ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন তাজুল

আদালত অবমাননায় শিবির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে রুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৫ মে ২০১৫

আদালত অবমাননায় শিবির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদালত অবমাননার অভিযোগে ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আদালত অবমাননার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ মে’র মধ্যে শিবিরের দুই নেতাকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে একই অভিযোগে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় এবং ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় জামায়াত নেতাসহ আইনজীবী তাজুল ইসলামকে ক্ষমা করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ক্ষমাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতারা হচ্ছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার মোঃ ফোরকান মল্লিকের পক্ষে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষী মৃদুল চন্দ্র সেন ওরফে মধু সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আজ তাকে জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। আদালত অমাননার অভিযোগ থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ জমায়াতের আরও তিন নেতাকে। অন্যদিকে দুই শিবির নেতার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয়নি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। ২৪ মে’র মধ্যে তাদের জবাব দিতে হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও জামায়াত-শিবির নেতাদের পক্ষে এ্যাডভোকেট শিশির মোঃ মনির ও তারিকুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি দুদিনের হরতাল ডাকে জামায়াত। বিবৃতিতে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা বিরূপ কথা বলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা। অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে তা এক ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলেও মন্তব্য করেন তাজুল। আজহারের এই আইনজীবী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে আজহারকে নামতে যে তিনজন দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ দেখেছেন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ ৩ কিলোমিটার ও আবার কেউ দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে। এসব সাক্ষ্যের মাধ্যমে মৃত্যুদ- ঘোষণা করা ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলে আমরা মনে করি। এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক কাগজপত্র যদি ডাস্টবিনে ফেলা হতো তাতে সুবিচার হতো। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা ও বিরূপ মন্তব্য করায় গত ১২ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কারণ দর্শাও (শোকজ) নোটিস দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। নোটিসে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চেয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ২৮ জানুয়ারি তাদের সশরীরে হাজির হয়ে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ২৮ জানুয়ারি এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের পক্ষে সুপ্রীমকোর্র্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির নেতাদের আইনজীবী ব্যাখ্যা দিতে সময়ের আবেদন জানান। গত ১ জানুয়ারি সংগঠন হিসেবে জামায়াত এবং ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ৫ জানুয়ারি এ অভিযোগের শুনানি নিয়ে ১২ জানুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করেছিল ট্রাইব্যুনাল। ১২ জানুয়ারির আদেশে সংগঠন হিসেবে জামায়াত বাদে বাকি ছয়জনকে শোকজ করে ট্রাইব্যুনাল। সাফাই সাক্ষী ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের পক্ষে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষী মৃদুল চন্দ্র সেন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ তিনি জবানবন্দী প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল উপস্থিত ছিলেন। সাফাই সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মৃদুল চন্দ্র সেন ওরফে মধু। পিতা মৃত- নিহার রঞ্জন সেন। আমার বর্তমান বয়স ৬০ বছর। ঠিকানা গ্রাম- সুবিদখালী বাজার, থানা- মির্জাগঞ্জ, জেলা- পটুয়াখালী। আমি পেশায় আইনজীবী। তিনি বলেন, আমার মামাকে যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে তখন আমি ঐ বাসায় উপস্থিত ছিলাম না। আত্মগোপন অবস্থায় জানতে পারি আমার মামা ও মামীকে পাক সেনারা হত্যা করেছে। দেশ স্বাধীনের পর মামা মামীর লাশ উত্তোলন করে হিন্দু মতে দাহ করা হয়।
×