার কাজও শুরু করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন বা সিক্স লেনের কাজও চলছে, চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ, কর্ণফুলী চ্যানেলের কাজ। প্রিয় পাঠক একবার চোখ বন্ধ করে ঢাকার এ চিত্রটি আপনার মনোজগতে স্থাপন করে ভাবুন তো, কেমন মনে হবে? সুন্দর নয় কি? নিহায়েত অন্ধ ছাড়া আর সবাই সুন্দরই দেখবেন। একইভাবে চট্টগ্রামে বিগত ৫ বছর বিএনপি সমর্থিত মেয়র ক্ষমতায় থাকলেও চট্টগ্রামবাসী ফিলই করেননি তাদের একজন নগর পিতা রয়েছেন। বরং চট্টগ্রাম মহানগরেও যা কিছু হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগেই। হাতিরঝিল প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর নগরবাসী হাজার হাজার মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত হাতিরঝিলের নির্মল বাতাস ভোগ করছে। এ ব্যাপারে সহকর্মী বন্ধু কলামিস্ট স্বদেশ রায় একটি সুন্দর ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, ওই সময় খালেদা জিয়া তাঁর গুলশান বাসভবন থেকে এক রাতে কিছু দলীয় নেতা ও ব্যক্তিগত স্টাফ নিয়ে হাতিরঝিল ঘুরে ঘুরে এর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ওরা কত ভাল কাজ করে আর আমাদের লোকজন নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্বদেশ রায় মন্তব্য করেন, খালেদা জিয়া যদি বিএনপি প্রধান না হতেন তাহলে নিজের বিবেকের দায়ে তিনিও কি ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিতেন না? আর সেদিনই কি খালেদা জিয়া বোঝেননি ঢাকা সিটি নির্বাচনে আর যাই-ই হোক আওয়ামী লীগের সঙ্গে জেতা যাবে না? কিন্তু তারপরও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের এত ভোট পাবার কথা ছিল না। তবু পেয়েছে। কেন পেয়েছে তার হিসাব করলে দেখা যাবে আওয়ামী লীগ তার নজিরবিহীন উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে মহানগরবাসীর মনোজগতে প্রবেশ করতে পেরেছে। খালেদা জিয়ার গণহত্যা, জ্বালাও-পোড়াও মানুষ গ্রহণ করেনি। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, যত অপপ্রচারই করা হোক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা যতখানি গণতান্ত্রিক, বিএনপি তার এক শতাংশও গণতান্ত্রিক নয়। খালেদা জিয়া বা তাঁর দলের পাতি নেতা একটি মিথ্যা বললেও একজন কর্মীও পাওয়া যাবে না যে অবিশ্বাস করছে কিংবা মনে অবিশ্বাস থাকলেও প্রকাশ্যে তা বলবে না, স্বীকারও করবে না। বরং সেই কর্মীটিও ওই মিথ্যাটিকে আর দশজনের কানে কানে হুইসপার ক্যাম্পেইন করবে। একজন বিএনপি কর্মীও পাওয়া যাবে না, যে বলবে খালেদা ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বা তাঁর দুই পুত্র দুর্নীতিপরায়ণ ও দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। পক্ষান্তরে দশজন আওয়ামী লীগ কর্মী এক জায়গায় বসলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দলীয় সরকার বা কোন নেতার ব্যর্থতা, অনিয়মের ওপর আলোচনা করবে। বিএনপি যেভাবে একটি মিথ্যারও হুইসপার ক্যাম্পেইন করতে পারে, আওয়ামী লীগ তার এক শতাংশও পারে না। হুইসপার ক্যাম্পেইন জানেই না, যা করে ঢাকঢোল পিটিয়ে করে। আজকের কলামটি শেষ করতে চাই মিডিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে দু’একটি কথা বলে। মিডিয়া ২/১টি ছাড়া, এবারও অতীতের মতো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করেছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেশের প্রভাবশালী পত্রিকা প্রথম আলোর শিরোনাম ছিল ‘জিতল আওয়ামী লীগ, হারল গণতন্ত্র।’ প্রধান ইংরেজী ডেইলি স্টার শিরোনাম করেছে ‘চড়ষষং নঁননষব নঁৎংঃং’ এসব বলে তারা যা বোঝাতে চেয়েছে তা হলো নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়নি এবং মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারটি বুদ্বুদের মতো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেয়া হয়েছে। বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি, ঢুকলেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ যদি সত্য হবে তবে এসব মিডিয়া কয়টি তথ্য তুলে ধরতে পেরেছে? পারেনি। আসলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ২ হাজার ৭০০ ভোটকেন্দ্রে ১০ হাজার পোলিং এজেন্ট দেয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির আছে বলে মনে হয় না। যে ক’জন আছে বা পোলিং এজেন্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তারাও বেশিরভাগই শিবিরের সঙ্গে পেট্রোলবোমা মারার দায়ে অভিযুক্ত বা প্রকাশ্যে এলে অভিযুক্ত হতে পারে। তাই তারা কেন্দ্রে যায়নি। বস্তুত জিতেছে গণতন্ত্র, হেরেছে পেট্রোলবোমার রাজনীতি। ‘জিতল আওয়ামী লীগ, হারল গণতন্ত্র’- এ কথা যে ৫৫ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে তাদের প্রতি অবমাননা নয় কি?
×