ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোলোৎসব বার্সার, রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে জয় রিয়ালের

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৪ মে ২০১৫

গোলোৎসব বার্সার, রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে জয় রিয়ালের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বার্সিলোনার তিনত্রয়ীর যুগলবন্দী সফল হলে পরিণতি কি হয় তা আরেকবার দেখেছে ফুটবলবিশ্ব। শনিবার স্প্যানিশ লা লিগায় তিন সুপাস্টারের বিস্ফোরক নৈপুণ্যে স্বাগতিক কর্ডোবাকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে অতিথি বার্সা। চলমান মৌসুমে কাতালানদের এটি সবচেয়ে বড় জয়। বার্সিলোনার হয়ে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করেন লুইস সুয়ারেজ। বার্সার জার্সিতে এটি প্রথম হ্যাটট্রিক উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের। জোড়া গোল করেন দলের সেরা তারকা লিওনেল মেসি। একটি করে গোল করেন নেইমার, ইভান রাকিটিচ ও জেরার্ড পিকে। বার্সার গোলোৎসবের পর সেভিয়ার মাঠে ঘাম ঝরানো জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। বর্তমান ফিফা সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে ভর করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা ৩-২ গোলে হারায় স্বাগতিক সেভিয়াকে। এই জয়ে শিরোপার সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। ৩৫ ম্যাচ শেষে ৮৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে বার্সিলোনা। সমান ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রিয়াল। দুটি দলেরই আর বাকি তিন ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোর ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে কোন দলের শোকেসে শোভা পাবে ২০১৪-১৫ মৌসুমের ট্রফি। সেভিয়ার মাঠে ম্যাচের ৩৬ মিনিটে রিয়ালের হয়ে প্রথম গোল করেন রোনাল্ডো। মিডফিল্ডার ইস্কোর ক্রসে হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন পর্তুগীজ ফরোয়ার্ড। এই গোল করে এগিয়ে যাওয়া মেসিকে ধরে ফেলেন সি আর সেভেন। পরের মিনিটে আরও একটি গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোনাল্ডো। এবার জ্যাভিয়ের হার্নান্দেজের হেড দিয়ে বাড়ানো বলে গোল করে মেসিকে (৪০ গোল) পেছনে ফেলে লীগের গোলের তালিকায় ফের এককভাবে শীর্ষে ওঠেন পর্তুগীজ তারকা (৪১ গোল)। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে কার্লোস বাক্কা পেনাল্টি থেকে গোল করে সেভিয়াকে ম্যাচে ফেরান। বিরতির পর ৬৮ মিনিটে গ্যারেথ বেলের বাড়ানো বল থেকে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রোনাল্ডো। রিয়ালের জার্সিতে এটি বর্তমান ফিফা সেরা তারকার ২৯ নম্বর হ্যাটট্রিক। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে সেভিয়ার ইবোরা গোল করলে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরে। কিন্তু বাদ বাকি সময় স্বাগতিকরা আর গোলের দেখা না পেলে স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল। ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। বাকি তিন ম্যাচ জিততে হবে। বার্সার ভূয়শী প্রশংসা করে ইতালিয়ান এই কোচ বলেন, বার্সিলোনা অসাধারণ দল। কর্ডোবার বিরুদ্ধে তাদের সবকিছুই নিখুঁত ছিল। তাদের এত গোল দেখে আমি বিস্মিত হইনি। লীগের মাঝপথ পেরোনোর পর প্রতিপক্ষের জালে নিয়মিতই গোল বন্যা করছে বার্সা। পরশু আরেকবার এ দৃশ্য দেখেছে ফুটবলবিশ্ব। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও প্রথম গোলের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় অতিথিদের। প্রথম ৪০ মিনিটে বেশ কয়েকটি সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ার পর ৪২ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় বার্সা। মেসির সাহায্যে ইভান রাকিটিচ গোল করেন। তিন মিনিট পর দ্বিতীয় গোল পায় সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। বাঁপ্রান্ত থেকে আস্ত্রে ইনিয়েস্তার বাড়ানো বলে নিশানা খুঁজে পান লুইস সুয়ারেজ। বিরতির পর দ্বিতীয় মিনিটেই লিওনেল মেসির গোলে ব্যবধান বাড়ায় বার্সিলোনা। ডান দিক থেকে ডিফেন্ডার আলভেসের বাড়ানো বলে হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন সাবেক টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা তারকা। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে হেডে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চার নম্বর গোল করেন সুয়ারেজ। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে রাকিটিচের কর্নার কিক থেকে হেড করে দলের পঞ্চম গোল করেন পিকে। ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটে আরও তিন গোল করে বার্সা। ৮০ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান ৬-০ করেন মেসি। ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় অতিথিরা। যে কারণে মেসির আরও একটি হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগে, কিন্তু শট নিতে আসেন নেইমার। লা লিগায় নিজের ২১ নম্বর গোল করে দলকে সাত গোলে এগিয়ে নেন। ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সুয়ারেজ। বার্সার হয়ে সর্বশেষ ছয় ম্যাচে সুয়ারেজের এটা অষ্টম গোল। আর এবারের লীগে সাবেক লিভারপুল তারকার এটা ষষ্ঠদশ গোল। ম্যাচে মেসি পেনাল্টি শট না নেয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। তবে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক এর মধ্য দিয়ে দারুণ উদারতা দেখিয়েছেন বলে মনে করেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। সুয়ারেজ অবশ্য বিষয়টি মেসির স্বার্থহীন ভাবনা হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, এই দারুণ ঘটনায় বোঝা যায় সে (মেসি) দল আর সতীর্থদের তার নিজের চেয়ে আগে রাখে। সুয়ারেজ আরও বলেন, আমি গোলগুলোর জন্য খুশি। কিন্তু বিশেষ করে দলের জন্য যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা শীর্ষে আছি। সাবেক লিভারপুল তারকা বলেন, কর্ডোবাতে গোল করা কঠিন। বিশেষ করে শুরুর দিকে। মূল বিষয় ছিল, ধৈর্য ধরে রাখা। কারণ, জানতাম গোল শেষ পর্যন্ত আমরা পাবই। মেসি ও নেইমারদের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে আমি মানিয়ে নিতে কিছু সময় নিয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম, গোল আসবেই।
×